ঢাকার সব ক্লাবে নিষিদ্ধ হচ্ছেন পরীমণি!

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ০৫:২৭ পিএম

অভিনেত্রী পরীমণি।

অভিনেত্রী পরীমণি।

ঢাকা বোট ক্লাবের ভেতরে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের ঘটনার মধ্যদিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন অভিনেত্রী পরীমণি। ঘটনার চারদিন পর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানান তিনি। এই ঘটনায় পরদিন ঢাকার সাভার থানায় পরীমনি তার লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে সেটি নথিভুক্ত করে পুলিশ। 

মামলার প্রেক্ষিতে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইম্যান্ট অ্যান্ড কালচারাল মেম্বার ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মাহমুদ কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ আরও তিন নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু এরই মধ্যে বোট ক্লাবের ভেতরে মদপান করা অবস্থায় দেখা গেছে পরীমণিকে। মদ্যপ অবস্থায় তিনি একটি বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ নেয়া নিয়ে ক্লাবটির পরিচালক নাসির ইউ মাহমুদের সঙ্গে তর্ক করছেন। এছাড়া উল্টো নাসির ইউ মাহমুদকেই তিনি ক্লাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পেয়েছেন তাতে নায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টার কোনও প্রমাণ পাননি। মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে, অভিজাত ক্লাব ও অভিনেত্রী পরীমণিকে নিয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনা হরধুম চলছে। ঠিক ওই সময় রাজধানীর গুলশানে অল কমিউনিটি ক্লাবের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরীমণির বিরুদ্ধে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় অসদাচরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ তোলা হয়। এরপর বনানী ক্লাবেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে এমন অভিযোগ (যদিও ঘটনাটি মাস ছয়েক আগে)। 

এখন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এই ঘটনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সময়ের পরীমণিকে ঢাকার অভিজাত সব ক্লাবে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছেন ক্লাব কালচার কমিউনিটির মেম্বাররা।

সূত্রটি জানায়, ক্লাব কালচার কমিউনিটি মেম্বারদের অনেকেই পরীমণিকে নিষিদ্ধ করতে দাবি করছেন। তারা বলেছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। এসব ক্লাবগুলো সমাজের অভিজাত ও সুশীল শ্রেণীর লোদের একটি কমিউনিটি। এক পরীমণির এসব আচরণের জন্য ক্লাব কালচার নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্লাবের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। ঢাকা সব ক্লাব কমিটি ও মেম্বারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকার অভিজাত ক্লাবগুলোতে পরীমণির প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

পরীমণির মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, আমরা গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি। মামলা তদন্তের প্রয়োজনে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আসামিরা অপর একটি মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ওই মামলার রিমান্ড শেষ হলে তাকে পরীমণির ধর্ষণচেষ্টার মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর বাদী পরীমণিসহ যারা সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন তাদেরও বক্তব্য নেয়া হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সেদিনের (গত ৮ জুন) ঘটনায় পুলিশ ঢাকা বোট ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। একই সঙ্গে সেই রাতে বোট ক্লাবে দায়িত্ব পালনকারী স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও স্টাফদের বক্তব্যের সঙ্গে পরীমণির অভিযোগের কোনও সাদৃশ্য পাওয়া যায়নি। ক্লাবের স্টাফরা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, পরীমণি তার সঙ্গীরাসহ রাতে ওই ক্লাবে গিয়ে স্বেচ্ছায় টেবিলে বসে খোশগল্প করতে করতে মদপান করেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর একটি বিদেশি মদের বোতল নেয়া নিয়ে সেখানে প্রথমে উচ্চবাচ্য হয়। পরে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়।

তদন্ত সূত্র জানায়, তারা ইতোমধ্যে ওই রাতের ঘটনার সময়ের খ্যাতি কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে একটিতে খোদ পরীমণি নাসিরকে গালাগাল করছেন এমন দৃশ্য দেখা গেছে। আরেকটি ভিডিওতে নাসির ইউ মাহমুদকেও উত্তেজিত অবস্থায় পরীমণিকে গালাগাল করতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে একটি ভিডিও ক্লিপে পরীমণিকে টেবিলে বসে খোশগল্প করতে করতে মদপান করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীমণি সাংবাদিকদের বলেন, কয়েক সেকেন্ডের বিভ্রান্তিকর অস্পষ্ট ক্লিপ নয়, আমি পুরো ভিডিওটি চাই। শুরু থেকেই বলে আসছি, ক্লাবের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করার জন্য। যদি কয়েক সেকেন্ড পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চয়ই পুরো ফুটেজই আছে। আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করে আবারও বলছি, দয়া করে পুরো ফুটেজ প্রকাশ করুন। সবাই সত্যটা জানুক কী ঘটেছে সেই রাতে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, পরীমণি মামলার এজাহারে ঘটনার যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন তার সঙ্গে ভিডিও দৃশ্যের কোনও মিল নেই। পরীমণি তাকে জোর করে মদের বোতল মুখে ঢুকিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু ভিডিও দৃশ্যে পরীমণিকে স্বেচ্ছায় মদপান করতে দেখা গেছে। ভেতরের এসব ভিডিও দৃশ্য এবং ঢাকা বোট ক্লাবের প্রধান ফটক ও অভ্যর্থনা কক্ষের সিসিটিভি ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

নাসির ও অমি ৫ দিনের রিমান্ডেঃ ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাভার থানায় চিত্রনায়িকা পরীমণির দায়ের করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সূত্রটি জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কামরুল ইসলাম পরীমণির দায়ের করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেফতার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৩ জুন রাতে ফেসবুক পোস্টে পরীমণি অভিযোগ করেন, ৯ জুন (বুধবার) উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা চালান ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় তিনি সাভার থানায় ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh