ইডিপাস

মণিকা চক্রবর্তী

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ০৩:০৯ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

এক.
মাছ ধরার বড়শিতে কয়েকটা কেঁচো গেঁথে নিয়ে বাড়ির পাশের ডোবাটায় পা বাড়াতেই সদরুল বুঝে নেয় আম্মুর সঙ্গে নানুর আবার ঝগড়া বেঁধেছে। কয়দিন পরপরই ঝগড়া বাঁধে। টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া। আম্মু শহর থেকে প্রতি সপ্তাহেই গ্রামে আসে। সদরুলের দেখাশোনার জন্য নানুর হাতে টাকা দিয়ে যায়। নানু কোনোদিনই ঠিক-ঠাক টাকার হিসাব দিতে পারে না। এই নিয়ে প্রায় সময়ই ঝগড়া হয়। আম্মু বলতে থাকে, ‘তোমার লোভ বেশি। কত করে কইলাম সদরুলরে স্কুলে ভর্তি করাও ! করাও নাই কেন? ওর পরনের কাপড় সবগুলো ছিঁড়া। নতুন জামা-প্যান্ট কিনার টাকা দিলাম। কই? আমার সব টাকা তুমি তোমার সংসারে লাগাইলা কেন?’

নানুও বলতে থাকে, ‘আমার জমিই আছে এক টুকরা। গত বছর থেইকা জমিডার লাইগা মামলা চালাই যাইতাছি। টাকাডা এর লাইগ্যাই খরছ হইয়া গেছে।’ 

বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে সদরুল শোনে তার আম্মু কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘এই যাবৎ গতর দিয়া যা কামাই করছি সব তুমি শেষ কইরা ফালাইলা। তোমার লোভ এত বেশি! একবারও ভাবলানা আমার কথা! আমার সদরুলের কথা ! তারে আমি আমার কাছে রাখতে পারি না বইলা তুমি সুযোগ নিতাছ! দুইন্যায় সবাই সুযোগ নেয়। সদরুলের বাপে নিছে, বেবাক মাইনষে নিছে। এহন তুমিও নিতাছ! ’

সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরির পর বিকেলের একটু আগে বাড়ি ফিরে সদরুল দেখে তার আম্মুর মনটা খুব খারাপ। সদরুলকে বাড়িতে ফিরতে দেখে অনেক কষ্টে যেন খাট থেকে নেমে উঠানে এসে দাঁড়ালো। বলল, তার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথা ব্যাথার বড়ি লাগবে। সদরুল কী করবে ভেবে পায়না। তার বুকের ভিতরে ড্রিম ড্রিম আওয়াজ বাজে। আম্মু যেন অনেক কষ্টে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এই মুহূর্তটিকে। সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। সদরুল ঝপ করে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে বারান্দার ওপর

সদরুল এসব শুনতে শুনতে ডোবার দিকেই এগুতে থাকে। সেখানে অপেক্ষা করে আছে তারই সমবয়সি কয়েকটি ছেলে। বয়স আট - দশের মতো। কড়া রোদ উঠেছে। জঙ্গলের উপর পড়ে আছে রোদের ফালি। সে ভাবছে ডোবার ওপরে ভেসে থাকা শ্যাওলাগুলোর কথা। তার নিচে অনেক ছোট-বড় মাছেরা খেলা করে; কিন্তু তার কানের ভিতর আম্মুর কান্না। আর লোভ শব্দটা কেবলই কানে বাজছে। আম্মু যে লোভ লোভ করতেছে, লোভ করা কী খারাপ! তারও অনেক লোভ আছে! আপাতত সে একটা বড় মাছ ধরার লোভ করছে। পাশের বাড়ির মইনুল সেদিন দেড় কেজি ওজনের একটা রুইমাছ ধরেছিল। কী সুন্দর মাছটা! অনেকক্ষণ বড়শি ফেলে রাখার পর কটাশ করে ধরেছিল। পাড়ে ওঠানোর পর লেজের কী ঝাপটানি! রোদ পড়ছিল মাছটার পিঠে। ঝগড়ার সংলাপ কানে নিতে নিতেই সদরুল পৌঁছে যায় ডোবার কাছাকাছি। অদৃশ্য লোভের টানে। আহা ! সেও যদি মইনুলের মতো একটা বড় মাছ মারতে পারত, তাহলে আজকের এই ঝগড়া থেমে যেত। নানু মাছটাকে সুন্দর করে ভাজত। কতদিন মাছ ভাজা দিয়া মরিচ ডইল্যা ভাত খায় না। ভাবতে ভাবতে তার জিভে জল আসে। অভাবের মধ্যেই থেকেছে ছোটবেলা থেকে। ভালো খাবার মোটেই জোটেনি। আজ যদি জুটে যায় একটা বড় রুই বা কাৎলা! একটা অসম্ভব উদ্বেগ নিয়ে সে পৌঁছে যায় ডোবার ধারে। 

শান্ত ডোবাটির পাড়ে কলাপাতা বিছিয়ে স্থির হয়ে বসে আছে মইনুল। করিম আর রশীদও বসেছে মইনুলের পাশাপাশি। ওদিকে চোখ পড়তেই সদরুল চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আইজ স্কুল যাবি না তোরা?’

‘না,যামুনা। অঙ্ক স্যারে খালি মারে। আব্বায়ও কাইল রাইতে আমারে মারছে।’ -মুখ কালো করে বলতে থাকে করিম। 

ক্যান!

আম্মার লগে কী লইয়া জানি ঝগড়া বাঁধছিল! হক্কলডিরে ধইরা মাইর দিছে। তয় আমিও পরতিশোধ লইছি।

কেমনে? 

আইজকার স্কুল কামাই করলাম। দুফরে বাইত যামু না। আব্বুর জমাইন্যা ট্যাহার থেইকা একশ ট্যাহা লইছি। চল, বাজারে যাই। এহানে বইয়া থাইক্কা কুন লাভ নাই। একখান মাছও ঠোক্কর দিব না।

করিমের সঙ্গে গলা মিলিয়ে মইনুল ও রশিদও বলে চল যাই। 

সদরুল চুপ করে থাকে। এক মুহূর্ত পরেই সে বলে, তোরা যা। 

ক্যান, তুই যাবি না। 

যামু! এট্টু পর। 

সদরুল বসে থাকে ডোবার ধারে। জলের ভিতর বুদবুদ শব্দ। সে দেখতে থাকে তার ছিপটির দিকে। আশে-পাশে কেউ নেই। মায়ের ঝগড়ার শব্দ এখন আর কান আসছে না। তবু তার ছোট্ট বুকের ভিতর অবিরাম বাজতে থাকে মায়ের কান্নার শব্দ, গোঙানি, আর মাঝে মাঝে জান্তব চিৎকার। একটা ফড়িং এসে বসে তার ছিপের উপর। তার ডানাগুলো নড়ে। আবার থিতু হয়ে বসে থাকে ছিপের ওপর। সদরুলের মতই ধ্যানমগ্ন হয়। একটা স্তব্ধতা। তবু সদরুলের মনে হয় স্তব্ধ জলের ভেতর থেকে এখুনি বের হয়ে পড়বে কোনো এক আলাদিনের দৈত্য! একটু ভয় করে ওঠে যেন! কেউ নেই চারপাশে। 

ছিপটা তুলে রেখে একা একা সে হাঁটতে থাকে বাজারের পথে। সঙ্গীদের খোঁজে। পেটের ভেতর ক্ষিধেটা নড়ন-চড়ন দিয়ে ওঠে। নিজে নিজেই ভাবে, করিম কী কামডা করল! ট্যাহা চুরি! ভালা না খারাপ! আমার বাপ থাকলে আমিও ট্যাহা চুরি করতাম! ওর বাপ আছে। বাপের থেইক্যা ট্যাহা চুরি করছে। আমার তো বাপ নাই, মা থাইক্যাও নাই। আসলে কেউই নাই। কেউ নাই! নানু আছে, খালা আছে। ওরা কি কেউ না? অনেকে আছে চারধারে, তবু যেন কেউ নাই। একা চলতে চলতে হঠাৎ এই সত্যটি তার মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। সে দ্রুত হাঁটতে থাকে বাজারের দিকে, সঙ্গীদের খোঁজে।


সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরির পর বিকেলের একটু আগে বাড়ি ফিরে সদরুল দেখে তার আম্মুর মনটা খুব খারাপ। সদরুলকে বাড়িতে ফিরতে দেখে অনেক কষ্টে যেন খাট থেকে নেমে উঠানে এসে দাঁড়ালো। বলল, তার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথা ব্যাথার বড়ি লাগবে। সদরুল কী করবে ভেবে পায়না। তার বুকের ভিতরে ড্রিম ড্রিম আওয়াজ বাজে। আম্মু যেন অনেক কষ্টে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এই মুহূর্তটিকে। সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। সদরুল ঝপ করে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে বারান্দার ওপর

