গোবরে করোনামুক্তি বিশ্বাসীদের সতর্ক করলেন চিকিৎসকরা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১১ মে ২০২১, ০৭:৫৫ পিএম

ভারতে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কোথাও কোথাও শরীরে গোবর মাখার যে চর্চা চলছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন দেশটির চিকিৎসকরা। করোনা প্রতিরোধে এই পদ্ধতির কার্যকারিতার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তো নেই-ই, উল্টো এর মাধ্যমে অন্যান্য রোগ ছড়ানোর ঝুঁকিও আছে, বলছেন তারা।

কভিড মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে এর মধ্যেই সোয়া দুই কোটির বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে; ভাইরাস দেশটির প্রায় আড়াই লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন; আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি হতে পারে বলে ধারণা তাদের।

ভারতজুড়ে এখন অসংখ্য নাগরিককে হাসপাতাল শয্যা, অক্সিজেন ও ওষুধ পেতে লড়তে হচ্ছে; চিকিৎসার অভাবে মারা পড়ছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম ভারতের গুজরাট রাজ্যের অনেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে কিংবা কভিড-১৯ থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে এই বিশ্বাসে সপ্তাহে একদিন করে বিভিন্ন ‘গো আশ্রমে’ হাজির হয়ে নিচ্ছেন ‘গোবর চিকিৎসা’।

হিন্দু ধর্মে গরুকে প্রাণ ও পৃথিবীর পবিত্র প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ ধর্মে বিশ্বাসীদেরকে ঘর পরিষ্কার ও প্রার্থনার নানান অনুষঙ্গে গোবর ব্যবহার করতে দেখা গেছে। গোবরের ঔষধি ও জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য আছে বলে ধারণা এই বিশ্বাসীদের।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সহযোগী ব্যবস্থাপক গৌতম মনিলাল বরিষা বলেছেন, আমরা দেখছি, এমনকি চিকিৎসকরাও এখানে আসছেন। তারা বিশ্বাস করেন, এই চিকিৎসা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং তারা কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই রোগীদের কাছে যেতে ও তাদের পরিচর্যা করতে পারবেন।

তার দাবি, শরীরে গোবর মাখার এ চর্চা গত বছর তাকে কভিড-১৯ থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছিল। এরপর থেকেই হিন্দু সন্ন্যাসীদের পরিচালিত শ্রী স্বামীনারায়ন গুরুকুল বিশ্ববিদ্যা প্রতিষ্ঠানে তার নিয়মিত যাতায়াত।

প্রতিষ্ঠানটি রাস্তার যে পাশে অবস্থিত তার উল্টো দিকেই ওষুধনির্মাতা কোম্পানি জাইডাস ক্যাডিলাসের সদরদপ্তর, যারা নিজেরাই কভিড-১৯ এর একটি ভ্যাকসিন আনার কাজ করছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, গোবর ও গরুর প্রস্রাবের মিশ্রণ গায়ে মেখে শুকানোর অপেক্ষায় থাকার সময় এই ‘চিকিৎসা’ গ্রহণকারীরা ‘গো আশ্রমের’ গরুগুলোকে জড়িয়ে ধরেন বা নানান কায়দায় সম্মান জানান ও যোগব্যায়াম করেন। শুকিয়ে যাওয়া মিশ্রণ পরে দুধ বা ঘোল দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়।

ভারত ও বিশ্বজুড়ে থাকা চিকিৎসকরা ধারাবাহিকভাবে কভিড-১৯ এর অপ্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। এই ধরনের চর্চা সুরক্ষার একটি ভুয়া বোধ তৈরি ও স্বাস্থ্য সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে বলে মত তাদের।

‘গোবরে কভিডমুক্তির’ আশায় ‘গো-আশ্রমে’ দলে দলে মানুষের উপস্থিতি উল্টো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়াতেও ভূমিকা রাখতে পারে।

ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. জেএ জয়লাল বলেন, কভিড-১৯ মোকাবেলায় রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে গরুর মলমূত্র কার্যকর, এর সপক্ষে দৃঢ় কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এটা পুরোপুরি বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে চলছে। এগুলোর ঘ্রাণ নেয়া বা ব্যবহারে প্রাণী থেকে মানুষে অন্য রোগ ছড়িয়ে পড়াসহ নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকিও আছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh