ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ০৩:২৬ পিএম
প্রিটোরিয়া নিউজ মে মাসে গোসিয়াম সিথোলার ছবিটি তুলেছিল। ছবি : বিবিসি
দক্ষিণ আফ্রিকা এক নারী এই মাসের শুরুর দিকে একসাথে ১০টি সন্তান জন্ম দেয়ার যে দাবি করেছেন, সেটি সত্যি নয়। দেশটির সরকারি এক তদন্তে এতথ্য উঠে এসেছে।
প্রাদেশিক সরকার বলছে, গৌতেং প্রদেশের কোনো হাসপাতালে ডেকুপ্লেটস জন্মগ্রহণের রেকর্ড নেই। এক সাথে ১০ শিশু জন্ম দেয়াকে ডেকুপ্লেটস বলা হয়।
মেডিকেল পরীক্ষায় দেখা গেছে, গোসিয়াম সিথোল নামের ওই নারী সম্প্রতি গর্ভবতীও হননি। ৩৭ বছর বয়সী এই নারীকে মানসিক স্বাস্থ্য আইনের অধীনে এখন পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে এবং তাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
এমন একটি বানোয়াট ঘটনা উপস্থাপনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বিবৃতিতে বলা হয়নি। ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন (আইওএল), মিডিয়া গ্রুপের প্রিটোরিয়া নিউজ প্রথমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে এবং তারা রিপোর্টের তথ্যের ব্যাপারে অটল ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিথোল গত ৭ জুন রাজধানী প্রিটোরিয়ার স্টিভ বিকো একাডেমিক হাসপাতালে (এসবিএইচ) সন্তান প্রসব করেছিলেন। সেখানকার কর্মীদের যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন বলে খবরে দাবি করা হয়। ওই হাসপাতাল ও প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।
সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযোগগুলো মিথ্যা ও স্টিভ বিকো একাডেমিক হাসপাতাল ও গৌতেং প্রদেশীয় সরকারের সুনামকে ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যেই এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রিটোরিয়া নিউজের সম্পাদক পিয়েট রাম্পেদি ও আইওএল’র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিথোল তার ছয় বছরের যমজ সন্তান ও তার সঙ্গী তেবোভো সোটেটসির সাথে জোহানসবার্গের কাছে গৌতেং প্রদেশের থেম্বিসা শহরে বাস করেন। ওই শহরটিতে মূলত বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মজীবী মানুষের বসবাস।
আইওএল অনুসারে, গত ডিসেম্বরে রাম্পেদির সাথে ওই দম্পতির একদিন গির্জায় দেখা ও পরিচয় হয়। রাম্পেদির ভাষ্য মতে, মে মাসে তিনি ওই দম্পতির সাক্ষাৎকার নেন। তখন তারা বলেছিলেন যে- তারা আটটি শিশু জন্ম দেয়ার প্রত্যাশা করছেন। একটি ফটোশুটে সিথোলের বিশাল পেট দেখা গেছে।
গত ৮ জুন প্রিটোরিয়া নিউজে এক সাথে ১০টি সন্তান জন্মের ঘটনাটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে তথ্যের সূত্র হিসেবে সোটেটসিকে উদ্ধৃত করা হয়েছিল। সোটেটসি বলেছিলেন, তার সঙ্গী তাকে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে জানান যে করোনাভাইরাস নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে হাসপাতালে ঢোকার অনুমতি দেবে না।
রাম্পেদিও যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার ওপর নির্ভর করছিলেন এবং তিনি হাসপাতাল থেকে এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি।
স্থানীয় মেয়র এই জন্মের খবর নিশ্চিত করেন- তখনই বিবিসিসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম এই খবর প্রকাশ করতে থাকে। তবে এক সরকারি মুখপাত্র পরে বলেছিলেন, তারা কেবল পরিবারের কথা শুনেই গণমাধ্যমকে এই তথ্য দিয়েছেন। তাদের কেউ ওই শিশুদের দেখেননি।
খবর প্রকাশের পর ওই দম্পতি ও তাদের দাবি করা ১০ সন্তানের জন্য অনুদানের বন্যা শুরু করে। ‘থেম্বিসা ১০’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া ওই ঘটনায় আইওএল চেয়ারম্যান ইকবাল সুরভের কাছ থেকে ৭০ হাজার ডলার আসে।
তবে ঘটনাটি ধীরে ধীরে সন্দেহের উদ্রেক করে, কারণ প্রিটোরিয়া নিউজ প্রথমে হাসপাতালের নাম প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, যেখানে ওই শিশুদের জন্ম দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পরবর্তীতে গৌতেং শহরের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এই শিশু জন্ম দেয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে।
শিশু জন্ম দেয়া হয়েছে বলে দাবি করার ১০ দিন পরে, আইওএল এসবিএএইচ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে।
প্রিটোরিয়া নিউজ জানায়, ওই ঘটনার পর দম্পতির মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সিথোলের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানান সোটেটসি এবং এক সপ্তাহ পরে অনুদান দেয়া বন্ধ করতে বলেন।
এদিকে সমাজকর্মীরা সিথোলকে খুঁজে বের করেন এবং গত শুক্রবার হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় বলে গৌতেং প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
নিউজ২৪’র ফাঁস হওয়া একটি মেমোতে দেখা গেছে, রাম্পেদি সম্প্রতি আইওএলর কাছে ক্ষমা চান। ওই খবরটির কারণে প্রতিষ্ঠানটির যে সম্মানহানি হয়েছে সে কারণে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। - বিবিসি