রেকর্ড গরমে কানাডায় ৫ শতাধিক লোকের মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১, ১২:৪৩ পিএম

ভ্যাঙ্কুভারের একটি অস্থায়ী পানির ফোয়ারায় ভিজছেন লোকজন। ছবি : সিএনএন

ভ্যাঙ্কুভারের একটি অস্থায়ী পানির ফোয়ারায় ভিজছেন লোকজন। ছবি : সিএনএন

কানাডায় নজিরবিহীন তাপপ্রবাহে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ডের পাশাপাশি কয়েক’শ লোকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই তাপ-সম্পর্কিত বলে ধারণা করছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

গত পাঁচদিনে শুধু ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যেই প্রায় ৪৮৬ জন প্রাণহানির ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর আমেরিকা জুড়ে অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন। গরমে মৃতদের মধ্যে বহু বয়স্ক মানুষ ছিলেন।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া (বিসি) প্রদেশের চিফ করোনার লিসা লাপয়েন্তে গতকাল বুধবার (৩০ জুন) বিকেলে জানিয়েছেন, তারা গত শুক্রবার থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৪৮৬ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, যারা হিটওয়েভে মারা গেছেন তাদের মধ্যে অনেকে বাতাস চলাচল না করে এমন বাড়িতে একা বাস করতেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে গত তিন থেকে পাঁচ বছরে তিনটিই তাপজনিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যায় ব্রিটিশ কলম্বিয়ার লিটন শহরে দাবানল শুরু হলে লোকজন সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। শহরের মেয়র জ্যান পোল্ডারম্যান সিবিসি নিউজকে বলেছেন, পুরো শহরটি আগুনে জ্বলছে। ধোঁয়ার প্রথম চিহ্ন থেকে হঠাৎ সারা শহরে আগুন ছড়িয়ে পড়তে মাত্র ১৫ মিনিটের মতো সময় লেগেছে।

ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় মঙ্গলবার তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছেকাছি। এত গরম কখনো দেখেনি সে দেশের মানুষ। 

ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে ১৩০ জনেরও বেশি মানুষের হঠাৎ মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের ধারণা, তাপপ্রবাহের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই বয়স্ক মানুষ। 

পুলিশ জানিয়েছে, নাগরিকদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। কারণ এর আগে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর কখনো ওঠেনি দেশের তাপমাত্রা। শুধু তাই নয়, এতদিন ধরে টানা গরমও থাকে না কানাডায়। এখনো বেশ কিছুদিন এমনই তাপমাত্রা থাকবে; সাথে তাপপ্রবাহ চলবে। কারণ উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা ও কানাডার উপর গরম বাতাসের ‘ডোম’ তৈরি হয়েছে। বায়ুর সেই চাপ চলতি সপ্তাহের শেষে সবচেয়ে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে হঠাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে বলেও বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের।

কানাডার স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘এনভায়রনমেন্ট কানাডা’ ব্রিটিশ কলম্বিয়া, অ্যালবার্টা, সাসকাচুয়ান, নর্থওয়েস্টার্ন টেরিটোরিস ও ইউকন প্রদেশের কিছু এলাকায় অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।

কানাডার প্রতিবেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও এই তাপপ্রবাহ চলছে। ১৯৪০ সালে নথিবদ্ধ করা শুরু করার পর এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড ও সিয়াটলের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ওরেগনের পোর্টল্যান্ডের তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ও সিয়াটলের তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। তাপমাত্রার তীব্রতা ইলেকট্রিক তার গলিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

দেশটির ওরেগন অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত কয়েকদিন ধরে গরমের সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মাল্টনোমাহ কাউন্টিতেই ৪৫ জনের মৃত্যু হয়।

ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের কিং ও স্নোহোমিশ কাউন্টিতে কমপক্ষে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। - বিবিসি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh