বাঁধ নির্মাণের দাবি তোলায় ২ যুবককে পেটালেন চেয়ারম্যান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ০৮:২৫ পিএম

ভাঙন কবলিত ঝাঁপা অংশের উপকূল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ

ভাঙন কবলিত ঝাঁপা অংশের উপকূল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ

সাতক্ষীরা উপকূলের জানমালের সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা সেই যুবক জলবায়ু কর্মীদের মারধর করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পাউবো কর্মকর্তা। 

শুক্রবার (২৮ মে) সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পাতাখালীতে ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধের উপর কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালনের খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে রাতে ফোন করে হুমকি দেয়ার পর শনিবার (২৯ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঝাঁপার ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধের উপর শত শত মানুষের সামনে তাদের মারধর করেন পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান ও পাউবোর সেকশন অফিসার আলমগীর হোসেন। এসময় বাঁধ নিয়ে পরবর্তীতে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করলে ‘ভয়ংকর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলেও তাদের হুমকি দেয়া হয়। 

সূত্র মতে, উপকূলের লাখ লাখ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য কাফনের কাপড় পড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে শুক্রবার সকালে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্থানীয়রা। ম্যানগ্রোভ স্টুডেন্ট সোসাইটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই অবস্থান কর্মসূচিতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনপদের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ সাধারণ মানুষ অংশ নেন। 

এই খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার হয়। 

এরপর শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত ঝাঁপা অংশের উপকূল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করে। এসময় কাজে নিয়োজিত গ্রামবাসীদের উৎসাহিত করতে স্বেচ্ছাসেবী ওই সংগঠনের কয়েকজন কর্মী একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে লাইভ টেলিকাস্ট করে। এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বাঁধের দায়িত্বে থাকা পাউবোর এসও আলমগীর হোসেন দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়ে জলবায়ু কর্মী ও গণমাধ্যম কর্মী শাহিনসহ তার সহকর্মীদের লাইভ টেলিকাস্ট বন্ধ করতে বলেন এবং শাহিনের হাত চেপে ধরেন। এসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহিনকে শত শত গ্রামবাসীর সামনে মারতে শুরু করেন। তাৎক্ষণিক গ্রামবাসীরা এগিয়ে এসে শাহিনসহ তার সহকর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুল্লাহ গাজী ও মুজিবর রহমান জানান, আগের দিন বাঁধের দাবিতে কর্মসূচি পালন করায় চেয়ারম্যান সবার সামনে শাহিনকে মেরেছে। শাহিনকে মেরে পরবর্তীতে উপকূল নিয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করলে দেখে নেয়ারও হুমকি দিয়েছে। 

শাহিন বিল্লাহ


আজগর আলী ও সোহরাব হোসেন নামের স্থানীয় দুই শ্রমিক জানান, সকাল থেকে আমরা প্রায় তিন হাজার গ্রামবাসী বাঁধ মেরামত করছিলাম। শাহিন তা ভিডিও করে প্রচারের সময় চেয়ারম্যান লোকজন নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে তাকে মারধর করে। পরে অন্যরা এগিয়ে এসে তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়। এসময় এসও  সাহেব তাকে জেলে ভরতে চায়। 

এ প্রসঙ্গে পাউবোর সেকশন অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, আমার সাথে শাহিন বিল্লাহর কোনো সমস্যা হয়নি। তবে চেয়ারম্যানের ভাতিজা হওয়ায় তিনি শাহিন বিল্লাহর সাথে কিছুটা খারাপ আচরণ করেছেন। 

মারধরের বিষয়ে জানার জন্য পদ্মপুকুরের ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বলেন, পাউবোর কর্মকর্তা তাদের সাথে কোন রকম খারাপ ব্যবহার করেনি। বরং আরাফাত নামে একটি ছেলে পাউবোর কর্মকর্তার সাথে বাজে কথা বলছিল। 

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, মানববন্ধন করা বা দাবি নিয়ে কর্মসূচি পালন করা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমি মামলা দিতে বলব কেন? কেউ একথা বলে থাকলে মিথ্যা বলেছেন। আমি এখনই বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এদিকে, তরুণ জলবায়ু কর্মীদের মারধরের ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমত নিন্দার ঝড় বইছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh