সুন্দরবনে আগুন, পুড়ল ১০ একর

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২১, ০৭:০৫ পিএম

থেমে থেমে আগুন জ্বলে উঠছে বিভিন্ন জায়গা থেকে

থেমে থেমে আগুন জ্বলে উঠছে বিভিন্ন জায়গা থেকে

সুন্দরবন পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকার আগুন এখনো সম্পূর্ণ নেভেনি । সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে আগুন। থেমে থেমে জ্বলে উঠছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। ধোয়াও বের হচ্ছে পৃথক পৃথক স্থান থেকে। কখন সম্পূর্ণ রূপে এই আগুন নেভাতে পারবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। তবে কঠোর নজদারিতে রয়েছে আগুনের স্থান। 

বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকেল ৫টায় আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিতদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। এর আগে বুধবার (৫ মে) সকালে দাসের ভারানি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মাত্র দুই দিন আগে সোমবার (৩ মে) দুপুরে ওই এলাকার উত্তর পাশে আগুন লেগেছিল। তখন দুই দিনের চেষ্টায় মঙ্গলবার বিকেলে আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও পরের দিন (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় আবারো আগুন লাগায় হতবাক হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই বারের এই অগ্নিকাণ্ডে সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকার অন্তত ১০ একর বন ভূমি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সাথে আগুন নেভাতে বনের মধ্যে যাওয়া আফজাল হাওলাদার, খলিল মাঝি, নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, সোমবার  থেকে আজ পর্যন্ত চারদিন আমরা বনে এসেছি। বনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের সাথে আগুন নেভাতে কাজ করেছি। দুই বারের আগে বনের অনেক জায়গা পুরেছে। চোখের দেখায় মনে হয় ১০ একরের বেশি বনভূমি পুড়েছে সর্বগ্রাসি এই আগুনে। এখনো আগুনে পুড়ছে আমাদের বন। কখন নিভবে জানি না। তবে আল্লাহ যদি রহমতের বৃষ্টি দেয় তাহলে সহজে আগুন নিভে যেত।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারি পরিচালক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, বুধবার (৫ মে) সকালে সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুনের খবর পেয়ে আমাদের তিনটি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করেছি। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত আমরা আগুন নেভানোর জন্য পানি দিয়েছি। কিন্তু সুন্দরবনে শুকনো পাতার পুরু স্তর ও দুর্গম হওয়ায় আগুন নেভাতে আমাদের খুব বেগ পেতে হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের স্থান থেকে পানির উৎস্যও অনেক দূরে। এখনো নিভে নিভে আগুন জ্বলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাঝে মাঝে আগুন জ্বলে উঠছে। আজকের মত আমরা অভিযান সমাপ্ত করেছি। যদি রাতের মধ্যে আগুন না নেভে তাহলে সকালে আবারো আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার কথা জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, যে স্থানে আগুন লেগেছে তার পাশেই ছোট গর্ত করে পলিথিন দিয়ে আমরা পানির একটি রিজার্ভার তৈরি করেছি। যদি কোথাও থেকে ছোট খাট আগুন ধরে বা ধোয়া দেখা যায় তাহলে বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে এই পানি দিতে পারবেন। তাহলে ছোট আগুন থেকে বড় আগুন সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে না।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদিন বলেন, চার দিনের মধ্যে সুন্দরবনের দুইবারের আগুন নেভাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বন বিভাগের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে শতাধিক এলাকাবাসী, সিপিজি সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি টিম আগুন নেভানোর কাজ করছে। তবে মূল কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। বিকেলে ৫টা পর্যন্ত বনের মধ্যে আর দৃশ্যমান কোন আগুন ছিলো না। তাই ফায়ার সার্ভিস আজকের মত পানি দেয়া বন্ধ করেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় গাছের নিচ ও পাতার স্তূপ থেকে ধোয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে। বন বিভাগের কর্মীরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। সকাল নাগাদ যদি আবারো আগুন দেখা যায়, তাহলে ফায়ার সার্ভিস আবারো আগুন নেভানোর জন্য পানি দিবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ বেলায়েতে হোসেন বলেন,  সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের পরে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে আমরা ক্ষয় ক্ষতি ও পুড়ে যাওয়া বনভূমির পরিমাণ জানাতে পারব। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আগুন লাগার পেছনে যদি কাউকে দায়ী করা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন তিনি।

সোমবার (৩ মে) দুপুর ১২টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের প্রায় ৩০ ঘণ্টার চেষ্টায় মঙ্গলবার (৪ মে) বিকেল ৫টায় আগুন নিভে যায়। পরবর্তীতে বুধবার (৫ মে) সকালে পূর্বের আগুনের দক্ষিণ পাশে আবারো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই নিয়ে গেল ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৬ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh