ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল অভিনেত্রী হবার

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ০৭:০১ পিএম

জেনিফার লরেন্স

জেনিফার লরেন্স

ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে তিনি একজন অভিনেত্রী হবেন। আর তাই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই যোগ দিয়েছিলেন লুইসভিলের স্থানীয় এক থিয়েটারে। সেসময় লুইসভিলের সেই থিয়েটারে এবং পাশাপাশি স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেই অভিনয়ের শখ মেটাতে হচ্ছিল তাকে। পরবর্তীতে কিশোরী বয়সে এসে তার মনে হলো একমাত্র মডেলিংয়ের মাধ্যমেই তিনি তার স্বপ্নের জগতে পা রাখতে পারবেন; কিন্তু লুইসভিলে সে সুযোগ পাবেন কোথায়? সেজন্য তো তাকে যেতে হবে নিউইয়র্ক শহরে। যেই ভাবা সেই কাজ! একদিন মায়ের হাত ধরে তিনি চলে আসেন নিউইয়র্ক শহরে। উদ্দেশ্য মডেলিংয়ে নাম লেখানো। নিউইয়র্ক এসে বিভিন্ন এজেন্সিতে যোগাযোগ করতে করতে একটি এজেন্সিতে কাজের সুযোগও পেয়ে যান তিনি। শুরু হয় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় এবং বিজ্ঞাপনে মডেলিং। এমনটাই ছিল আজকের হলিউডের পর্দা কাঁপানো ও আবেদনময়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্সের শুরুর গল্পটি।

জেনিফার লরেন্স নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পর্দায় বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয় দক্ষতাসম্পন্ন এবং পর্দার বাইরে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লাস্যময়ী সৌন্দর্যের অধিকারী আবেদনময়ী একটি মুখ। যার সৌন্দর্য ও অভিনয়ের আলোতে আলোকিত হয়েছে এক্সমেন, সিলভার লিনিংস প্লেবুক, হান্টার্স বোনের মতো দুনিয়া কাঁপানো সিনেমাগুলো। জেনিফার লরেন্সের পুরো নাম জেনিফার শ্রাডের লরেন্স। ১৯৯০ সালে আমেরিকার লুইসভিলে জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রীর যাত্রার শুরুটি মডেলিংয়ের মাধ্যমে হলেও একজন দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে সবার নজরে পড়তে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি।

শুরুর দিকে নিজেকে দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তুলতে তার ক্যারিয়ারে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল দ্য বিল এঙ্গভ্যাল নামক একটি কমেডি শো। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত টানা দুই বছর তিনি এই কমেডি শোতে অভিনয় করেন। এর মাঝেই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে লরেন্সের। ২০০৮ সালে গার্ডেন পার্টি নামক একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। সে বছর আরও দুটি সিনেমায় কাজ করেন জেনিফার লরেন্স। সিনেমা দুটি হলো, দ্য পোকার হাউস এবং দ্য বার্নিং প্লেইন। এর এক বছর পরই লরেন্স প্রথমবারের মতো নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পান। আর এই সুযোগটি আসে উইন্টার্স বোন নামক একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। উইন্টার্স বোন সিনেমায় লরেন্সের চরিত্রটি ছিল এক গ্রাম্য কিশোরীর। চরিত্রটিতে নিজেকে ভালোভাবেই মেলে ধরেছিলেন লরেন্স; দুর্দান্ত অভিনয়ে লরেন্স পর্দায় চরিত্রটিকে এতটাই জীবন্ত করে তোলেন যে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এই এক চরিত্রই লরেন্সকে নিয়ে যায় বিনোদন দুনিয়ার সবার কাক্সিক্ষত একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের আসর তথা অস্কারে। এই চরিত্রটির জন্যই সেবার তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো মনোনীত হন অস্কারে।


উইন্টার্স বোনের এই সাফল্য দিয়ে ২০১০ সাল শেষ হলেও লরেন্সের ছিল সাফল্যর হাত ধরে পথচলার সবেমাত্র শুরু। আর তারই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে লরেন্স অভিনয় করেন দুনিয়া কাঁপানো এক্সমেন সিরিজের দ্য এক্সমেন ফার্স্টক্লাস নামক চলচ্চিত্রটিতে। উইন্টার্স বার্ন সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে লরেন্স নিজের জাত যেমন হলিউডের সবাইকে চিনিয়েছিলেন তেমনই এক্সমেন সিরিজের এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরেন সারাবিশ্বে। কেননা এই সিরিজের ধুন্ধুমার সফলতা অভিনেত্রী লরেন্সকে নিয়ে যায় এক অনন্য উচ্চতায়।

হলিউডের সীমানা ছড়িয়ে লরেন্সের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে, সেই সঙ্গে হলিউডেও নিজের আসনটি বেশ পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে তার। আর এরপরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে তো পরিচালক ডেভিড রাসেল পরিচালিত সিলভার লিনিংস প্লেবুক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমবারের মতো সেরা অভিনেত্রী বিভাগে নিজের ঝুলিতে অস্কার জিতে নেয়ার মাধ্যমে লরেন্স জানান দিল, তিনি অভিনয় দুনিয়ায় দু’দিনের জন্য আসেননি। এসেছেন রাজত্ব করতে। এরপর আমরা দেখতে পাই লরেন্স ক্রমেই নিজের সেই রাজত্ব সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত করেছেন তার প্রখর ও ভার্সেটাইল অভিনয় দক্ষতা দিয়ে। তিনি কখনো মিশে গিয়েছেন একটি গ্রাম্য কিশোরীর চরিত্রে আবার কখনো জীবন্ত করে তুলেছেন একজন তরুণী বিধবা নারীকে। আবার কখনো বা পর্দায় হাজির হয়েছেন একজন দুর্র্ধর্ষ গোয়েন্দা রূপে। আর এসব চরিত্র যেমন তাকে নিয়ে গিয়েছে দর্শকদের মনের মণিকোঠায়, তেমনই দিয়েছে স্বীকৃতিও।

নিজের অভিনয় শক্তি দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসার পাশাপাশি জিতে নিয়েছেন অস্কার, গোল্ডোন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার। লরেন্সের ক্যারিয়ারের এ যাবতকালীন উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে, এক্সমেন দ্য ফার্স্টক্লাস, এক্সমেন ডেজ অব ফিউচার অ্যান্ড পাস্ট, ডার্ক ফনিক্স, দ্য হাঙ্গার গেমস, মাদার, রেড স্প্যারো প্রভৃতি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh