করোনা সংক্রমণ রুখতে অবরুদ্ধ ঢাকা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ১০:৩২ এএম

কার্যত নয়দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে রাজধানী। ফাইল ছবি

কার্যত নয়দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে রাজধানী। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে এর চারপাশের সাতটি জেলায় আজ মঙ্গলবার (২২ জুন) ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে লকডাউন। চলবে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত। এসময়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে, মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধু মালবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। 

জেলাগুলো হচ্ছে- মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, গাজীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। সাধারণত দেশের যেকোনো স্থান থেকে ঢাকায় ঢুকতে হলে মানিকগঞ্জ কিংবা নারায়ণগঞ্জ কিংবা মুন্সীগঞ্জ কিংবা গাজীপুর হয়েই আসতে হয়।

এসব জেলায় ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলবে না। দূরের যাত্রার ট্রেন চললেও এই সাত জেলায় থামবে না। ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী নৌযানও চলবে না। এর ফলে নয়দিন কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে রাজধানী।

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার এবং ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা দূরপাল্লার বাসও বন্ধ রয়েছে। এই জেলাগুলোর মধ্যে যেগুলোতে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে বন্ধ রয়েছে।

গতকাল সোমবার (২১ জুন) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। 

তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঢাকাকে আমরা একটু কাট-অফ (বিচ্ছিন্ন) রাখতে চাই অন্য জেলার সাথে। ঢাকার সাথে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে এমনিতেই চলাচল কমে যাবে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই সাত জেলা ৩০ জুন পর্যন্ত ‘লকডাউনে’ আনা হয়েছে। এই সময়ে মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না।

এ সময়ে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিসেবা যেমন কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা , কোভিড ১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ,পানি, গ্যাস/জ্বালানি,ফায়ার সার্ভিস বন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট,গণমাধ্যম বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ ,তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, যদি কোনো লোকাল অথরিটি মনে করে তাদের লকডাউন করা দরকার সেটা তারা করতে পারে। সেই অথরিটি তাদের দেয়া হয়েছে। তবে ঢাকা জেলা নিয়ে অতি শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।

তবে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত আসায় রাজধানীবাসীর মধ্যে যারা নানা কাজে ঢাকার বাইরে গেছেন, আবার বাইরের জেলাগুলো থেকে যারা ঢাকায় এসেছেন তারা নিজের বাসস্থানে ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

লকডাউনের কারণে রাজধানী ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না কোনো ধরনের গণপরিবহন। আজ সকাল থেকে গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আমিনবাজার বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলী ব্রিজের আগে থেকেই গণপরিবহনগুলো ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে ও যাত্রী নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে জরুরি সার্ভিসের আওতায় যেসব পরিবহন রয়েছে সেগুলোকে চলাচলের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

গাজীপুর থেকে অনেকেই ঢাকা অফিস করেন। তারা পড়েছেন ভোগান্তিতে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হঠাৎ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করায় ক্ষোভ জানান অনেক যাত্রী। গণপরিবহন থেকে নামিয়ে দেয়ায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সবাই পায়ে হেঁটে নিজেদের গন্তব্যে ছুটছেন। সাভার থেকে আসা এক চাকরিজীবী বলেন, বাস বন্ধ থাকায় বৃষ্টির মধ্যেই আমরা হেঁটে যেতে বাধ্য হচ্ছি।

এদিকে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় গাবতলী মোড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল সকাল থেকে চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি গাড়ির যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাইভেটকার থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবহনের গন্তব্য জানতে চাওয়া হচ্ছে। 

বাস বন্ধ হলেও চালু রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। তবে যেসব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সেসব জেলায় ট্রেন থামবে না। আজ সকাল থেকে ঢাকা থেকে গাজীপুরের টঙ্গী ও জয়দেবপুর হয়ে যে সব আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে সেগুলো ওই স্টেশনে থামছে না। নারায়ণগঞ্জ হয়ে চলে শুধু মেইল ও লোকাল ট্রেন। করোনার কারণে এসব ট্রেন বন্ধ রয়েছে।

সকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে পণ্য পরিবহন ও জরুরি সেবা দেয়া নৌযানের ক্ষেত্রে এ আদেশ কার্যকর হবে না।

দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন চলতি বছরের এপ্রিলের মতো আবারো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ আবার বাড়তে শুরু করেছে। রোগী বেড়েছে হাসপাতালগুলোর আইসিইউতেও। গতকাল সোমবার দেশে আরো ৪ হাজার ৬৩৬ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত ও নতুন করে আরো ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত নয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৪ এপ্রিল একদিনে ৫ হাজার ১৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh