নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ০৯:০০ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২১, ০৯:০৩ পিএম
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে নয় দিন ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। মঙ্গলবার তোলা ছবি। -স্টার মেইল
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার এবং ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। শুধু তাই নয় গবেষণা বলছে ঢাকায় আক্রান্তদের ৬৮ ভাগ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে (ডেল্টা) আক্রান্ত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটা একটা প্রমাণ যে সীমান্তের করোনা এখন ঢাকায় চলে এসেছে।
ঢাকায় আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি দেখে নেয়া যাক- ১৫ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ঢাকায় করোনায় মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী। ১৫ জুন ঢাকায় মারা গেছে ৬ জন, ১৬ জুন ৮, ১৭ জুন ১০, ১৮ জুন ১২, ১৯ জুন ১৪, ২০ জুন ২১, ২১ জুন ২৩ এবং২২ জুন ১৪ জন।
গত ১৯ জুন থেকে শনাক্তের হারও ঢাকায় বাড়তে শুরু করেছে- ১৯ জুন শনাক্ত হয় এক হাজার ১১৪ জন, ২০ জুন ৮২২ জন, ২১ জুন এক হাজার ২৯৪ জন ২২ জুন এক হাজার ৯৬৭জন। কিন্তু ১৮ জুন ছিলো ৪৭৩ জন।
ঢাকার চারপাশে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি ও মাদারীপুর এই সাতটি জেলায় লকডাউন শুরু হয়েছে। এর লক্ষ্য রাজধানী ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখা। যদিও খুলনা মৃত্যুহারে ঢাকাকে সাময়িকভাবে ছাড়িয়ে গেছে তারপরও ঢাকা এখনো করোনার হটস্পট। এপর্যন্ত শুধু ঢাকায় করোনায় মারা গেছে সাত হাজার ৪১৫জন। সারাদেশে মারা গেছে ১৩ হাজার ৭০২ জন। আর এপর্যন্ত ঢাকায় মোট আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৭৮জন। আর সারাদেশে আট লাখ ৬১ হাজার ১৫০ জন।
কিন্তু ঢাকার আশপাশের সাতটি জেলা লকডাউন দিয়ে সেটা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। আসেওনি কোনো বাস। ঢাকা জেলায় লকডাউন না থাকায় অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করেছে। আর ঢাকার সিটি সার্ভিস চলছে যথারীতি। তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন সবকিছুই খোলা।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় মারা গেছে ৭৬ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৮৪৬ জন। সর্বোচ্চ সংখ্যক মারা গেছে খুলনায় ২৭ জন। তবে সংক্রমণে শীর্ষে ঢাকাই রয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় আক্রান্ত এক হাজার ৪৯৬ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন, সার্বিকভাবে সারাদেশের সংক্রমণ কমাতে হবে। সেটা না করে ঢাকাকে আলাদাভাবে সুরক্ষার কোনো উপায় নেই। আর সীমান্ত এলাকা থেকে সুরক্ষা দেয়া হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আর ঢাকায় তো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে গেছে। এখন এটা ঢাকায় স্থানীয়ভাবেই ছাড়াবে।
তিনি আরো বলেন, মাদারীপুরে লকডাউনের আগের দিন একটি নির্বাচন হলো। সেখানে হাজার হাজার লোক জড়ো হলো। তাহলে এই লকডাউনের কী মানে হয়!
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, যেখানেই সংক্রমণের হার ১০ ভাগের বেশি সেখানেই সংক্রমণ কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আলাদাভাবে কোনো এলাকা নয়।
এদিকে আইসিসিডিআরবি এর এক গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার কিছু বস্তি এবং সংলগ্ন এলাকায় ৭১ ভাগ মানুষের শারীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামে ৫৫ ভাগ। কিন্তু ডা. মুশতাক বলেন, এটা সাময়িক জরিপ। কারণ তিন মাস পর এই অ্যান্টিবডি থাকে না। আর আক্রান্ত হয়ে অ্যান্টিবডি হওয়া অনেক মানুষের মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে। তাই দ্রুত সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে সাত জেলায় কঠোর লকডাউন দেয়া হলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। আগের চেয়ে মানুষের চলাচল বেড়েছে। অটো, মিশুক ও বাজারের সকল দোকান খোলা অবস্থায় দেখা গেছে। শাহরে দেদারছে যাত্রী নিয়ে চলছে অটো ও মিশুক। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খোলা ছিলো। কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। মুন্সীগঞ্জ থেকে যে কোনো থানায় যাতায়াত করা ছিল খুবই স্বাভাবিক। কোনো ধরনের লকডাউনের প্রভাব পড়েনি জনজীবনে।
তবে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, এভাবে চলতে দেয়া যাবে না। লকডাউন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রত্যেকটি প্রবেশমুখে পুলিশ প্রশাসন টহল দিচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত রয়েছে। তারপরেও এভাবে আর দোকান গাড়ি চলতে দেয়া হবে না। সকল কিছু বন্ধ করে দেয়া হবে।