মহেশখালীর পানচাষিদের ক্ষোভ

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ০৪:৩২ পিএম

মিষ্টি পান উৎপাদন

মিষ্টি পান উৎপাদন

কক্সবাজারের অদূরে ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী মিষ্টি পান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সাড়ে ১৮ হাজার একর জমিতে প্রতি বছর মিষ্টি পানের চাষ করে অর্ধ লক্ষাধিক পানচাষি। এ পান দেশীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রফতানি হচ্ছে। প্রাচীন উপমহাদেশের প্রাগৈতিহাসিক রাজ দরবারে এই মহেশখালীর মিষ্টি পানের কদর ছিল খুব বেশি; কিন্তু দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতির কারণে পানচাষির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। পান একটি অন্যতম কৃষি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও পান চাষিরা যুগ যুগ বছর ধরে অবহেলিত। পানচাষিরা মনে করেন, সহজশর্তে সরকারি ঋণের ব্যবস্থা না করা হলে এই মিষ্টি পান উৎপাদন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। 

মহেশখালী দ্বীপের কালার মারছড়া ইউনিয়নের ফকির জুমপাড়া গ্রামের আবদু রহমানের পুত্র মাহবুবুর রহমান একজন সফল পানচাষি। তার রয়েছে ১ একর জমিতে ৫টি পান বরজ প্রতি সপ্তাহে এই পান চাষি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার পান বিক্রি করে স্বাভাবিক সময়ে। পানের বাজার দর ওঠানামা করে বিভিন্ন সময়। পানের বাজার দর চড়া থাকলে সপ্তাহে সর্বোচ্চ লাখ টাকাও বাজারে পান বিক্রি করে উপার্জনক্ষম বলে জানান পান চাষি মাহবুবুর রহমান।

তবে মাহবুব পানচাষে নানা রকম সমস্যার কথা ও তুলে ধরেন। এই চাষ খুবই ব্যয় বহুল ও পরিশ্রমের বলে জানান তিনি। আজকাল পান বরজের উপকরণ সামগ্রীর দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে গাছ, বাঁশ, কীটনাশক, জৈবসার, শন ও লেবারসহ অন্যান্য জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে পান চাষ।

মহেশখালীর পান চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনিল কান্তি দে জানান, পান বরজের উপকরণ সামগ্রীর দাম যে হারে বাড়ছে এতে চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই ধান, গম ও পাট উৎপাদনে যেভাবে সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন সে হারে পানচাষিদের ও একই সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ পান চাষিরা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। পান চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবিতে চাষিরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে। আজও পান চাষিদের কোন দাবি পূরণ হয়নি। দেশের একমাত্র মিষ্টি পান উৎপাদনকারী মহেশখালীর পানচাষিরা সরকারের প্রণোদনা, ভর্তুকি বা সহজ শর্তে ঋণ থেকে বঞ্চিত হলে কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে পারে মিষ্টি পান উৎপাদন।

তাই মাহবুবের মতো সফল পান চাষি ও যেমন আছে মহেশখালীতে, তেমনি পূঁজির অভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়াতে পারছেন না এমন চাষির সংখ্যাও নেহায়েত কম না। কবি সাহিত্যিকরা মনে করেন বাণিজ্যিকভাবে তো বটেই প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ মহেশখালীর মিষ্টি পান। ঐতিহাসিক মৈনাক পর্বতের চতুর পাশে ঢালু জমিতে যে মিষ্টি পান উৎপাদিত হয় তা দুনিয়ার আর কোথাও হয় না। এ কারণেই মহেশখালীর মিষ্টি পান এত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে বিশ্বজুড়ে। এমনটাই মনে করেন ঐতিহাসিকরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh