নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২১, ০৪:০১ পিএম
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালিক। ফাইল ছবি
দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে ‘নির্যাতন করা হয়নি’ দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালিক। তিনি বলেন, প্রথম আলোর ওই জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক টিকা আমদানি সংক্রান্ত এমন কিছু নথি ‘সরিয়েছিলেন’ যেগুলো প্রকাশ হলে ‘দেশের ক্ষতি’ হতে পারত।
আজ মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে আগারগাঁওয়ে একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
রোজিনাকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে আজ বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) তা বর্জন করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে যেটুকু তিনি শুনেছেন, “তাতে স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের অনুপস্থিতিতে সোমবার দুপুরে তার কক্ষে ঢুকে ঢুকেছিলেন রোজিনা। ওখানে যে ডিউটিতে ছিল, সে দেখল যে একজন ব্যক্তি ওখানে ফাইলের ছবি তুলতেছে, ফাইল কিছু বের করে ব্যাগে ঢুকাইছে, শরীরেও ঢুকাইছে। তখন সে চিল্লাচিল্লি করছে, আমাদের মহিলা অফিসাররা আসেছে, এসে তারা ধরছে যে ‘আপনি কেন এইসব করছেন?’ তখন তার কাছ থেকে ওই কাগজ আর ফাইলগুলো নিছে। এর মধ্যে পুলিশে খবর দিছে, পুলিশ কর্মকর্তারা আসছে, তারা এটা টেকওভার করছে। প্লাস মোবাইলটাও নিছে, মোবাইলেও অনেক ছবি পাইছে।”
তিনি বলেন, ‘এই ফাইলগুলো ছিল টিকা সংক্রান্ত। আমরা যে রাশিয়ার সাথে টিকার চুক্তি করছি, চীনার সাথে টিকার চুক্তি করছি। সেগুলো নন ডিসক্লোজার আইটেম। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বলেছি, আমরা এটা গোপনে রাখব, এগুলো বলব না। তো সেইগুলো যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলাম, এবং আমরা টিকা নাও পেতে পারি। এতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতি হতে পারে। এগুলো সিক্রেট ডকুমেন্ট, বাইরে যাওয়া ঠিক হয় নাই।‘
রোজিনাকে হেনস্তা করার অভিযোগ অস্বীকার করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘যেটা শুনলাম, তাকে অনেকক্ষণ আটকাইয়ে রাখছে। এটা পুলিশ ছিল… সে নিজেই শুয়ে পড়ছে, বসে পড়ছে। তাকে নিতে পারছিল না। শারীরিকভাবে কোনো নির্যাতন বা আঘাত করা হয়নি। এটা সঠিক নয়।’
গতকাল সোমবার (১৭ মে) রাতে রোজিনার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমদ ওসমানী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা হয়েছে দণ্ডবিধির ৩৬৯ ও ৪১১ ধারা এবং অফিসিয়ালস সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে রোজিনাকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
আজ সকালে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার। পরে শুনানি শেষে রিমান্ড নামঞ্জুর করে রোজিনাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। আগামী ২০ মে তার জামিন শুনানি হবে।