নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২১, ০৯:২৭ এএম | আপডেট: ২৩ জুন ২০২১, ০৯:২৯ এএম
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কোভিড-১৯ টিকা জনসাধারণের পণ্য হিসেবে নিশ্চিত করার ব্যাপারে জাতিসংঘকে দৃঢ় অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি; যখন কিনা মনে হচ্ছে করোনার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় টিকা অন্যদের কাছে ‘শোষণের হাতিয়ার’ হয়ে ওঠেছে। কিছু দেশ অন্যান্য দেশকে টিকা দেয়ার বিনিময়ে বিভিন্ন সুবিধা চাইছে।
তিনি বলেন, টিকা নিয়ে বড় বড় পণ্ডিতেরা কত কি বললেন না? এই যে, জি-৭ দেশগুলো কিছুদিন আগে বৈঠক করে বলেছে, তারা ১০০ কোটি ডোজ টিকা দরিদ্র দেশগুলোকে দেবে। এ নিয়ে শুধু গল্পই শুনতেছি। কিন্তু দেয়ার জন্য তো কোনো আগ্রহ দেখি না। আমি বলি ‘মুলা’ দেখাচ্ছে সবাই। তবে টিকার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার (২২ জুন) মন্ত্রণালয়ে নিজের কক্ষে টিকা প্রাপ্তি নিয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে এরকম মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সপ্তাহব্যাপী নিউইয়র্ক সফরে স্বল্পোন্নত উন্নয়ন দেশ (এলডিসি) ও রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রতিটি সভায় কোভিড ও টিকা সমস্যা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। ধনী দেশগুলো ঢাকাকে ‘আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না’ বলে টিকা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে, কিন্তু তারা এখনো বাংলাদেশকে তা দিতে পারেনি। কিছু ক্ষেত্রে টিকাসমৃদ্ধ দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে বিশ্বব্যাপী ফোরামের নির্বাচনের মতো বিশেষ ইস্যুতে তাদের সমর্থন জানাতে বলেছে।
তিনি নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, এটি কোভিড টিকা দিয়ে ট্যাগ করা উচিত নয়। এটি স্বাধীন হওয়া উচিত।
টিকা নিয়ে কোনো সুখবর আছে কিনা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে সবাই। সবচেয়ে বড় সমাধান হবে যখন আমরা টিকা তৈরি করব। নিজেরা টিকা তৈরি করলে আর অন্যের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। ধনী দেশগুলো টিকা নিয়ে বসে রয়েছে। তাদের যত জনসংখ্যা তার থেকে তাদের কাছে টিকা বেশি রয়েছে। টিকা এখন দর কষাকষির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন একটা মজার জিনিস। সবাই আমাদের কাছে টিকা বিক্রির জন্য আসছে। সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গায়ক, ব্যবসায়ী সবাই এখন টিকা ব্যবসায়ী। অনেকে বলে টিকা দেব, কিন্তু কেউ দেয় না। আবার দেয়ার সময় জিজ্ঞাসা করে যে, অমুক জিনিসে আমাকে সমর্থন দেবেন কিনা। এখন দেখা যাচ্ছে, এটিকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে সাক্ষাতকালে মোমেন বলেন, তিনি মহাসচিবকে এই টিকা যাতে জনসাধারণের পণ্য হয় তা নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান এবং এটি অবশ্যই সবার জন্য সাশ্রয়ী হতে হবে। তিনি মহাসচিবকে সামনে কিছু উদাহরণ রেখে বলেছেন যে কিছু দেশ তাদের জনসংখ্যার আকারের চেয়ে বেশি টিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, এখানে কোনো বৈষম্য থাকা উচিত নয়। দুর্ভাগ্যবশত ধনী দেশগুলো তাদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টিকা রাখছে এবং টিকার মেয়াদ শেষ হওয়ারও উদাহরণ রয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে রেখে ‘প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে’ তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
মিয়ানমার সম্পর্কিত জাতিসংঘের নতুন সাধারণ পরিষদের (জিএ) প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে।
গত ১৮ জুন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মিয়ানমারের বর্তমান গণতান্ত্রিক সংকটের উপর আলোকপাত করে ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি’ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। এতে ১১৯ টি ভোট পক্ষে, একটি ভোট বিপক্ষে পড়ে। এছাড়া ভোটে ৩৬ টি দেশ বিরত ছিল।
এই বিধিমালাটিতে মিয়ানমারের বর্তমান গণতান্ত্রিক সংকটকে সম্বোধন করা হয়েছে যার মধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা এবং তার রাজনৈতিক নেতার আটকের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে আসিয়ানের কেন্দ্রীয় ভূমিকা স্বীকৃতি প্রদান করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানানো হয়।
যেহেতু এই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোন সুপারিশ বা পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তাই বাংলাদেশ এ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরাও একটি কঠোর বিবৃতি দিয়েছি। তারা উপলব্ধি করুক যে প্রত্যাবাসন আমাদের জন্য একটি বড় বিষয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ বিষয়ে বলেছে, এই প্রস্তাবে সম্মিলিত উপায়ে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানের সংকল্পেরও অভাব রয়েছে।