ঈদে মজাদার রেসিপি-৩

নাজিয়া ফারহানা

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১, ০৯:৩১ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৮:৩৭ এএম

বাসমতি চিকেন

বাসমতি চিকেন

ঈদ মানে আনন্দ। আর এই আনন্দে মজাদার খাবার অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে। ঈদের দিন অতিথিরা আসেন। তাদের অ্যাপায়নের জন্য গৃহিনীরা মজাদার খাবার পরিবেশন করেন। সেরকম কিছু ঈদের খাবারের রেসিপি লিখেছেন- নাজিয়া ফারহানা

বাসমতি চিকেন

উপকরণ
মুরগির মাংসের ৮টি বড় টুকরো, বাসমতি চাল ১ কেজি, গোলমরিচ ৫টি, টকদই ১ কাপ, আদা, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ করে, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ধনে, জিরা গুঁড়া ১/২ চা চামচ করে, মরিচ গুঁড়া ১চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, টমেটো ২টি (টুকরো করা), গরম মসলা গুঁড়া ১চা চামচ, বিরিয়ানি মসলা ১চা চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, মেথি ১/২ চা চামচ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ , কাঁচামরিচ ৫টি (কুচি) , পুদিনা পাতা কুচি ১ টেবিল, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, দুধ ১/২ কাপ (জাফরান মিশানো), লবণ পরিমাণমতো, তেল ১ কাপ, ঘি ৩ টেবিল চামচ। 

প্রস্তুত প্রণালি
চাল ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে আস্ত গরম মসলা ও লবণ দিয়ে সিদ্ধ করুন। মুরগির মাংস, টকদই, হলুদ, ধনে, জিরা গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, আদা, রসুন বাটা একত্রে মেখে ১ ঘণ্টা ম্যারিনেট করুন। তেল গরম করে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে টমেটো দিয়ে ভুনা করে নিন। এবার ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে কষিয়ে নিন। প্রায় সিদ্ধ হয়ে গেলে লেবুর রস, মেথি, গোলমরিচ গুঁড়া, গরম মসলা গুঁড়া, বিরিয়ানি মসলা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন। জল শুকিয়ে তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে নিন। এবার একটি বড় পাত্রে প্রথমে রান্না করা মাংস, তার ওপর সিদ্ধ চাল, কাঁচা মরিচ, পুদিনা পাতা, ধনেপাতা কুচি দিয়ে পুনরায় এভাবে আরেকটি লেয়ার করে তার ওপর দুধ, ঘি ও লবণ ছিটিয়ে দিয়ে ভালো করে ঢেকে ৩০ মিনিট পর নামিয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন।


আফগানি বিরিয়ানি 

উপকরণ
পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, তেল ১.৫ কাপ, পানি ৪/৫ কাপ, লবণ ২.৫চা চামচ, মাটন ৫০০ গ্রাম, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা ১চা চামচ, এলাচি পাউডার ১চা চামচ, চিনি ২/৩ টেবিল চামচ, গাজর ১ কাপ (জুলিয়েন কাট), কিশমিশ ১/৪ কাপ, সেদ্ধ বাসমতী চাল ১ কেজি। 

প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে একটি প্যানে অল্প সাফোলা অ্যাকটিভ তেল নিয়ে তাতে ১ কাপ পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা সোনালি রঙ না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। এবার এতে মাটন দিয়ে হাল্কা নেড়ে ভেজে নিন। রসুন বাটা দিয়ে মাংস রঙ না বদলানো পর্যন্ত রান্না করুন। খেয়াল রাখবেন যাতে মাংস পুড়ে না যায়। এবার এতে পানি ও লবণ দিন। পানি অর্ধেক না হওয়া পর্যন্ত চুলায় রাখুন। মাংসের স্টক তৈরি হয়ে গেলে তা থেকে মাংস আলাদা করে রেখে দিন। স্টকটি আরও রান্না করুন যতক্ষণ এটি ১-১.৫ কাপ পরিমাণের সমান না হয়। হয়ে গেলে স্টক নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে একটি বাটি তে আলাদা করে রেখে দিন। এবার অন্য একটি ফ্রাইং প্যানে চিনি দিয়ে তা ক্যারামেলাইজ করে নিন। এবার এতে মাংসের স্টক ঢেলে দিন। এখন এতে ১.৫ চা চামচ গরম মসলা ও এলাচি গুঁড়া দিয়ে ভালোমত নেড়ে নামিয়ে রেখে দিন। এখন আর একটি প্যান নিয়ে তাতে তেল ও পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে আবার সোনালি রঙ না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এবার তাতে সেদ্ধ মাংসগুলো দিয়ে ৩-৪ মিনিট ভাজুন। অন্য আর একটি প্যানে তেল দিয়ে তাতে গাজর, কিশমিশ ও ২-৩ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে ২-৩ মিনিট ভেঁজে নামিয়ে নিন। 

সব শেষের পর্বে, একটি পাত্রে আগে থেকে সেদ্ধ বাসমতী চাল দিয়ে তাতে মাটন স্টক দিয়ে দিন। এক এক করে বাকি গরম মসলা ও এলাচি গুঁড়া ও ভাজা মাংস দিয়ে দিন। তার ওপর দিন গাজর ও কিশমিশের মিক্সচারটি। এবার পাত্রটি একটি ভারি কাপড় দিয়ে উপরে ঢেকে দিন। তার ওপর ঢাকনা দিয়ে দিন। ১০-১৫ মিনিট হতে দিন। হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন।


শামী কাবাব

উপকরণ
মাংসের কিমা ১ কাপ, ছোলার ডাল আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ৩ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ১চা চামচ, আদা কুচি ১চা চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা চামচ, এলাচি+দারুচিনি কয়েকটা, তেজপাতা ১টি, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ২ চা চামচ, ডিম ১টি, ব্রেডক্রাম্বু প্রয়োজনমতো, লবণ স্বাদমতো, পুদিনা পাতার কুচি ১চা-চামচ, কিশমিশ কয়েকটি, পনিরকুচি ২ টেবিল চামচ। 

প্রস্তুত প্রণালি
কিমার সঙ্গে পেয়াঁজ, আদা, রসুন, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ও ছোলার ডাল মিশিয়ে সেদ্ধ করে বেটে নিন। ডিম ও ব্রেডক্রাম্বু ছাড়া বাকি সব মসলা ও কর্নফ্লাওয়ার এর সঙ্গে মেখে নিন। পছন্দমতো কয়েকটি কাবাব বানিয়ে নিন। পুরের উপকরণগুলো মিশিয়ে নিন। কাবাবের ভেতর পুর ভরে ফেটানো ডিমে চুবিয়ে ব্রেডক্রাম্বু গড়িয়ে নিন। ডুবো তেলে কাবাবগুলো ভেজে নিন। পোলাও, পরোটার অথবা সালাদের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুণ মজাদার এই কাবাব।


জালি কাবাব

উপকরণ
গরুর মাংস ১ কাপ (একদম ছোট ছোট টুকরো করবেন যাতে সেদ্ধ হতে বেশি সময় না নেয়), মসুরের ডাল ১ মুঠের কম, ছোলার ডাল ১ মুঠো, ইচ্ছে হলে ১টা ছোট আলুও দিতে পারেন, কাঁচামরিচ কুচি স্বাদমতো, লবণ স্বাদমত, ১/২ কাপ মিহি করে কাটা পেঁয়াজ কুচি, আদা রসুন বাটা ২ চা চামচ, টমেটো সস ১চা চামচ, জিরা এবং ধনিয়া বাটা মিকসড ১চা চামচ, সামান্য হলুদ, গরম মসলা এবং এলাচ বাটা ১চা চামচ, ডিম ১টি। 

প্রস্তুত প্রণালি
লোহার কড়াই বা প্রেশার কুকারে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, অর্ধেক গরম মসলা বাদে বাকি সব সেদ্ধ করুন। সিদ্ধ হলে পানি শুকিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন পানি যেন না থাকে এবং ঝরঝরে হয় যেন। এবার পাটা কিংবা ব্লেন্ডারে মিহি করে ব্লেন্ড করুন। এবার পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ এবং বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে নরম করে মেখে নিন। ১২-১৩টি কাবাব তৈরি করুন। এবার ডিমটি কসুম সহ ফাটিয়ে নিন সাথে ৪-৫ ফোঁটা পানি মিশিয়ে নিন। কাবাবগুলো ডিমে চুবিয়ে ডুবো তেলে বাদামি করে ভাজুন। মনে রাখবে, কাবাব যত ভালো করে ডিমে ডোবাবেন তত ভালো জালি জালি ভাবটা আসবে। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মজাদার জালি কাবাব। পরিবেশন করুন বিরিয়ানি, তেহারি, কাচ্চি দিয়ে।


লাচ্ছা পরোটা 

উপকরণ
২ কাপ ময়দা (৪টি পরোটার জন্য), একটা ডিম, ১ চামচ চিনি, ১ কাপ দুধ (২ কাপ ময়দার জন্য) 
নুন এক চিমটি ও ঘি বা সাদা তেল ভাজার জন্য। 

প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে ময়দা ডিম, দুধ, নুন ও চিনি দিয়ে মাখিয়ে রাখুন। আধঘণ্টা বা একঘণ্টা আগে মেখে রেখে দিন। মেখে ভিজে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখুন। এরপর গোল গোল করে লেচি করে নিন। তারপর রুটি বেলে নিন। এবার রুটির ওপর একটুঘি বা সাদা তেল মাখিয়ে দিন। এর ওপর একটু শুকনো ময়দা ছড়িয়ে দিন। এবার রুটিটা ভালো করে ভাঁজ করতে হবে। এবার রুটিটা যেভাবে কাগজের হাতপাখা তৈরি করার সময় যেভাবে মুড়ি, সেভাবেই মুড়তে হবে। এর জন্য রুটিটা চৌকো করেও বেলতে পারেন। তাতে বেশি সুবিধা হবে। মুড়ে নিয়ে এবার, ওটা লম্বা থাকবে। ওটা গোল করে পেঁচিয়ে নিন। হাত দিয়ে প্রেস করে গোল লেচির মতো করে নিন। তারপর আস্তে আস্তে বেলুন। ব্যাস, এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে ভাজলেই তৈরি হলো লাচ্ছা পরোটা।


রাজমা বিফ

উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, রাজমা ২৫০ গ্রাম, আদা বাটা ৪ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা বাটা ১চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১চা চামচ, পেঁয়াজ কুঁচি ২ কাপ, শুকনা মরিচ ২টি, তেল ২ কাপ, হলুদ গুঁড়া দেড় চা চামচ, শুকনা মরিচ বাটা ১চা চামচ, লবন ১ টেবিল চামচ। 

প্রস্তুত প্রণালি
রাজমা এক রাত ভিজিয়ে রেখে সেদ্ধ করে নিতে হবে। প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে নিতে হবে। তেলে এবার মাংস, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা, হলুদ বাটা, মরিচ বাটা দিয়ে খুব ভালো করে মেশাতে হবে। অল্প করে গরম পানি দিয়ে কষিয়ে নিন মাংস ঢেকে দিন। মাংস আধা সেদ্ধ হলে রাজমা দিতে হবে। পানি কমে আসলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। এবার মাংসে গরম মসলা গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। মাংস ভুনে তেলের ওপর আসলে চুলা বন্ধ করতে হবে। গরম গরম পরিবেশন করতে হবে রাজমা বিফ ভুনা।


দম খাসি

উপকরণ
খাসির মাংস ১ কেজি, তেজপাতা ১টি, টকদই হাফ কাপ, হলুদগুঁড়া আধা কাপ, পেঁয়াজের কুচি আধা কাপ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৬/৭টি, রসুনবাটা ১চা চামচ, কাঁচা পেঁপেবাটা ১ টেবিল চামচ, ধনেবাটা ১ টেবিল চামচ, চিনি আধা চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, জিরাবাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ভাজা পেঁয়াজ হাফ কাপ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা চামচ, তেল আধ কাপ, জায়ফল জয়ত্রি আধা চা চামচ, দারুচিনি ২ টুকরো, গরম মসলার গুঁড়া ১চা চামচ, লবঙ্গ ২ টুকরো। 

প্রস্তুত প্রণালি
মাংস পাতলা করে কেটে সব বাটা মসলা ও দই দিয়ে মাখিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা রা
খতে হবে। কড়াইয়ে দেওয়ার আগে মাখানো মাংস লবণ ও পেঁপেবাটা দিয়ে আবার মাখাতে হবে। কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি হালকা বাদামি রঙ করে ভেজে তাতে মাংস, তেজপাতা, দারুচিনি, লবঙ্গ দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে এবং ১ ঘণ্টা দমে দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। মাংস তেলের ওপর এলে লেবুর রস, কাঁচামরিচ, জয়ত্রি-জায়ফলের গুঁড়া, গরম মসলার গুঁড়া, শুকনো পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামাতে হবে। 


চিংড়ির মালাইকারি

উপকরণ
চিংড়ি মাছ বড় বড় ৭-৮, পেঁয়াজ বাটা ১ কাপ, হলুদগুঁড়া ২চা চামচ, শুকনো মরিচগুঁড়া ২চা চামচ, ঘি ৪চা চামচ, তেজপাতা- ২-৩টি, এলাচ ৫-৬টি, সরিষার তেল পরিমাণমতো, নারিকেলের দুধ ১ কাপ, টমেটো পিউরি ৪চা চামচ, আদা-রসুন বাটা ৩চা চামচ, চিনি ২চা চামচ, কাঁচামরিচ চেরা ৫-৬টি, দারুচিনি ৫-৬টি, লবণ পরিমাণমতো, পানি প্রয়োজনমতো। 

প্রস্তুত প্রণালি
চিংড়ি মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে তার মধ্যে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে রাখুন। তারপর কড়াইয়ে তেল গরম করে নিন। তাতে দিয়ে দিন ১ চামচ ঘি। তেল গরম হয়ে এলে ফোড়নে দিন তেজপাতা, দারুচিনি ও এলাচ। এবার চিংড়ি মাছগুলো ভেজে তুলে নিন। ওই তেলেই দিয়ে দিন বেটে রাখা পেঁয়াজ। পেঁয়াজ হালকা ভাজা হলে দিন আদা-রসুন বাটা, হলুদ ও শুকনা মরিচগুঁড়া। সমস্ত উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশে গেলে কড়াইয়ে ৪ চামচ টমেটো পিউরি দিন। মসলা কষে গেলে দিয়ে দিন নুন ও চিনি। লবণ, চিনি মিশে গেলে কড়াইয়ে পানি দিয়ে দিন। গ্রেভি ফুটে গেলে কড়াইয়ে একে একে ভেজে রাখা চিংড়ি মাছ দিয়ে দিন। এরপর কড়াইয়ে নারিকেলের দুধ দিয়ে খানিকক্ষণ ফোটান। এবার গ্রেভির ওপর থেকে দিয়ে দিন চেরা কাঁচামরিচ, এলাচ ও ঘি। তৈরি হয়ে গেলো বড় চিংড়ির মালাইকারি। এবার গরম গরম পরিবেশন করুন পোলাওয়ের সঙ্গে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh