মাধবী ফুটেছে ওই

মোকারম হোসেন

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ০৮:৫৯ এএম

মাধবী

মাধবী

বাংলাসাহিত্যে মাধবী বিখ্যাত একটি ফুল। রবীন্দ্রনাথই তার ‘কথা’ কবিতায় মাধবীকে বিখ্যাত করে তুলেছেন। না হয় কে জানতো মাধবীর কথা! তবে এই বিখ্যাত ফুলটি বাস্তবে অনেকটাই অধরা। কারণ ফুলটি বেশ দুর্লভ। ফোটেও খুব অল্প সময়ের জন্য। 

তবে আমাদের দেশে ভুল করে মধুমালতী বা মধুমঞ্জরীকে মাধবী নামে ডাকা হয়। মধুমঞ্জরী সর্বত্র দেখা যায়; কিন্তু প্রকৃত মাধবী এখনো অনেকটাই অচেনা রয়ে গেছে। মাধবী আছে গানে-আর বনে। 

জানা মতে, রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেনে কয়েকটি গাছ আছে। আর আছে বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের বনে। তবে সংখ্যায় কম। মাধবীর এমন স্তুতিবাক্য ছড়িয়ে দেবার নেপথ্য রবীন্দ্রনাথ মাধবী নিয়ে বেশ কয়েকটি পঙ্‌ক্তি রচনা করেছেন। তারই দু’একটি- ‘মাধবী হঠাৎ কোথা হতে এল ফাগুন-দিনের স্রোতে/এসে হেসেই বলে ‘যাই যাই যাই। বসন্তের জয়রবে/দিগন্ত কাঁপিল যবে/ মাধবী করিল তার সজ্জা।’ 

‘মাধবী সহসা তার/সঁপি দিল উপহার/রূপ তার, মধু তার গন্ধ।’ এখানে মাধবীর রূপ এবং গন্ধ দুটিরই প্রসঙ্গ আছে। অন্যত্র আছেÑ বসন্তের মাধবী মঞ্জরী/মিলনের স্বর্ণপাত্রে সুধা দিল ভরি।’ তবে এই পঙ্‌ক্তিতে মাধবীর পরিপূর্ণ রূপ ফুটে উঠেছে বলে মনে হয়-‘মাধবী বনের মধুগন্ধে মোদিত মোহিত/মন্থর বেলায়।’ 

মাঘ মাসের কয়েকটা দিন হাতে থাকতেই দু’এক স্তবক করে মাধবী (Hiptage benghalensis) ফুটতে শুরু করে। মাধবীর পরিপূর্ণ উচ্ছ্বাস মাত্র কয়েক দিনের। এ ফুলের প্রস্ফুটন স্বল্পকালীন। যে কটি বৃক্ষ আমাদের একেবারে নিজস্ব তার মধ্যে মাধবীলতা অন্যতম। কারণ বৈজ্ঞানিক নামের শেষাংশ benghalensis বাংলার স্মারণিক। 

এটি কাষ্ঠলতার গাছের মতো, ছড়ানো, পত্রনিবিড়, শীতে পাতা ঝরায়। এর পাতা ভল্লাকার, ১০ থেকে ১৬ সেমি লম্বা, পুরু, বিন্যাস বিপ্রতীপ। ফুল আসে বসন্তের বার্তাবহ হিসেবে। প্রায় নিষ্পত্র ডাল ভরে থোকা থোকা সুগন্ধি সাদাটে প্রায় ৩ সেমি লম্বা ফুল ফোটে। পাপড়ি সংখ্যা ৫টি; ৪টি সমান ও সাদা, একটি ছোট ও হলুদ। ভারি সুগন্ধি, ভ্রমরাও উতলা হয়। 

শুকনো ফলগুলো ভারি মজার- তিনটি পাখা মেলে দিব্যি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। 

- প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh