লকডাউনেও থেমে নেই গবেষণা কার্যক্রম

ইলিয়াস আহমেদ

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২১, ০২:৫৩ পিএম

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজ্ঞানীরা।

কৃষি কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে করোনা ও লকডাউনের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)’র বিজ্ঞানীরা। করোনা ঝুঁকির মধ্যেও গেল দুই বছরে সাতটি জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন তারা। 

গবেষণার ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থেই জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গবেষণা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে কৃষি ক্ষেত্রে সারাদেশে ব্যাপক সাফল্য এনে দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। করোনা ও লকডাউনের মধ্যে দেশের সকল অফিস আদালত সীমিত পরিসরে চালানোর নির্দেশনা থাকলেও এখানকার বিজ্ঞানীরা করোনা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষিকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে পরিবার-পরিজনের কথা চিন্তা না করে নিয়মিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণা কাজে বিরতি দিলে পুনরায় সেই গবেষণা কাজ নতুন করে শুরু করতে হয়। তাই ঝুঁকি নিয়েই তাদের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে ফসল নিয়ে গবেষণা করা হয় টিস্যু কালচারের মাধ্যমে। ল্যাবরেটরির পরীক্ষণ প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ না করলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেই জন্য করোনাকালীন সময়ে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি পালন করে, গবেষণা কাজ চালানো হচ্ছে, যাতে করে ক্ষতি না হয়। টিস্যু নিয়ে কাজ করে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে তা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কৃষিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে। কারণ কাজ বন্ধ থাকলে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা সম্ভব নয়, তাই সব কিছু বিবেচনা করেই গবেষণা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। 

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী তাহমিনা আক্তার বলেন, করোনায় সকল সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নারী হয়েও সংসারের পাশাপাশি গবেষণা চালিয়ে যাওয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যারা করোনাকালে নিয়ে আতংকিত থাকলেও সকলকে বুঝিয়েই কৃষির স্বার্থে প্রতিনিয়ত কাজ করতে পেরে গর্ববোধ মনে করেন তাহমিনা। গবেষণার কাজ যাতে কোনো কারণেই ব্যাহত না হয়, সে জন্যই এক প্রকার সংসারের মায়া ত্যাগ করে দেশ ও কৃষকের স্বার্থে কাজ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাদিয়া তাসনিম। 

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শহিদুল্লাহ শহীদ বলেন, করোনাকালীন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নানা সহযোগিতার পাশাপাশি ভালো ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আউশ ধান রোপণের সময়ে ৩৩ টন বীজ এবং আমনের ৭০ টন বীজ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল অনুষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা অংশ গ্রহণ করেছে, যার ফলে এখনো কৃষিতে কোনো বিরূপ প্রভাব পরেনি।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, বিনা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১৮টি ফসলের ১১২টি জাত উদ্ভাবন করেছে বিজ্ঞানীরা। করোনার দুই বছরে ঝুঁকি নিয়ে কাজ ৭টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আরও পাঁচটি জাত উদ্ভাবনের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত বাকি একটি দিনও বিজ্ঞানীরা বসে থাকেনি। তারা তাদের গবেষণা কাজ চালিয়ে গেছে নিয়মিত। কারণ একটি গবেষণার সফলতা পেতে ৮ থেকে ১২ বছর সময় লাগে, এবং সেটি নিয়মিত কাজ করতে হয়। তাই কোনোভাবেই গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। কার্যক্রমে বিরতি দিলে একটি গবেষণা পুনরায় শুরু করতে হয়। নিয়মিত গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনা দুটি কর্মকাণ্ডে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। একটি হলো বাৎসরিক কর্মসম্পাদন চুক্তি এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল। 

তিনি আরও বলেন, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার অধিক ঝুঁকি উপেক্ষা করে গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh