কিশোর গ্যাং, টিকটক-এলএসডির পাশাপাশি মিথষ্ক্রিয়া-বিপর্যয়ও আলোচিত হোক

হেলাল মহিউদ্দীন

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২১, ০১:৪৮ পিএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২১, ০৬:৫৪ পিএম

ড. হেলাল মহিউদ্দীন।

ড. হেলাল মহিউদ্দীন।

এক

সম্প্রতি সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে বড় অংশ দখলে নিয়েছে কিশোর গ্যাং, শিশুখুনি, কিশোরদের খুনোখুনি, মাদক সংসর্গ, খুন-খারাবি, যৌন-অপরাধ, টিকটক-এলএসডি ইত্যাদি। আমরা চাই সমাজে ও রাষ্ট্রে এগুলো নিয়ে কথা হবে। আমরা টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞাটিই শিশু-কিশোরবান্ধব করেছিলাম। জেনেছিলাম ‘টেকসই উন্নয়ন’ মানেই সেই উন্নয়ন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সুরক্ষা দেবে। 

শুধুই সবুজ দুনিয়া তৈরি করা নয়, একটি মানবিক, বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথবীই রেখে যেতে হব। সুকান্ত যে রকমটি বলেছিলেন- ‘বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’, সে রকম।

বাংলাদেশও এখন বিশ্বসমাজের অন্তর্ভূক্ত। ‘ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে’ আমরাও পা রেখেছি, এবং সমান তালে সামনে ছুটছি। বিশ্বায়নের ভাগীদার আমরাও। বিশ্বের অন্য ভোক্তাদের মতো আমাদের ঘরে ঘরে গেজেট, ডিভাইস, ইন্টারনেট, ওয়ারলেস সবকিছুর ছড়াছড়ি। অনলাইনে কেনাকাটা আমরাও করি। আমাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয় ফুডপান্ডা। গন্তব্যে নিয়ে যায় উবার-পাঠাও ইত্যাদি। ঘরে পণ্য পৌঁছে দেয় ইভ্যালি, দারাজ এটাসেটা। ইন্টারনেটের অপার সম্ভাবনার যথেচ্ছ ব্যবহারে আমরাও পিছিয়ে নেই। 

পশ্চিম-পূবের ব্যবধান সেই কবেই ঘুচতে শুরু করেছিল। রবি ঠাকুর যেমনটি বহু আগেই লিখেছিলেন- “শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন। পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার, দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে- এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে”।

পশ্চিমের হাত হতে উপহার পাওয়া ইন্টারনেটের স্বাচ্ছন্দ্যই শুধু ভোগ করতে পারব, প্রকৃতি সে রকমটি হতে দেবে কেন? অস্বাচ্ছন্দ্যকর ও অগ্রহণযোগ্য যা কিছু আছে, সেগুলোও আমাদের পিছু নিয়েছে, এবং সামনে আরো নেবে। সেটিই বাস্তবতা। কথা হচ্ছে, সেগুলোর পেছনে মূল অনুঘটকটি কী তা আমরা কীভাবে বুঝব? কীভাবে বুঝব কেন আমাদের সন্তানদের একাংশ প্রযুক্তির অসামান্য সম্ভাবনাগুলোকে সমস্যায় পরিণত করছে? এই ক্ষুদ্র কলেবরের আলোচনায় একটি দরকারি বিষয়কে আলোচনায় তোলার চেষ্টা করছি। বিষয়টির নাম ‘ইন্ট্র্যাএ্যাকশন’ বা ‘মিথষ্ক্রিয়া’। ‘মিথষ্ক্রিয়া’ বিষয়টি কবিগুরুর লেখা “দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে” দিয়ে পরিস্কারভাবে বুঝতে পারা সম্ভব। এই দেয়া-নেয়া আর মেলা-মেলানোকে আমাদের ‘সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া’ চালু রাখাতেই বেশি দরকারি মন করি। এই প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখা গেলে সমস্যা নানা দিক দিয়ে বাড়ে।  

দুই

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে একটি গবেষণাকাজে প্রধান গবেষকের দায়িত্ব পালন করছি। গবেষণার বিষয় কোভিডকালে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য। মূল গবেষণাটির আগে একটি প্রস্তুতিমূলক গবেষণা করেছিলাম। সেই পর্বটিতে অভিভাবকরাই বেশি অংশ নিয়েছিলেন। সংখ্যায় কম হলেও কয়েকজন কিশোর-কিশোরীও অংশ নিয়েছে। সেই গবেষণা চিন্তা জাগাতে পারা বেশ কিছু অনুধাবনের জন্ম দিয়েছে। করোনাকালে কিশোর-কিশোরীদের ইন্টারনেট ও গেজেট আসক্তি নিয়ে অভিভাবকরা নিদারুণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই পর্যন্ত বিষয়টি বোধগম্য ছিল; কিন্তু তারপরই তাদের ভাবনায় আর বিশেষ কোনো গভীরতা পাওয়া গেল না। সন্তানের আসক্তির মূল দিক কোনটি তারা জানেন না। জানতে পারা অবশ্য বেশ কঠিনই তাদের জন্য। তাদের জন্য কঠিন হওয়ায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইন-নির্মাতা ও প্রয়োগকারীদের জন্যও কঠিন। সাংবাদিকরা খবর জানলেও খবরের গভীরে ঢোকা তাদের জন্য কঠিন। সবার জন্য কঠিন হওয়ায় সমাজবিজ্ঞানীদের জন্যও সঠিক তথ্য পাবার কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে। 

গবেষণাকালে অভিভবকেরা সকলেই মোটা দাগে দুটি বিষয়কে বেশি দায়ী করেছেন। এক. গেমিং, দুই. সামাজিক মাধ্যমে চ্যাটিং অথবা ফোনে টেক্সটিং। তারা সমস্যা হিসেবে যে সমস্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে আছে- অনিদ্রা, রাত জাগা, উগ্র মেজাজ, বেয়াদবি, অবাধ্যতা, অন্যমনস্কতা, অত্যধিক গোপনীয়তা প্রত্যাশা, খাবারে অরুচি, অসামাজিকতা, আত্মীয়-স্বজন ও মেহমান-অতিথির আগমন আপ্যায়নে বিরক্তি ও বাধাদান, কাউকে সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি। এগুলো আসলে সমস্যা নয়। সমস্যার পূর্বলক্ষণ। অভিভাবকরা সম্ভবত এই বিষয়টি ধরতে পারছেন না।

উষ্মা জানাচ্ছেন যে, সন্তানরা যখন স্কুলে ছিল, তখন তাদের নিয়ে এতটা সংকটের কারণ ঘটেনি। সবকিছু নিয়মানুগই ছিল। এখন সার্বক্ষণিক গৃহাভ্যন্তরের আচরণে অভিভাবকরা আদরণীয় কিশোর-কিশোরীদের পাচ্ছেন না। তারা বোঝেন বয়সন্ধির এই সময়টি জটিল। তাদের শারীরিকতা-মানসিকতায় দ্রুত পরিবর্তনের কারণে তাদের কিছুটা সময় ‘অন্য কেউ’ বা ‘অপরিচিত; মনে হবার বিষয়টি অভিভাবরা জানেন; কিন্তু সন্তানরা যেন বেশিই অপরিচিত হয়ে পড়ছে প্রতিদিন। তাই অনেকেই চাইলেন কিশোর-কিশোরীদের কোভিড-ঝুঁকি থাকলেও স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হোক। 

প্রতিষ্ঠানের বিকল্প যে হয় না, সে কথা কে না জানে? সমাজবিজ্ঞানে ‘সামাজিকায়ন’ বলে একটি তত্ত্ব আছে। সেই তত্ত্ব মতে, সামাজিকায়নের প্রধান নিয়ামক ‘পরিবার’, তারপর বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের মতো পরিবারও একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। অভিভাবকদের মতামত বলে দিচ্ছে প্রাথমিক তথা মূল প্রতিষ্ঠান বা পরিবারের কার্যক্ষমতা গৌণ হয়ে পড়ছে। আসলে বিদ্যালয়ের ভূমিকা বা কার্যক্ষমতাও আর আগের মতো নেই। 

শিক্ষকদের কয়েকজনের সঙ্গেও গবেষণা কালে আমার কথা হয়। তাদের বক্তব্য, এই প্রজন্মকে তারা ভয় পান। তাই মোটেই ঘাঁটাতে চান না। বিদ্যালয়ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন যেমন হয়েছে, অভিভাবকরূপী শিক্ষকরাও ততবেশি নিস্পৃহ হচ্ছেন। তাদের ভয় ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের তারা আর আগের মতো চেনেন না। আগের মতো তারা সহযোগিতায়ও এগিয়ে আসবেন না। ক্ষমতাবান হলে ক্ষমতা ফলাবেন। রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট অভিভাভবকের হাতে ইজ্জত-সম্মান খোয়াবেন। অপমানিত হবেন। নেতা দ্বারা শিক্ষককে কানে ধরিয়ে উঠবস করানোর নজির আমাদের দেশেই আছে। আরেকজন শিক্ষককে বাধ্য করেছেন তার পা ধরে মাফ চাইতে। এরকম অনেকগুলো ঘটনার পর শিক্ষকরা আর ঝুঁকি নিতে চান না। 

তারা জানালেন, অভিভাবক-শিক্ষক-ছাত্র ইন্টারএ্যাকশন বা মিথষ্ক্রিয়া কমতে কমতে, এখন আর নেই বললেই চলে। সকলেই এখন যার যার মতো নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলা মানুষ।  

তিন

আমাদের গবেষণায় কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণ ছিল অভিভাবকের মাত্র তিন শতাংশ; কিন্তু অভিভাবকদের তুলনায় তাদের দেয়া তথ্য অনেক বেশি অর্থবহ ও বিস্তারিত ছিল। তারা সমস্যায় যেমন আলোকপাত করতে পারছিল, সমাধানের পথও উল্লেখ করেছিল। অভিভাবকদের প্রতি তাদের অভিযোগও তেমন ছিল না। বরং নিজেদের ভুল পথ ধরার কারণে খানিকটা অনুশোচনা, আত্মসমালোচনা ছিল। এটি একটি আশার দিক। আমাদের সন্তানরাও যে নিজেদের কৃতকর্মকে মূল্যায়ন করতে জানে সে প্রমাণটি মিলেছে। 

আমাদের গবেষণা সহায়তা দেবার সম্মতিকালে কিশোর-কিশোরীদের একটিই শর্ত ছিল। সেটি এই যে তাদের নাম-ধাম সবকিছু গোপন রাখতে হবে। বলে নেয়া দরকার আমাদের গবেষিতরা সবাই ছিল শহুরে নিম্নমধ্যবিত্ত হতে মধ্যবিত্ত হতে চলা, অথবা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। তথ্য দেবার বেলায় তারা কেউই নিজেদের সমস্যার কথা বলেনি। বেশির ভাগই জানিয়েছে যে, তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনেককে নিয়ে তারা চিন্তিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বন্ধুরা পর্নোগ্রাফি, মাদক, বিভিন্নরকম যৌন-সংসর্গ ও অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা অনুমান করতে পেরেছি, কিছু কিছু উত্তরদাতা নিজেরাই সমস্যাগ্রস্ত। হয়ত নিজেদের সমস্যাই বন্ধুর নাম দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে। 

একটি বিষয় পরিস্কার হলো যে, অপরাধজগতে জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের অনুশোচনা ও অপরাধবোধ একেবারেই মিইয়ে যায়নি। 

অভিভাভবকের তুলনায় কিশোর-কিশোরীরা বরং অনেক স্বচ্ছ ও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই অভিভাবকের কাছে বলতে না পারা কথাগুলোই আমাদেরকে মন খুলে বলেছে ও লিখে জানিয়েছে। 

তাদের সবারই চারটি বক্তব্য প্রায় হুবহু একই রকম ছিল। এক. অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা, আলাপ-আলোচনা করা, মন খুলে সমস্যাগুলো তুলে ধরা বা পরামর্শ চাওয়াকে তারা রীতিমত ঘৃণা করে এবং এড়িয়ে চলে। অভিভাবকদের সঙ্গে তাই তাদের মিথষ্ক্রিয়া প্রতিদিনই কমছে। তাদের ভাষ্য, অভিভাবকদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া অসম্ভব। কারণ তারা যোগাযোগের আগে-পরে সবকিছুতেই মাথায় বয়ে আনেন যে, তারা অভিভাবক, ক্ষমতা-সম্পর্কের উপর তলায় তাদের বাস ও ‘তারা যা জানেন বা বলেন সেটিই সঠিক’ মনোভঙ্গি চাপিয়ে দিতে আসেন। কিশোর-কিশোরীদের এই অনুভব বা অভিযোগটিতে নতুনত্ব মোটেই নেই। এই অভিযোগও যুগযুগের। তবে নতুনত্ব না থাকলেও এই তথ্যে ভাবনার খোরাক আছে। অভিভাবকেরা দাবি করেছেন যে, তাদের দিক হতে বন্ধুভাবাপন্ন হবার ও সহায়তা করার চেষ্টার কোনোই কমতি নেই। অনেক ক্ষেত্রে ফলাফল হিতে বিপরীত হচ্ছে। 

তাহলে আসা যাক অন্যান্য মিলগুলোতে। দুই. কিশোর-কিশোরীদের বন্ধুবান্ধবের সবচাইতে বড় অংশ ভার্চুয়াল জগতের বা ইন্টারনেটের, সামাজিক পরিবেশের নয়। তিন. সেসব বন্ধুত্ব যতবেশি বেড়েছে, শৈশবের বন্ধু, অথবা আত্মীয়স্বজন ও স্কুল-কলেজের বা এলাকার বন্ধুদের সঙ্গ, সংস্পর্শ ও সম্পর্ক ততোই কমেছে। চার. তাদের মিথষ্ক্রিয়া চালিয়ে যাবার ও জমিয়ে তোলার পেছনে সবচাইতে বেশি কার্যকর বিষয়ের নাম ‘স্বাচ্ছন্দ্য’। অর্থাৎ তারা যাদের সঙ্গে যত বেশি স্বচ্ছন্দ, তাদের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক ততবেশি জমে উঠছে। অনলাইনের সম্পর্কেই তারা বেশি স্বচ্ছন্দ। কারণ সেখানে অভিযোগ-অনুযোগ, দোষ ধরাধরি ও রেষারেষি কম। কেউ সেসব শুরু করলেই তারা বন্ধু-তালিকা হতে তাদের ছেঁটে ফেলতে পারে। সকলের সেই প্রস্তুতিও থাকে। সাময়িক মানসিক অভিঘাত বা দ্বন্দ্বও তারা কাটিয়ে উঠতে পারে। কারণ এইসব সম্পর্কে কেউ কারো ওপর চোটপাট খাটাতে পারে না। ফলে সম্পর্কগুলো ক্ষণস্থায়ী ও গভীরতাহীনও বটে।  

তথ্যটিতে ভয় পাবার কারণ আছে। সম্পর্ক সব সময়েই ঘাত-প্রতিঘাত, মান-অভিমান, অধিকার-দায়িত্ব-কর্তব্য, অনুভব-অনুভূতির মাধ্যমে পাকাপোক্ত হয়। বর্তমান সময়ের কিশোর-কিশোরীগণ অগভীর সম্পর্কের ফাঁদে আটকা পড়ছে। ফলে তাদের জীবন-দর্শনেও অগভীরতা ও সাময়িকতার ছাপ স্পষ্ট। অভিভাবক ও ঘরভর্তি মানুষের স্বজন-সম্পর্কও আলগা-আলগা, অগভীর ও একান্তই স্বাচ্ছন্দ্যনির্ভর। অস্বাচ্ছন্দ্যের কিছুকেই তারা আর জীবনের অংশ ভাবতে পারছে না। 

তা না হয় হলো। কিন্তু তাদের অপরাধজগতের সঙ্গে সংযোগ কীভাবে ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের কিছু অসম্পূর্ণ উত্তর ইতিমধ্যে আমাদের জানা হয়েছে। গেম ছাড়া ও সামাজিক মাধ্যমের বন্ধুদের সংযোগে তাদের প্রথম পরিচয় ঘটে ভিনদেশি অশ্লীল শব্দের গালাগালি ও উত্তেজনা প্রকাশক বিশেষণমালার সঙ্গে। তারপর জানা হয় অন্যান্য কৌতুহলোদ্দীপক শব্দরাজি। 

একজনের একটি উদাহরণ দিচ্ছি। একজন কিশোর জানাল, তার বখে যাওয়া বন্ধুটি প্রথমে অনলাইন বন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিল ‘হাই হওয়া’ শব্দের অর্থ কী? সে জানল ভাবটির অর্থ চরম নেশায় ঘোরগ্রস্ত হওয়া। কীভাবে ‘হাই হতে হয়’ জানতে চাওয়ার কৌতুহল দিয়ে শুরু। বন্ধুর শিক্ষকতায় মাদক ও নেশার জগতের অনেক অজানা তথ্য, প্রশ্নের পর পর প্রশ্ন আর আগ্রহের পর আগ্রহ তাকে টেনে নিয়ে গেছে নেশার জগতে। মাত্র সতের বছর বয়সে সে মনে করছে তার আর সুস্থ জীবনে ফেরা সম্ভব নয়। বরং খারাপ হওয়াই যখন নিয়তি তখন ‘সেরা খারাপ’ হয়ে ওঠাই তার একমাত্র সাধনার অংশ হয়ে পড়েছে। 

উত্তরদাতা কিশোর জানাল এ রকম উদাহরণ আরো আছে। আরো কয়েকটি কেস স্টাডি হতে দুটি অনুসিদ্ধান্ত দাঁড় করানো যায়। এক. কাম্য মিথষ্ক্রিয়ায় বিপজ্জনক রকমের ভাঙ্গন ও ঘাটতি বেড়েই চলছে। পরিবার, বিদ্যায়তন, ধর্ম, নৈতিকতা ও মুল্যবোধের রশি একবারেই আলগা হয়ে পড়ছে। এটি ঘটছে চোখে দেখা মিথষ্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, চোখে না দেখা মিথষ্ক্রিয়া, বিশেষত সাইবার-স্পেসে বহুগুণ বেশি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে। 

সম্প্রতি আমরা সাইবার-সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছি। নজরদারিই এখানে মুখ্য; কিন্তু ‘মিথষ্ক্রিয়া ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো কথা কেউই বলছে না। অথচ সমস্যাটি একান্তই মিথষ্ক্রিয়ার সমস্যা, একান্তই যোগাযোগের সমস্যা। নজরদারি এই সমস্যার অতি সামান্যই কূলকিনারা করতে পারবে। ‘কাম্য মিথষ্ক্রিয়া’য় ফিরতে হলে স্পাইওয়ার নয়, একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।  

- লেখক ও অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh