করোনার টিকা সংকট

‘দিবো দিবো কয়, দেয়তো না’

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২১, ১০:২৮ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২১, ১০:৩১ পিএম

 পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.  এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

দেশে করোনা সংক্রমণের হার একদিনের ব্যবধানে আরও বেড়েছে। জুনের শেষ সাত দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সাত দিনের প্রতিদিনই সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে দুই দিন সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি, দুই দিন ছিল ১১ শতাংশের বেশি, দুই দিন ছিল ১২ শতাংশের বেশি। সবশেষ ২৪ ঘণ্টাতে এই হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

করোনাভাইরাসের ডেল্টা তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর পর বাংলাদেশেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত কিছুদিনে সীমান্ত এলাকাতেও দেখা গেছে সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। সবকিছু মিলিয়েই সংক্রমণের এই ধারা ফের ঊর্ধ্বমুখী। আগের মতোই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, জনসমাগম না এড়াতে পারলে এবং মাস্ক না পরলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়।

এদিকে, দেশে যখন সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী তখনই দেখা দিয়েছে করোনার টিকা সংকট। যদিও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন দেশকে টিকা পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু তার ফলাফল খুব একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.  এ কে আব্দুল মোমেনের কথায়ও তা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার টিকা নিশ্চিত করতে আমরা অনেক দেশের কাছে টিকা চেয়েছি। সবাই আমাদের বলে টিকা দেবে, তবে কবে দেবে সেটা বলে না।

সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত একটি প্রবচন হচ্ছে “দিবো দিবো কয়, দেয় তো না; একখান কতা বালা আছে, না তো করে না’ কোন বিষয়ে ওয়াদা করে কথা না রাখলে বা টালবাহানা করলে এ প্রবাদটি উচ্চারণ করা হয়। সিলেটের অধিবাসী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.  এ কে আব্দুল মোমেন ঠিক এরকম একটি পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বলেছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন দেশকে টিকা পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সবাই টিকা দেবে বলে। কিন্তু হাতে আসছে না। 

দেশে করোনা ভ্যাকসিন সংকট নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান,  ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আছে জেনে সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুরোধ জানালাম। পরে জানা গেল, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কম থাকায় বাংলাদেশ টিকাপ্রাপ্তির দেশগুলো অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

এদিকে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোভ্যাক্সের আওতায় বিভিন্ন দেশে যে টিকা দিচ্ছে, তাতে অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের উপহার হিসেবে এই টিকা বাংলাদেশে আসবে।

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় চীন চিকিৎসা সামগ্রী দিচ্ছে। আগামী ১৩ জুন এই চিকিৎসা সামগ্রী ঢাকায় আনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের উপহারের ৬ লাখ ডোজ টিকা আনতে দুটি সি-১৩০ প্লেন পাঠানো হচ্ছে। চীন সরকার বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল ইকুইপমেন্ট দিচ্ছে। টিকা বোঝাই হবার পর পর প্লেনে যে জায়গা থাকবে, সেটি পুরোটা ভরে নিয়ে আসবে।

উল্লেখ্য, চীন গত ১২ মে সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ উপহারের টিকা বাংলাদেশে পাঠায়। তার ৯ দিনের মাথায় চীন দ্বিতীয় দফায় টিকা উপহারের ঘোষণা দেয়। তাছাড়া, ঢাকায় চীনের দূতাবাস থেকে পাঠান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে টিকার বিপুল চাহিদার প্রেক্ষাপটে সরবরাহের ঘাটতির বিষয়ে চীন উদ্বিগ্ন।  দ্বিতীয় দফায় টিকা উপহারের ঘোষণা বাংলাদেশের প্রতি চীনের বন্ধুত্বের নিদর্শন।

এদিকে, গত ২৫ মে থেকে দেশে চীনের সিনোফার্মার টিকার পর্যবেক্ষণমূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে দুই হাজার ১৪২ জন। এদের মধ্যে এক হাজার ৫৭০ জন পুরুষ ও ৫৭২ জন নারী। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে পাঁচ হাজার ২৮৭ জন টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন।

দেশে বেড়েছে  সংক্রমণ ও মৃত্যু
দেশে করোনা সংক্রমনের হার এক দিনের ব্যবধানে আরও  বেড়েছে । গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও  ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং  নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৭৬ জন।b এর আগে বুধবার করোনাভাইরাসে ৩৬ জনের মৃত্যু ও ২ হাজার ৫৩৭ জন শনাক্ত হয়েছেন।  আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ৫১০ টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায়  ১৯ হাজার ৮৬৯টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৯ হাজার ৪৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার পাওয়া গেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সরকারি হিসাবে দেশে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ হাজার ৯৮৯ জনে। আর মোট শনাক্ত ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh