বজ্রপাতে ৪ মাসে ১৭৭ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ০৫:১৪ পিএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

২০২১ সালের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে অন্তত ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন।

শুক্রবার (১১ জুন) রাজধানীর পুরানা পল্টনে নিজেদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সেভ দ্যা সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম।

ফোরাম জানায়, শুধু কৃষি কাজ করতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে ১২২ জনের। আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেছেন ১৫ জন। এছাড়া ঘরে অবস্থানকালে ১০, নৌকায় মাছ ধরার সময় ৬, মাঠে গরু আনতে গিয়ে পাঁচ, মাঠে খেলার সময় তিন এবং বাড়ির আঙিনায়-উঠানে খেলা করার সময় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভ্যান-রিকশা চালানোর সময় দুই এবং গাড়ির ভেতরে অবস্থানকালীন বজ্রপাতে একজনের জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর বজ্রপাতে মৃত্যুর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৪৯ এবং নারী ২৮। নারী ও পুরুষের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৩, কিশোর ছয় ও কিশোরী তিন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে হতাহতের কোনো ঘটনা না থাকলেও মার্চ মাসের শেষের দিন থেকে মৃত্যুর ঘটনা শুরু হয়। এরপর থেকে চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মারা যান ১৭৭ জন। অন্যদিকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মারা গেছেন ৬৫ জন। মৃত্যুর পাশাপাশি এ বছর বজ্রপাতে আহত হয়েছেন ৪৭ জন। এর মধ্যে ৪০ জন পুরুষ ও সাতজন নারী রয়েছেন।

ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বজ্রপাতে হতাহতের এই পরিসংখ্যান করা হয়েছে জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিউজ ও টেলিভিশনের স্ক্রল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। এ বছর বজ্রপাতের হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। এ জেলায় চলতি বছরের মে এবং জুন মাসেই মারা গেছেন ১৮ জন। এছাড়া, চলতি বছরের চার মাসে জামালপুরে ১৪, নেত্রকোণায় ১৩, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ ও চট্টগ্রামে ১০ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন।

এ সময় ফোরামের পক্ষ থেকে ছয় দফা তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগেই আবহাওয়া অধিদফতর জানতে পারে কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে। এ তথ্য মোবাইলে মেসেজ আকারে পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুহার যত, তার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যুহার বজ্রপাতে। তবে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা করলেও এ খাতে বরাদ্দ কম। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

মাঠে, হাওর বা ফাঁকা কৃষি কাজের এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। যার ওপরে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করতে হবে, যেন বজ্রপাতের সময় কৃষক সেখানে অবস্থান বা আশ্রয় নিতে পারেন।

বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেমের সব পণ্যে শুল্ক মওকুফ করতে হবে। সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের ঘোষণা দিতে হবে।

পাশাপাশি বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা-থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন না করার দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ ড. মুনির আহমেদ, সেভ দ্যা সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, ফোরামের গবেষণা সেলের নির্বাহী প্রধান আব্দুল আলীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট এমদাদ হোসাইন মিয়া, নির্বাহী পরিচালাক রানা ভূইয়া, নূরে আলম জিকু প্রমুখ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh