সিদ্দিকুরের অলিম্পিক স্বপ্নের ইতি

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২১, ১০:১০ এএম

সিদ্দিকুর রহমান। ফাইল ছবি

সিদ্দিকুর রহমান। ফাইল ছবি

অনেক প্রত্যাশা থাকলেও দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমানের অলিম্পিক গেমসে খেলা স্বপ্নের হয়তো ইতি হয়ে গেছে! আর সেখানে সবচেয়ে বড় কারণের নাম করোনাভাইরাস। 

যে টুর্নামেন্টগুলো খেলে নিজেকে অলিম্পিকের জন্য প্রমাণের চেষ্টা ছিল তার, বেশিরভাগই আর অনুষ্ঠিত হয়নি। সে কারণে ইচ্ছে থাকলেও র‌্যাংকিং বাড়িয়ে নিয়ে অলিম্পিকে খেলার সুযোগটা হয়তো পাচ্ছেন না দেশসেরা এই গলফার। টোকিও অলিম্পিক গেমস শুরু হতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। এই সময়ের মধ্যেও কোনো টুর্নামেন্টে খেলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সে কারণে ইচ্ছার অপমৃত্যু হতে চলেছে সিদ্দিকুরের। 

এর আগে র‌্যাংকিংয়ে সেরা ৬০-এর মধ্যে থাকায় প্রথম বাংলাদেশি অ্যাথলেট হিসেবে যোগ্যতাবলে ২০১৬ রিও অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন এই গলফার। সিদ্দিকুরের পর এবার একই কৃতিত্ব গড়েছেন আর্চার রোমান সানা। তবে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছেন দেশের প্রথম পেশাদার গলফার সিদ্দিকুর। চলমান করোনা মহামারির জন্য এশিয়ান ট্যুরসহ গলফের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা স্থগিত রয়েছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আর অলিম্পিকে খেলার সুযোগ দেখছেন না তিনি।

চরমভাবে হতাশ সিদ্দিকুর বলেন, ‘করোনা মহামারি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে বোধহয় গলফের। এখন কিন্তু ফুটবল, ক্রিকেটসহ বেশিরভাগ খেলাই চলছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এশিয়ান ট্যুর স্থগিত রয়েছে। করোনার জন্য বিদেশে খেলতে যেতে পারছি না। কিছু টুর্নামেন্ট খেললে অলিম্পিকে খেলার একটা সুযোগ তৈরি হতো। এবার অলিম্পিক খেলা হচ্ছে না বলেই আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।’ 

অলিম্পিকে পুনরায় খেলা না হলেও নিজের অনুশীলন চালিয়ে যেতে চান সিদ্দিকুর। যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত ট্রেনিংয়ের জন্য বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে একটি আবেদন করেছিলেন তিনি। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আবেদনের এখনো কোনো সাড়া না পেলেও আশা ছাড়তে নারাজ সিদ্দিকুর।

তিনি বলেন, ‘আমাকে আগের জায়গা পৌঁছাতে হলে অনুশীলন করতে হবে। সে কারণে অলিম্পিক থেকে সাহায্য পেলে বাইরে ট্রেনিংয়ের পরিকল্পনাটি এখনো রয়েছে। আশা করি বিষয়টি কর্মকর্তারা গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখবেন’। 

সিদ্দিকুর নিজেই আবার বাংলাদেশ অ্যাথলেট কমিশনের সদস্য। অ্যাথলেট কমিশনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা অ্যাথলেট কমিশন দেশের অন্য ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করে থাকি। করোনার জন্য আমাদের সভাও আর এখন হচ্ছে না।’

মানুষকে বলা হয় তারা নাকি স্বপ্নের সমান বড়। স্বপ্ন যদি থাকে আকাশ ছোঁয়ার, আর সে জন্য যদি কেউ পরিশ্রম করে যায় অবিরাম, তাহলে একদিন সেই স্বপ্নের পাখি ধরা দেবেই, অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিত করে এটা এখন বলাই যায়। এমনই একজন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। ২০১৪ সালের মার্চে মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো ইউরোপ ও এশিয়ার তারকা গলফারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘ইউরেশিয়া কাপ গলফ’। ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার প্রাইজমানির টুর্নামেন্টে অংশ নেন এশিয়া ও ইউরোপের ১০ জন করে গলফার। 

এশিয়ার পক্ষে অংশ নেন বাংলাদেশের সিদ্দিকুর। প্রথম দিনই ইউরোপের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এশিয়া। নির্ধারিত ১০ ম্যাচ শেষে ৭-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ইউরোপ; কিন্তু দ্বিতীয় দিনের শেষ রাউন্ডে দুর্দান্তভাবে ফিরে আসে এশিয়া। সিদ্দিকুর ও ভারতের অনির্বাণ লাহিড়ির দারুণ দুটি জয় ও অন্যদের দৃঢ়তায় মান বাঁচে এশিয়ার। ৭-৩ ব্যবধানে জেতে এশিয়া। ফলে সমান ১০-১০ ম্যাচ জিতে দুই মহাদেশীয় লড়াইয়ের প্রথম আসরটিতে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ইউরোপ ও এশিয়া। 

সিদ্দিকুর নামের বাংলাদেশি তরুণ গলফার এশিয়ার মান-বাঁচানো খেলা উপহার দিয়ে নজর কাড়েন ইউরোপ ও এশিয়ার গলফার, দর্শক ও মিডিয়ার।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh