মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২১, ০৮:২২ পিএম

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভনে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।

রবিবার (৬ জুন) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।

তিনি বলেন, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এ মামলায় জান্নাত আরা ঝর্ণা যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা সেই বক্তব্যের সঙ্গে মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা পেয়েছি। যদিও বিষয়টি বিচারাধীন…আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।

নাশকতা ও ধর্ষণের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের দুই থানায় দায়েরকৃত পৃথক ছয় মামলায় রিমান্ড শেষে রবিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। এ সময় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এসপি জানান, বিয়ের সাক্ষী, কাবিননামা, দেনমোহর এমনকি লিখিত কোনো কিছুই মামুনুল হকের কাছে নেই। তার একাধিক বাড়িঘর ও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, যার কোনো আয়ের উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। প্রতি মাসে তিনি এক কোটি টাকা অনুদান পেতেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেই অনুদানের টাকা দিয়েই তিনি বাড়িঘর করেছেন।

গত ৩০ এপ্রিল বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, প্রতারণা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। নিজেকে ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ দাবি করলেও দায়ের করা মামলায় জান্নাত আরা নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী উল্লেখ করেননি।

মামলার লিখিত অভিযোগে ওই নারী জানান, আমার সাবেক স্বামী শহিদুল ইসলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে শান্তিতে কাটছিল। এর মধ্যে আমাদের সংসারে দুই ছেলেসন্তান জন্ম নেয়।

লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুল হকের অবাধ যাতায়াত থাকায় তিনি আমার ওপর কুদৃষ্টি দেন। এতে করে আমাদের সংসারে বিভেদ তৈরি হয়। যার পরিবর্তে তিনি সুকৌশলে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে থাকেন। মামুনুল হকের কুপরামর্শে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

বিবাহ বিচ্ছেদের পর আমি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য প্ররোচনা দিতে থাকেন। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে তার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। কিন্তু ঢাকা আসার পর শুরুতে পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখেন এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এর ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি ২৩/৩ নর্থ সার্কুলার রোড উত্তর ধানমন্ডি তৃতীয় তলা সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকি এবং তার ঠিক করে দেয়া একটি বিউটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি। আমার বাসা ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ তিনি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

গত দুই বছর বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির নামে নিয়ে গেলে বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রীযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এক পর্যায়ে আমি বিয়ের কথা বললে তিনি আমাকে বিয়ে করবেন, করছি বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

সবশেষ গত ৩ এপ্রিল আমাকে ঘোরাঘুরির কথা বলে বিকেল সোয়া ৩টায় সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসেন। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করেন। ওই সময় জনগণ আমাদের রিসোর্টে আকস্মিক আটক করে এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমরা কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় জনতার রোষানলে পড়ি। পরবর্তীতে মামুনুল হক ও তার অনুসারীরা রিসোর্ট থেকে আমাদের নিয়ে যায়। এ ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। পরে মামুনুল হক আমাকে আমার ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় আটকে রাখেন। আমার পরিবার, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি।

পরে কৌশলে উদ্ধারের জন্য আমার বড় ছেলেকে আইনের আশ্রয় নিতে বলি। গত ২৭ এপ্রিল ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। পরে জানতে পারি ২৬ এপ্রিল আমার বাবা কলাবাগান থানায় একটি ডায়েরি করেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর আমার বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh