নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ০৬:১৩ পিএম
‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন’ শীর্ষক সংলাপ। ছবি: সংগৃহীত
গত অর্থবছরে কৃষি যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ ছিল ২২৫ কোটি টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয় যার পুরোটাই খরচ করেছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতি কেনায় ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার কৃষি যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ বাড়ছে ৪৫৫ কোটি টাকা।
শুক্রবার (২৮ মে) রাজধানীর পল্টনে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে জাতীয় বাজেটকে (২০২১-২২) সামনে রেখে ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল।
বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল টিচার্স সোসাইটি এ সংলাপের আয়োজন করে। বাজেটকে সামনে রেখে কৃষি খাতের গুরুত্ব, সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়।
হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, এখন এক মেশিন ১০০ জন কৃষকের কাজ করে। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে দিন-রাত কাজ করতে বড় মেশিনগুলো দরকার হয়। কৃষক বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কিস্তিতে এসব যন্ত্রপাতি কেনার সুবিধা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের যন্ত্রপাতি কিনতে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে বিশেষ ক্ষেত্রে সুদবিহীন অর্থায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যন্ত্রপাতি কেনায় ডাউন পেমেন্ট কমানোসহ জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা ২০২০ ঢেলে সাজানোর কাজ চালাচ্ছে সরকার।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। তিনি বলেন, আজ যে যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে, সেটি একটি বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে। একজন কৃষক শুধু কৃষকই নন, তিনি কখনও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কখনও উদ্যোক্তা কিংবা কখনও চাকরিজীবী।
গত ১৫ বছরে কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ ১১৮ শতাংশ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি কার্যক্রম হচ্ছে একটি সম্মিলিত প্রয়াস। এখানে কৃষিবিদদের যেমনি অবদান রাখতে হবে, তেমনি শিক্ষক, উদ্ভাবক ও কৃষকদের অবদান রাখতে হবে।
আইসিএবি ও আইসিএমএবির সদস্য মো. আমির হোসেন বলেন, কৃষি যন্ত্র কিনতে বর্তমানে হাওর অঞ্চলে সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। তারপরও বাকি অর্থের যোগান দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কৃষি যন্ত্র কেনায় কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি। এক্ষেত্রে কৃষক এবং কৃষি যন্ত্র নিবন্ধনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তাহলে যন্ত্র বন্ধক রেখে কৃষক সহজেই ঋণ নিতে পারবেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. সদরুল আমিন বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর আসবে না। দেশে বেকারত্ব কমাতে এইচএসসি পাস করে কৃষি শিক্ষা নিয়ে কৃষিতে যোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, এতে প্রতি বছর এক থেকে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেক্ষেত্রে নিজেদের সফলতার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রেও বিপ্লব আসবে বলেও জানান তিনি।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল টিচার্স সোসাইটির মহাসচিব ড. মোজাহেদুল ইসলাম। কৃষিবিদ রেজাউল করিম সিদ্দিক এর সঞ্চালনায় সংলাপে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, প্রাইম ব্যাংকের অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (কৃষি সহায়তা বিভাগ) আসাদ বিন রশিদ প্রমুখ।