পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

ঢাকায় নির্মাণ হবে ১১ রুট, কাজ শুরু মার্চে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২১, ১২:৫৯ এএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২১, ০১:০১ এএম

পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি

পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি

পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের মার্চে এমআরটি-১ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় দেশের প্রথম পাতাল রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত পাতাল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার ও কমলাপুর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। এই রেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে ২০২৬ সালে।

এরই মধ্যে পাতাল রেলপথ নির্মাণে রুটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে কৌশলগত পরিকল্পনা। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) এক অনলাইন সভায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, প্রকল্পের জন্য ২৫টি ট্রেন কেনা হবে। প্রতিটি ট্রেনে ৮টি করে কোচ থাকবে। একেকটি ট্রেনে ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। পুরো রেলপথ দিয়ে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এম এ এন ছিদ্দিক জানান, প্রকল্পের ডিপো নির্মাণ করা হবে সবার আগে। পর্যায়ক্রমে পাতাল রেলপথ, স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে এমআরটি-১ প্রকল্পের কাজ করা হবে। প্রথম প্যাকেজের আওতায় ডিপোর ভূমি উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ছয় মাসের মধ্যে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে ডিপোর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, টঙ্গী থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে পাতাল রেল।

৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল রেল নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা)। এ হিসাবে প্রতি কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণে ২৭২ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা খরচ হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় ১১টি পাতাল রেল রুট নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল থেকে তেঘরিয়া বাজার, মুসলিম নগর, সদরঘাট, গুলিস্তান, কাকরাইল, হাতিরঝিল, বিজি প্রেস, ভাসানটেক, কালশী, উত্তরা সেক্টর ১৭ হয়ে টঙ্গী জংশন পর্যন্ত যাবে এ পাতাল রেলপথটি। এর দৈর্ঘ্য ২৯ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যেই পাতাল রেল বাস্তবায়ন হয়ে যাওয়ার কথা।

ঢাকায় পাতাল রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার এজন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের আওতায় গত মার্চ মাসে ঢাকার একটি হোটেলে ‘ঢাকা সাবওয়ে প্রজেক্ট’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ঢাকাকে ঘিরে সব মিলিয়ে ২৫৮ কিলোমিটার পাতাল রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কথা জানায় সেতু কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০২ কিলোমিটার, ২০৪০ সালের মধ্যে আরো ৮৫ কিলোমিটার এবং শেষ ধাপে ২০৫০ সালের মধ্যে ৭১ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায় সংস্থাটি।

সব মিলিয়ে পাতাল রেলের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে ১১টি। এর মধ্যে গাবতলী থেকে ভোলাব পর্যন্ত রুট বি, কেরানীগঞ্জ থেকে পূর্ব নন্দীপাড়া পর্যন্ত রুট ডি, গাবতলী থেকে বসুন্ধরা রিভারভিউ পর্যন্ত রুট জি, হাজারীবাগ থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত রুট জে, ঝিলমিল থেকে টঙ্গী জংশন পর্যন্ত রুট ও, শাহ কবির মাজার রোড থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রুট পি, কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত রুট এস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রুট টি, তেঘরিয়া বাজার থেকে বন্দর পর্যন্ত রুট ইউ, টঙ্গী জংশন থেকে কোনাবাড়ি পর্যন্ত রুট ভি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাবতলী পর্যন্ত রুট ডব্লিউ চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো পাতাল রেল নেটওয়ার্কে স্টেশনের সংখ্যা হবে ২১৫টি।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় পাতাল রেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ডিজাইন ফর কনস্ট্রাকশন অব ঢাকা সাবওয়ে’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এজন্য ব্যয় হচ্ছে ৩২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পাতাল রেল নির্মাণের লক্ষ্যে স্পেনের কোম্পানি টিপসার নেতৃত্বে যৌথভাবে জাপানের প্যাডকো, বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস, কেএসসি ও বেটস সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে। সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ ৯০ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণে প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করবে এসব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে প্রকল্পটির কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh