মালিকানাধীন জমিতে বন বিভাগের বনায়নের অভিযোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ০৭:৩১ পিএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২১, ০৭:৩২ পিএম

পঞ্চগড় মানচিত্র

পঞ্চগড় মানচিত্র

বন বিভাগ কর্তৃক ১৯৫৯ সালের প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স এর ৭ নং ও ১১ নং ধারা প্রতিপালন না করে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন উপনচৌকী ভাজনী মৌজায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে বনায়ন কার্যক্রম শুরুর অভিযোগে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।

গত মঙ্গলবার ভুক্তভোগীরা উপজেলা প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করেন।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৬৩-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৫৮০ একর জমি পতিত হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার ১০০ বছরের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বনায়ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বন বিভাগের ওপর এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে সিএস খতিয়ান ও সিএস খতিয়ান এর মালিকের নাম ব্যবহার করে এসএ রেকর্ডীয় মালিকদের নোটিশ না করেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, ১৯৫৯ সালের প্রাইভেট ফরেস্ট আইনে গেজেটভুক্ত জমিতে কীভাবে বনায়ন করা হবে তার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। আইনে বলা আছে জমির মালিক স্কিম তৈরি করে আঞ্চলিক বন কর্মকর্তাকে প্রদান করবেন।  উক্ত স্কিম আঞ্চলিক বন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে জমির মালিকের দায়িত্ব ও তত্ত্বাবধানে সরকারি খরচে বনবিভাগ বনায়ন করবে। বনায়নকৃত গাছ বিক্রয় যোগ্য হলে তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সরকারি খরচ বাদ দিয়ে লভ্যাংশ সরকার ও জমির মালিকের মধ্যে সমবন্টন হবে। জমির মালিক স্কিম তৈরি করতে ব্যর্থ হলে আঞ্চলিক বন কর্মকর্তা স্কিম তৈরি করে জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে অনুমোদন নিয়ে সরকারি খরচে বনায়ন করবে। এক্ষেত্রেও লভ্যাংশ সমবন্টন হবে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আঞ্চলিক বন কর্মকর্তা কোন জমির মালিককে বনায়ন করার জন্য স্কিম তৈরীর কোন নোটিশ প্রদান করেননি এবং জমির মালিকগনও স্ব উদ্যোগে কোন স্কিম তৈরি করেননি। অর্থাৎ বন অধ্যাদেশ ১৯৫৯ এর আওতায় বন বিভাগ অদ্যবধি কোথাও বনায়ন করে নি। বন অধ্যাদেশ ১৯৫৯ এর আওতায় গেজেট নোটিফিকেশন ভুক্ত জমিতে ১৯২৭ সালের বন আইনের এবং সামাজিক বন আইনের অধীনে বনায়ন করলে তা হবে সম্পূর্ণ বেআইনি এবং বন অধ্যাদেশ ১৯৫৯ এর সকল বিধির সাথে সাংঘর্ষিক।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২১ জুন দেবীগঞ্জ ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা কর্মচারীরা বন অধ্যাদেশ ১৯৫৯ এর বিধি লঙ্ঘন করে সামাজিক বনায়নের অজুহাতে প্রকৃত জমির মালিকদের উচ্ছেদ করে উপকারভোগীদের মাধ্যমে কৃষকের উর্বর জমি দখলে লিপ্ত হয়েছে।

অভিযোগে, বন বিভাগের বনায়ন কর্মসূচি চলমান থাকলে যেকোনো মুহূর্তে সেখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার উক্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে বন বিভাগের বনায়ন কার্যক্রম চলমান আছে।

অভিযোগের বিষয়ে দেবীগঞ্জ থানার ওসি জামাল হোসেন বলেন, বন বিভাগ সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে বনায়ন করছে। এরপরও অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বসবো। আলোচনায় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখার পর আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তবে অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, তারা এসএ রেকর্ড অনুযায়ী জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও বন বিভাগ জোরপূর্বক তাদের জমিতে বনায়ন করছে। এতে তারা তাদের জমির ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত হবেন। ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের নামে জমি রেকর্ডের নির্দেশনা প্রদান করলেও বন বিভাগ তা উপেক্ষা করছে।

এই বিষয়ে জেলা সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহীন কবির বলেন, যেহেতু ১০০ বছরের জন্য ওই এলাকা বনায়নের আওতায় আনার জন্য সরকার গ্যাজেট প্রকাশ করেছেন তাই ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরই অভিযোগকারীদের জমির দাবি গ্রহণযোগ্য হবে। তার আগে মালিকানা দাবি করলে গ্যাজেট বাতিল করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh