খেজুর চাষে সফলতা

এসএস শোহান, বাগেরহাট

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১, ০৩:১৪ পিএম

বাগেরহাটের রামপালে সৌদি খেজুর চাষ

বাগেরহাটের রামপালে সৌদি খেজুর চাষ

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের লবণ পানির এলাকা রামপালে সৌদি খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন জেলা জজ আদালতের আইনজীবী দিহিদার জাকির হোসেন। এটিকে কৃষিতে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। স্থানীয় অনেকে এখন এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সন্নাসী হাজীপাড়া এলাকায় ২০১৪ সালে পরিকল্পিত মৎস্য চাষের জন্য খামার করেন আইনজীবী দিহিদার জাকির হোসেন। ১৫ একর জমিতে ৯টি পুকুর খনন করেন। খননকৃত মাটিতে উঁচু হওয়া পুকুরের পাড়ে পেঁপে, বড়ইসহ বিভিন্ন ফলদ গাছ রোপণ করেন; কিন্তু লবণ পানি ও নানা রোগ বালাইয়ের কারণে এসব ফসলে তেমন ভালো করতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে অতিরিক্ত লবণ পানির কারণে ঘেরে গলদা বা কার্প জাতীয় মাছ না হওয়ায় ভরসা থাকে শুধু বাগদায়। বছর তিনেক বাগদা চিংড়ির উৎপাদন ভালো হলেও, পরের মৌসুমে ভাইরাসের কারণে বড় ধরনের লোকসানে পড়েন তিনি। ভাবতে থাকেন কি করবেন এত বড় জমিতে। এক পর্যায়ে সৌদি খেজুর চাষের বিষয়টি মাথায় আসে তার। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে দুইশ সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করেন। পরবর্তীতে নরসিংদী থেকে আরও একশ চারা আনেন এই আইনজীবী। বর্তমানে ৫০টি খেজুর গাছে ফল এসেছে। এক বছরের মধ্যে অন্তত আরও দুইশ গাছে ফল দেওয়া শুরু হবে। 

খামারের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের প্রথম দিকে স্যার সৌদি খেজুরের চারা লাগালেন। বিষয়টি এলাকার মানুষ জানার পরে আমাদের নিয়ে ট্রল করত। স্যার পাগল বলে আমাদের ক্ষেপাতেন; কিন্তু স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এখানে লাগানো প্রতিটি গাছ বেঁচে রয়েছে। গাছে ফল এসেছে। অনেকেই আসে দেখতে। প্রথম দিকে পাগল বললেও এখন সবাই স্যারকে বাহবা দিচ্ছে। 

আইনজীবী দিহিদার জাকির হোসেন বলেন, মাছ এবং অন্যান্য ফল যখন ভালো হয়নি, তখন এক ধরনের হতাশায় পড়েছিলাম। পরে খেজুরের চাষ করি। বর্তমানে আজোয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহি এই পাঁচ জাতের খেজুর রয়েছে আমার বাগানে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাগানের অন্তত দুইশ থেকে তিনশ গাছে খেজুর হওয়া শুরু করবে। এ বছরই অনেক গাছে ২৫ কেজি থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত খেজুর পাবো বলে আশা করছি। সব মিলিয়ে আগামী বছরের মধ্যে বাগান থেকে লাভে যেতে পারব। 

তিনি আরও বলেন, এটি যেহেতু মরুভূমির গাছ, যার ফলে আমাদের এই অঞ্চলে খাপ খাওয়াতে একটু বেগ পেতে হয়। গাছের গোড়ায় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দিতে হয়, পানি কম হলেও বাঁচবে না, আবার বেশি হলে পচে যাবে। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব। নারিকেল ও সুপারি গাছের নতুন রোগ হোয়াইট ফ্লাই ও শূতিমূলের আক্রমণটা বড় ভয় এই খেজুর গাছের। এ জন্য সব সময় খেয়াল রাখতে হয়। প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ইঁদুরের জ্বালাতন। খেজুর গাছের শিকর কেটে দেয়, আবার ফলও কাটে। ইঁদুরের জন্যও আমাদের সতর্ক থাকতে হয়। নতুন যারা শুরু করবে তাদেরকে কলম চারা ক্রয়ের জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকলে লবণাক্ত পানি অধ্যুষিত এলাকার জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। তার এই উদ্যোগকে আরও বেশি সফল করার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা করা হচ্ছে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh