উসিথোয়াই মারমা, বান্দরবান
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ০৩:২০ পিএম
হস্তশিল্পসামগ্রী
বান্দরবানে স্থানীয়দের পাশাপাশি বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হস্তশিল্পের সামগ্রী। পার্বত্য এ জেলার এসব হস্তশিল্প এখন দেশের বিভিন্ন জেলাতেও চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এর উদ্যোক্তারা।
উদ্যোক্তারা বলছেন, শুধু বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা রকমের বাহারি হস্তশিল্প। তার মধ্যে রয়েছে কলমদানি, ফুলদানি, মোমদানি, টিস্যু বক্স, ট্রে, বাঁশি, মগ, টেবিল ল্যাম্প, কেটলি ও বিভিন্ন প্রকারে শোপিস। তাছাড়া গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা হয় পাখি, হরিণ, বাঘ ও হাতির মত বিভিন্ন প্রাণীও। এই কাজে ২০০৬ সালে প্রথম উদ্যোগ নেন সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা মংনু মারমা। এ জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হস্তশিল্পের তিনিই প্রথম উদ্যোক্তা।
মংনু মারমা সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, এলাকার কয়েকজন বেকার যুবক নিয়ে কোনোরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই এ কাজ শুরু করেছিলেন পনের বছর আগে। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সব ধরণের হস্তশিল্পের তৈরির কাজ রপ্ত করেছেন তারা। প্রতিদিন দশ জন শ্রমিক হস্তশিল্পের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। আর তাদের হাতেই তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্পের নানা ধরনের পণ্য।
তিনি আরও জানান, বেড়াতে আসা পর্যটকের কাছে এগুলোর বেশ কদর রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনও শোপিস হিসেবে কিনে থাকে। ঢাকা, সিলেট, বগুরা ও ময়মনসিংহের মতো দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অর্ডার পেয়ে থাকি। চাহিদা থাকায় সরবরাহ দিতেও হিমশিম খেতাম একসময়; কিন্তু মাঝখানে দক্ষ কারিগররা অন্যপেশায় চলে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যায়। চাহিদা থাকার পরও ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারিনি। পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও নতুন কারিগর তৈরি করতে হয়েছে। করোনার কারণে এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। পর্যটন কেন্দ্র আবার চালু হলে বিক্রি মোটামুটি হবে আশা করি। তবে সম্প্রতি বাঁশের দাম ও রঙের খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। হস্তশিল্প তৈরিতে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলে উৎপাদন আরও বাড়ানো যেত বলে মংনু মারমা জানান।
এদিকে শহরে মধ্যমপাড়া এলাকায় হস্তশিল্প বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘সেতুলি’ কর্ণধার রমিং লিয়ান বম বলেন, তার দোকানেও বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের ভালো চাহিদা রয়েছে। পর্যটকরা আসলে শুধু বাঁশের তৈরি করা জিনিস কিনতে চায়। অন্যগুলো কম বিক্রি হয়। তবে এগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি হলেও নিজেদের প্রোডাক্ট না। টংছি মিঙ নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়।
হস্তশিল্প উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উদ্যোগে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা দিয়ে থাকেন বলে জানালেন বিসিকের জেলা উপ-ব্যবস্থাপক হাসান আসিফ চৌধুরী।
তিনি জানান, হস্তশিল্প সম্ভাবনাময় একটি শিল্পখাত। এমনকি মানসম্মত হস্তশিল্পের জিনিস দেশের বাইরেও রফতানি হয়ে থাকে। এখানে যেসব হস্তশিল্পের উদ্যোক্তা রয়েছে তাদের কোনো সমস্যা থাকলে সহযোগিতা দেওয়া হবে। এ ছাড়া হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত সমিতি এবং নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয় বলে জানান তিনি।