দুই.
সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরির পর বিকেলের একটু আগে বাড়ি ফিরে সদরুল দেখে তার আম্মুর মনটা খুব খারাপ। সদরুলকে বাড়িতে ফিরতে দেখে অনেক কষ্টে যেন খাট থেকে নেমে উঠানে এসে দাঁড়ালো। বলল, তার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথা ব্যাথার বড়ি লাগবে। সদরুল কী করবে ভেবে পায়না। তার বুকের ভিতরে ড্রিম ড্রিম আওয়াজ বাজে। আম্মু যেন অনেক কষ্টে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এই মুহূর্তটিকে। সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। সদরুল ঝপ করে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে বারান্দার ওপর। নানু কই! আওয়াজ পাইনা কেন? আইজ কী কুন খানা -দানা নাই! সদরুল ভাবে। এদিক -ওদিক তাকায়। বেবাক কি ঘুমায় নাকি! কৌতূহল নিয়েও সে বারান্দায় বসে এক টুকরো আকাশ দেখে। আলো কমে আসছে। সন্ধ্যার একটু আগে আম্মু বলল, এই এক কাপড়েই আজ তার সঙ্গে সদরুলকে শহরে চলে যেতে হবে। সদরুল তার আম্মুর চোখে চোখ রেখে চেয়ে থাকে। নতুন এই সিদ্ধান্তকে বুঝে নিতে চায়। আম্মুর চোখ স্থির। চেহারায় জেদ আর বিবর্ণতা। সদরুল নির্দেশ মানতে দেরি করে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবার আকাঙ্ক্ষা হঠাৎ ধেয়ে আসে। তাছাড়া চারপাশটা এত স্থবির লাগছে যে, সে যেন পালাতেই চায়। অনিশ্চিত জায়গা। সেখানে কী মাছ মারতে পারবে! স্কুল আছে! কী জানি! অনিশ্চিতের মধ্যেই সে মায়ের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে যেতে থাকে। যাবার কালে নানু আর খালা এসে হঠাৎ দাঁড়ায়। সদরুল এগোতে থাকে। পেছনে পড়ে থাকে অদৃশ্য সুতোর টান। 

বাসের খোলা জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকায় সদরূল। বাসের গতির সঙ্গে সঙ্গে উড়তে থাকে তার মন, চঞ্চলতা। এখন তার ভালোই লাগছে। রাস্তার পাশের ঘন গাছপালাগুলো যেন অদ্ভুত! কেমন ভূতের মতো! গাছগুলোর পেছন থেকে এখুনি যেন বের হয়ে আসবে কালো কোনো জন্তুর মাথা! উচ্চস্বরে বাসের কন্ডাক্টরের চিৎকার, চারপাশে এত লোকজন,হৈ-চৈ। তবু সে টের পায় নিজের ভেতরে এক স্তব্ধতা। পাশে বসে থাকা তার মা বাসের দুলুনিতে ঘুমে ঢলে পড়ছে। সত্যিই কি সে তার মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে! কেমন যেন দ্বিধাগ্রস্ত লাগে তার!

বাস থেকে নেমে বাসস্ট্যান্ডে একটা পরিচিত রিকশায় উঠে বসে ওরা দু’জনে। তার আম্মুর মুখ বোরখায় ঢাকা। তবু রিকশাচালকটির তার আম্মুকে চিনতে ভুল হয় না, এমনকি শহর ছাড়িয়ে একদম নিরিবিলিতে যেখানে গড়ে উঠছে কোনো আবাসিক এলাকা, সেখানকার কোনো নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে এই অন্ধকার রাত্রিতেও কোনো কথা না জিজ্ঞেস করেই তাদের দু’জনকে ঠিক-ঠাক নিয়ে আসে। সদরুল একটু অবাক হয়, কেমন যেন ভয় করে। ভয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আম্মুর হাতটি। গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বয়স্ক দারোয়ান। সঙ্গে একটা কুচকুচে কালো বিড়াল। সবুজ চোখ দুটি জ্বলছে।

দোতলা এই বাড়িটির কয়টি রুম আছে, সদরুল জানে না। এখানে প্রতিটি রুমেই অনেক মেয়ে থাকে। তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে ছাদের এক ছোট্ট ঘরে। এ বাড়িতে কোন রান্না-বান্না হয় না। তিনবেলার খাবার আসে হোটেল থেকে। সে একলাই পড়ে থাকে ছাদের ঘরে। আর পেট ভরে খায়। এখানে খাওয়ার অভাব নাই। জামা -কাপড়ের অভাবও নেই। তবু তার শান্তি লাগে না। ছাদের একলা ঘরে ঘুমাতে ভয় লাগে; কিন্তু আম্মুর ধারে যাওয়া তার মানা। কেন? নিজের মনেই তার হাজার প্রশ্ন? মাঝে মাঝে আম্মুর ঘরের কাছে এলে, আর একজন খালা এসে বলে, ‘এখন যাইও না। তোমার আম্মুর ঘরে লোক ঢুকছে।’ ওই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করে। তার মনে হয়, সে ভেতরে ভেতরে জোরে জোরে চিৎকার করছে! কিন্তু কী এক অজানা কারণে তার আর্ত চিৎকারটা বের হয়ে আসছে না। এই যে খালা, মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে এখান থেকে সরে যেতে বলছে, সেও নিশ্চিতই শুনছে তার আর্তনাদ। তবুও সে ঠোঁটে লিপস্টিক মেখে একই কায়দায় দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। তার কেবলই কষ্ট হয়। সে মুঠি শক্ত করে। এক ঘুষিতে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে সবকিছুই। 

ছাদের ঘরে একলা শুতে তার ভয় করে বলে, আম্মু আর খালা দু’জনে মিলে সিদ্ধান্তে আসে, এখন থেকে সদরুল দারোয়ান চাচার সঙ্গেই ঘুমাবে। সদরুল জলভরা চোখে মেনে নেয় এই সিদ্ধান্ত; কিন্তু দু’একদিন পরেই সদরুল টের পায়, বিছানায় কালো বিড়ালটির নিজস্ব থাবা। সে ঘুমুতে পারে না। ভয়ে ভয়ে চোখ বুজে থাকে। আধো স্বপ্নে আর ঘুমের ভিতর দারোয়ানের কালো বিড়ালটাই নাকি তার প্যান্ট খুলে ফেলবার চেষ্টা করছে? বিড়াল! সত্যিই কী! সেই সবুজ চোখের কালো বিড়ালটাই! ঘুমের মধ্যে চুপচাপ অন্ধকারে উদ্ভ্রান্তের মতো জেগে উঠে সে দেখতে পায়, দারোয়ান চাচা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে তার বিছানায় বসে আছে। হঠাৎ অতর্কিতে সদরুলকে জেগে উঠতে দেখে দারোয়ান চমকে যায়। খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘গরম লাগছিল, হের লাইগা বেশরম হইছি।’ তারপর সদরুলের ভাবনাকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দেবার জন্য বলে উঠে, ‘তুই বেলুন দিয়া খেলবি? আমার কাছে অনেক বেলুন আছে। নিবি! ’

সদরুল দেখে এক বড় প্যাকেটের ভিতর থেকে তাকে একটি বেলুন বের করে দিচ্ছে দারোয়ান চাচা।

সদরুল কন্ডমের প্যাকেটকে বেলুন বলেই জানে। দুপুরে ছাদে বসে সে বেলুন নিয়ে আনমনে খেলে। বেলুনটা ফুলিয়ে সে এর মাথার দিকটা নিচের দিকে ডুবিয়ে দেয়। তার ওপর একটু জল দেয়। বেলুনের গায়ে বাতাস লাগে আর জল টলমল করে। ভারী আনন্দ হয় সদরুলের; কিন্তু খেলতে খেলতে দীর্ঘ স্বপ্নের মতো রাতের বেলার সেই কালো বিড়ালের রহস্যে সে ঢুকে পড়ে। ওর মাথায় ভিড় করে অনেক প্রশ্ন।

এভাবে কয়েকদিন যাবার পর, একদিন রাতে হঠাৎ অনেক পুলিশ আসে এই বাড়িটিতে। রাতের অন্ধকারে হঠাৎ অনেক চিৎকার চেঁচামেচি। অনেক মেয়ে, অনেক পুরুষের ভয়ার্ত চেহারা। সে তার আম্মুকে পুলিশের পায়ে পড়ে কাঁদতে দেখে। সদরুল অর্ধেক ঘুম চোখে নিয়ে মধ্যরাত্রিতে এসব দেখে। খালাদের শরীরে কাপড় নাই, তার আম্মুর শরীরের কাপড় না থাকার মতোই। তার পাশে দু’জন লোক একেবারেই উদোম গায়ে। তিনজনই পুলিশের পায়ে পড়ে; কিন্তু পুলিশের কোনো দয়া হয় না। সদরুলকে চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বলে, এট্ট্যুক পোলারেও ব্যবসা শিখাইছস! এহনি তোগো সবটিরে জেলে ভরুম।’ কেউ কোনো কথা বলবারই সুযোগ পায় না। একে একে সবাইকে জোর করে ধরে বেঁধে পুলিশের জিপের পিছনে তোলা হয়।

জেলখানায় করুণ অবস্থার মধ্যে বসে বসে সদরুল গ্রামের সেই শ্যাওলা ভরা ডোবাটার কথা ভাবে। আবছা আবছা জলের তরঙ্গে সে যেন স্পষ্ট দেখতে পায় তার হঠাৎ বড় হয়ে ওঠা, বুঝতে চেষ্টা করে তার জন্মরহস্য। অনেক প্রশ্নের উত্তর সে নিজে নিজেই পেয়ে যায়। এখানে জেলখানার ভেতরের অন্ধকার পৃথিবীতে সে তাবৎ অন্ধকারকে দেখে ফেলে। দেখে জরায়ুর অন্ধকার। দেখে ফেলে অনেক মৃত্যু, অনেক অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সত্য। তবু সে ক্রমেই অস্পষ্ট শ্যাওলায় ঢাকা আবছা জলের তরঙ্গকে আরেকবার ছুঁতে চায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh