চার নারী বদলে দিলেন এলাকার নাম

মো. রাসেল ইসলাম, দিনাজপুর

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ০৩:৫৫ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম

ভাবির হোটেল

ভাবির হোটেল

ভাবির মোড়, এই মোড়ে রয়েছে চারটি খাবার হোটেল। যে হোটেলগুলোতে ভোজনরসিকদের খাবার পরিবেশন থেকে টাকা নেওয়া পর্যন্ত সব কাজ করেন চার মহিলা। খাবার খেতে আসা সবাই তাদের ভাবি বলে সম্বোধন করায় ওই মোড়টির নাম হয় ভাবির মোড়। 

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর ছাতইল ইউনিয়নের রাণীর ঘাট পরমেশ্বরপুর একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম। এই রাণীর ঘাট মোড়েই রয়েছে চারটি খাবার হোটেলসহ ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা। স্থানটি সীমান্তবর্তী হলেও সেখানে পার্শ্ববতী ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ মোটরসাইকেল ব্যক্তিগত গাড়ীতে করে খাবার খেতে আসেন। এখানে দেশীয় হাঁসের মাংস বেশ সস্তায় পাওয়া যাওয়ার কারণেই জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে।

বোচাগঞ্জ এবং বিরল উপজেলা শেষ অংশে টাঙ্গন নদের পূর্বদিকে ভাবির মোড়ের অবস্থান। পূর্ব পশ্চিম রাস্তার দুই ধারে দুটি করে মোট চারটি ভাতের হোটেল। রাস্তার উত্তর পাশের দুই ভাইয়ের স্ত্রী এবং দক্ষিণ পাশে দুই বোন ভাতের হোটেল ব্যবসা করেন। হোটেলগুলোর নাম ভাবি হোটেল-১, ভাবি হোটেল-২, ভাবি হোটেল-৩ এবং বেলি ভাবির হোটেল। নিরিবিলি পরিবেশে মোটরসাইকেল যোগে এবং প্রাইভেট কারে করে খেতে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। 

স্থানীয়রা জানান, একদিকে দেশি হাঁসের মাংসের মুখরোচক খাবার অন্যদিকে টাঙ্গন নদীর ওপরে রাবার ড্যামের। মূলত এই দুই কারণেই বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। এখানে ব্যবসা পরিচালনা করছেন জালাল উদ্দিনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৪০), জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মাসতারা বেগম (৪৫) হুচেন আলীর স্ত্রী বেলী আক্তার (৪০) নাজমুল হকের স্ত্রী মেরিনা পারভীন (৩৭)। এ ছাড়াও এখানে আরও ৮টি পানদোকান এবং বিভিন্ন ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

জানতে চাইলে তাসলিমা বলেন, এখানে প্রতিটি খাবার হোটেলে প্রায় গড়ে ১৫-২০টি দেশি হাঁস রান্না করা হয়। হাঁসের মাংসের সঙ্গে থাকে নদীর ছোট মাছের চটচটি ও শুকনো মরিচে করা মাছ ভর্তা, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা ও শাকভাজি। ৫০-৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয় হাঁসের মাংসের প্রতি প্লেট। ভর্তা ১০ টাকা, শাক ১০ টাকা আর মাছ চটচটি ৩০-৪০ টাকা এবং ভাত ১০ টাকা।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর আগের শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে ট্রাকে করে বালু তোলা হতো। তখন এই এলাকাটিতে (রানীর ঘাট) কোনো বসতি ছিল না। সেই সময় নদী থেকে দিনে ৫০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ট্রাকে বালু তোলা হতো। বালু তোলার শ্রমিকদের জন্য তখন কাজের ফাঁকে একটু চা-নাস্তা করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়। ওই ঘাটের পাশেই পাঁচতারা গ্রামের বাসিন্দা জালালউদ্দিন। বালু তোলা শ্রমিকদের অনুরোধে সেখানে ডাল-ভাত-ডিম দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সেই থেকে ধীরে ধীরে রাণীর ঘাট নাম বদলে হয়েছে ভাবির মোড়। 

হোটেল ব্যবসায়ী বেলি বেগম বলেন, এখানে আমাদের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক। আমরা সবাই পরিবার নিয়ে ভালো আছি। বেশ ভালো লাগে যখন দুর থেকে মানুষ খাবার জন্য এসে ভাবি ভাবি বলেন। যে হোটেল তাদের পছন্দের সেই হোটেলেই তারা তৃপ্তি সহকারে খাবার খায়। 

স্থানীয় ৫ নম্বর ছাতইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, ভাবির হোটেলে হাঁসের মাংসের রান্নার কারণে এলাকাটির নাম ভাবির মোড় হিসেবে মুখে মুখে চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। এখন রাণীরঘাট পরমেশ্বরপুর নাম বদলে ভাবির মোড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh