শাটডাউনে কি সংক্রমণ কমবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ০৯:৪৮ পিএম

গত ঈদে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ঘরমুখো মানুষ। ছবি: স্টার মেইল

গত ঈদে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ঘরমুখো মানুষ। ছবি: স্টার মেইল

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে পুরো দেশে কমপক্ষে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি। ইতোমধ্যে ‘শাটডাউন’ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত কঠোর বিধিনিষেধ ও লকডাউন বাস্তবায়ন করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ‘শাটডাউনের’ পথে হাঁটতে যাচ্ছে সরকার। যথাযথভাবে শাটডাউন বাস্তবায়ন না করলে  সংক্রমণ কমবে না।

শাটডাউন বলতে কী বোঝানো হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শাটডাউন মানে হচ্ছে সবকিছু বন্ধ থাকবে, শুধু জরুরি সেবা ছাড়া। অফিস-আদালত, বাজারঘাট, গণপরিবহনসহ সব বন্ধ থাকবে। সবাই বাসায় থাকবে। দিল্লি এবং মুম্বাইতে শাটডাউন দিয়ে ফলাফল পেয়েছে। সেখানে ছয় সপ্তাহ গণপরিবহন বন্ধ ‍ছিল, এছাড়াও দিল্লিতে আরও ছিল তিন সপ্তাহ। দিল্লিতে প্রতিদিন একসময় ২৮ হাজার শনাক্ত হতেন, কিন্তু এখন সেখানে ১৫০ শনাক্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও কমে এসেছে।

ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ মনে করেন, জরুরি সেবা বলতে, ওষুধ, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম ছাড়া সবকিছু দুই সপ্তাহ বন্ধ করে মানুষ যদি এই স্যাক্রিফাইস-কষ্টটুকু মেনে নেয়, তাহলে আগামীতে ভালো হবে। নইলে এখন যেভাবে শনাক্ত প্রতিদিন বাড়ছে, সেটা কোথায় যাবে তা সহজেই অনুমেয়।

‍বৃহস্পতিবার ( ২৪ জুন) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে কোভিড-১৯ রােগের ভারতীয় ডেল্টা ধরনের সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। ইতােমধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশটির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরােধে খণ্ড খণ্ডভাবে নেয়া কর্মসূচির উপযােগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা হলো, কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরােধ করা সম্ভব নয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলােচনা হয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী, যেসব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়ােগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে রােগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে এবং জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরােধে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করছে।

এতে বলা হয়, জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়ােজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য সভায় তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এ রােগ থেকে পূর্ণ মুক্তির জন্য ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়ােজন। বিদেশ থেকে টিকা সংগ্রহ, লাইসেন্সের মাধ্যমে দেশে টিকা উৎপাদন করা এবং নিজস্ব টিকা তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার প্রতি কমিটি পূর্ণ সমর্থন জানায়।

অন্যদিকে, সারাদেশে লকডাউনসহ বড় সিদ্ধান্ত আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা তাদের (কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি) সুপারিশ অ্যাকটিভ কনসিডারেশনে (সক্রিয় বিবেচনা) নেব। এটা কমানোর জন্য যেটা করা প্রয়োজন হবে আমরা সেটা করব। সংক্রমণ যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে, আমরা বিভিন্নভাবে তা কমানোর চেষ্টা করছি।

প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দিচ্ছি, দিয়ে এটাকে কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেটা প্রয়োজন হবে সেটাই আমরা করব। যেহেতু সংক্রমণটা ঊর্ধ্বমুখী, দৈনিক সংক্রমণ ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সরকার পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে যেটি উপযুক্ত হবে, সেই সিদ্ধান্তই আমরা নেব। 

সরকার কতদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্ব সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ ও লকডাউন দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এবার শাটডাউন দিতে চাচ্ছে সরকার। শাটডাউন দিলেই যে সংক্রমণ কমে যাবে, বিষয়টি তা নয়। যথাযথভাবে শাটডাউন কার্যকর করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা। এজন্য মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বিনা পয়সায় সুরক্ষা সামগ্রী দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি যেসব মানুষ দিনে এনে দিন খায়, তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh