স্থানীয়ভাবে ছড়াচ্ছে করোনার ভারতীয় ধরন

ঝুঁকিতে ১৫ জেলা, নতুন হটস্পট নাটোর

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ১০:২৮ পিএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২১, ১১:১৫ পিএম

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

বাংলাদেশে কোভিড আক্রান্ত ২৩ জনের নমুনায় এখন পর্যন্ত ভারতে পাওয়া বি.১.৬১৭ ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন দুই জন। স্থানীয়ভাবেও ভ্যারিয়েন্টটি ছড়াতে শুরু করেছে।

এদিকে, সীমান্তের ১৫ জেলার মধ্যে এখন করোনারসর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে চলছে লকডাউন। যদিও সংক্রমণ কিছুটা কমে আসছে। অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাশের জেলা নাটোরকে শনিবার হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 

আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, ‘‘এপর্যন্ত মোট ১৮০ জন করোনা রোগীর জেনম সিকোয়েন্স করা হয়েছে তারমধ্যে ২৩ জনের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের সাতজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাঁচজন যশোর এবং বাকিরা ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের।” 

একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানান, ‘‘করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ২৩ জনের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। আর ১৬ জনই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সফর করেছেন৷ ভারত সফর করেননি সাত জন।’’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, ১৯ তারিখে ওই জেলা থেকে আরো ৪২ জনের জেনোম সিকোয়েন্স পাঠানো হয়৷ তাদের মধ্যে সাতজন ভারতে শনাক্ত ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন।

এই জেলায় গত ২৪ মে রাত ১২ টার পর থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ তারিখ রাত ১২ট পর্যন্ত। সিভিল সার্জন জানান, ‘‘লকডাউন চলাকালে সরকারি হিসেবে দুইজন ভারত থেকে এসেছেন। কিন্তু এখানে চোরাচালানসহ ক্রসবর্ডার কার্যক্রম অনেক বেশি। ফলে অনেকেই এখনও ভারতে আসা যাওয়া করছেন অবৈধভাবে৷ আমরা চেষ্টা চেষ্টা করছি, প্রশাসন চেষ্টা করছে। আর লকডাউন মানুষ মেনে নিয়েছে।’’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২, ২৩ ও ২৪ মে এই তিনদিনে ২১২টি নমুনার বিপরীতে করোনা শনাক্ত হয় ১৩১ জনের। হার শতকরা ৬২ ভাগ। ২৭ মে ৫৬টি নমুনার বিপরীতে ৩৩ জন শনাক্ত হন। হার ৫৯ শতাংশ। ২৮ মে ১১৩টি নমুনার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছেন ২৮ জন। ২৯ মে ২২৯টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখানে শুক্রবার সর্বোচ্চ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার ৪৫৩টি নমুনার র‍্যাপিড টেস্ট করে ৪৫ জন পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে সিভিল সার্জন জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি খুশি যে সংক্রমণের হার কমছে।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৭ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সাত দিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে ১৫টি সীমান্ত জেলায় করোনা পরিস্থিতির অবনতির কথা বলা হয়েছে৷

ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, রাজশাহী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, জামালপুর, রাঙামাটি ও বান্দরবান। সীমান্ত এলাকার বাইরে আছে নাটোর, গাইবান্ধা, খুলনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, কক্সবাজার ও নরসিংদী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা এখন স্পষ্ট যে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যারা কখনোই ভারতে যাননি। এখন যদি এটা সামলানো না যায় তাহলে সারা দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’

তার মতে, করোনা পজিটিভ হলেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন জেনম সিকোয়েন্স যা এখন সীমিত আকারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার হার বেশি হলে পরিস্থিতি আরো ভালো বোঝা যেত।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ আছে৷ বন্ধ সড়ক ও আকাশপথে যোগাযোগও। তবে অধ্যাপক কামরুল ইসলাম মনে করেন, এক্ষেত্রে আরো কঠোর হওয়া দরকার। চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনচললেও সেখান থেকে ১২ জন আক্রান্ত ঝিনাইদহ চলে যান। এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে হবে।

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এখন স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।৷ এটা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে।’’

এদিকে, বাংলাদেশে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় আরো ৩৮ জন মারা গেছেন। শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৩ জন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh