কু (ছোট গল্প)

ধ্রুব এষ

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১, ০৩:৫১ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৩:৩২ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বৃষ্টি-বাদলার দিন। শ্রাবণ মাস যাচ্ছে।

৮ শ্রাবণ না ৯ শ্রাবণ আজ?

১১ শ্রাবণ। বিষ্যুদবার যাচ্ছে।

হতদরিদ্র মহিবুরের ঘরে একটি বাংলা ক্যালেন্ডার আছে শক্তি ঔষধালয়ের। এটা তাকে হিতাংশু দিয়েছে। মধ্য বাজারে বিরাট বনজি ওষুধের দোকান হিতাংশুদের। পঞ্চহরি আয়ুর্বেদিক ঔষধালয়। হিতাংশুর দাদা মহিম কবিরাজের দাদা ছিলেন পঞ্চহরি কবিরাজ। তার ছেলে সত্যশিব কবিরাজ পঞ্চহরি আয়ুর্বেদিক ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। সত্যশিব কবিরাজের নাতি এবং ভুবনময় কবিরাজের ছেলে হিতাংশু। সেও কবিরাজি করে। নাড়ি টিপে ওষুধ দিতে পারে।

আজ কি দোকানে গেছে হিতাংশু কবিরাজ? কাল রাত থেকে ঝরি নেমেছে। সম্ভবত সকালে, না হলে দুপুরে, মহিবুর ঘুম থেকে উঠেছিল একবার। ঝরি দেখে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। আবার উঠে দেখে ঝরি কমেনি।

ঝড়ি কী?

তুমুল বৃষ্টি।

তুমুল বৃষ্টি, তুমুল বৃষ্টি... আবার ঘুম ধরে যাচ্ছিল। না ঘুমিয়ে উঠতে হয়েছে। ক্ষুধা লেগে গেছে। এত ক্ষুধা, ভাত সালন কিছু গরম করে নাই, ঠান্ডা ঠান্ডাই খেয়ে নিয়েছে মহিবুর। অথচ করোনার ত্রস্ত দিন যায়। মরে যাচ্ছে মানুষ। রোজ মরছে। ৩৪ জন, ৩৮ জন, ৪২ জন, ৪৭ জন....। দমে গেছে মানুষ। মাস্ক স্যানিটাইজার মানুষের নিত্যপণ্য এখন; কিন্তু স্যানিটাইজার কিনে টাকা খরচ করবে এত টাকা আছে নাকি মহিবুরের। সে মাস্ক পরে শুধু, আর নিয়ম-সিয়ম অত মানে না। বিরাট নিয়ম-সিয়ম মানা লোক ছিল অরবিন্দ। ৮-৯ দিন আগে মরেছে। করোনা হয়ে। স্কুল লাইফের বন্ধু অরবিন্দর শবদাহ দেখেছে মহিবুর। অরবিন্দর ছেলে তনুময়, বয়স ১১, শুকনা চোখে বাপের মুখাগ্নি করেছে।

মহিবুরের ফ্রিজার নাই, টেলিভিশন নাই। স্মার্টফোন আছে একটা। এটা সে উপহার হিসেবে পেয়েছে। বিশ-বাইশ হাজার টাকা দামের। কে দিয়েছে, প্রাইভেট প্রশ্ন। উত্তর দিতে বাধ্য না সে। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও বিকাশ অ্যাপ নামানো আছে ফোনে। কাজে লাগে। মহিবুরের বয়স এখন ৫৪ বছর। সে মনে করে এটা হিসাবের ভুল। তার বয়স এখন ৪৫ বছর। ফেসবুক আইডির নাম- ডাল্টন মহিবুর। ডাল্টন কেন? এমনি।

অতিশয় হারামি টিটো। ফোন করে একদিন বলেছে, ‘আমার চোখের পাওয়ার কমে গেছে। তোর ফেসবুক পেজ দেখলাম। কী লিখছিস এইটা? তোর নাম? ডি না বি দিয়া লিখেছিস? ডিএএল না বিএএল-?’

টিটো কবি-সাহিত্যিক। ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে থাকে। শিল্প-সাহিত্য করে এবং একটা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক। বউ আছে। আজব কিসিমের। টিটোও একই কিসিমের বলে মিলেছে। বিধাতার নিয়ম লঙ্ঘন করার একটা যৌথ প্রচেষ্টা তারা করছে, পোলাপান নেবে না।

‘কেন রে ভাই? তোর একটা ছেলে কেন থাকবে না?’

‘ছেলে থাকবে কেন? ছেলে থাকবে কেন? শোন আমার যদি পোলাপান হয়, একটা, দুইটা, তিনটা, সাতটা, সব হবে মেয়ে। কন্যাশিশু। আমি তাদের নাম ঠিক করে রাখছি।’

‘নাম ঠিক করে রাখছিস?’

‘তো শোন। ইভা, ইলা, ইরা, ইমা, ইফা, ইশা ও ইনা।’

‘ফাটাফাটি। নিয়া নে তাহলে।’

‘নিয়া নেব? কী নিয়া নেব?’

‘ইলা, ইকা আর কী কী বললি, ভাস্তিদের নামগুলো আর কী!’

‘হ্যাহ্! ভাস্তি! নিয়া নেব! আরে এটা একটা ধারণা মাত্র। আমি একটা সম্ভাবনার কথা বলতেছি। যদি হইতো। শোন, উইসকনসিনে একটা মেয়ে থাকে হিয়া। ইন্ডিয়ান কবি। জামাই আছে। গত বছর বইমেলায় আইছিল। আমারে বলেছে, সে আমার একটা বাচ্চার মা হতে চায়। করোনা যদি না থাকে, অক্টোবরে আবার ঢাকায় আসতেছে সে। খিক্! খিক্! খিক্!’

মাথায় দোষ আছে টিটোর। স্বাভাবিক ব্যাপার। কবি, সাহিত্যিক ও সাহিত্য সম্পাদক, মাথায় দোষ থাকে এই বর্গের মানুষের।

মোবাইল ফোন অফ করে ঘুমায়। এখন ফোন খুলে মহিবুর দেখল, আরে সর্বনাশ! রাত ১২টা ১২ বেজে গেছে। কখন?

ঝড়ি নিশ্চয় এর মধ্যে কয়েকবার ধরেছে। তাতে কী? যেমন হচ্ছে টাউন ডুবে যাওয়ার কথা। ফেসবুকে কেউ কি কিছু আপলোড দিয়েছে? ফেসবুকে লগ ইন করতেই দেখা গেল। বাসস্ট্যান্ড রোডের নাসের মামু ফেসবুক লাইভে আছে। কথা বলছে উঁচু টুলে বসে। বাসস্ট্যান্ড রোড জল থই থই করছে। টাউনের আরও কয়েকজন আছে লাইভে। কেউ ছবি আর কেউ স্ট্যাটাস দিয়েছে। দেওয়ান সাহেব রোডের বাবু মাস্টার পানিতে তার বউ মুক্তির ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছে, আমার মুক্তি জলে জলে। উকিলপাড়ার কবি তৈয়ব আল আজাদ টাউনের দুর্দশা বর্ণনা করে তিন খণ্ড কাব্য দিয়েছেন। ১২ লাইন, ৩ লাইন এবং ১০ লাইনের। মহিবুর লাইক মেরে দিল। সঙ্গে সঙ্গে তার ফোন বাজল। চমকে উঠল সে। তবে দেখে আশ্বস্ত হলো, টি কলিং...।

টি মানে টিটো। এমন রাত-বিরাতেই কল দেয় সে। মহিবুর ধরল, ‘হ্যালো?’

‘কী রে শিয়াল?’

মহিবুর বলল, ‘না রে ভাই, শিয়াল বলিস না। মনে দুখ পাই।’

টিটো বলল, ‘মনে দুখ্ পাস? কেন রে শিয়াল?’

‘ওই তো, আয়নায় এক আধটু দেখিতো নিজেরে।’

‘শিয়ালের মতো না তুই?’

‘একশ ভাগ! এ জন্যই মনে দুখ পাই আর কি। হাজার হোক, একটা কথা তো আছে, কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না-।’

‘শিয়ালকে শিয়াল বলিও না?’

‘হ্যাঁ।’

‘তবে তোরে কী বলব? উদবিড়াল, সংক্ষেপে উদ?’

‘উদ! এর থেকে শিয়ালই ভালো। তবে আমি ভাই দেওয়ান সাহেব রোডের শিয়াল না। দেওয়ান সাহেব রোডের শিয়াল অইল বাবু মাস্টার।’

‘মাস্টারের বউ শুনলাম আবার পোয়াতি?’

‘তোরে কে বলল?’

‘শোন রে মহিবুর, আমি বলি না, আমার স্যাটেলাইট আছে! মাস্টার কোন দিন তার বউর পেট করছে বলব? আষাঢ়ের চতুর্দশীর রাইতে। বুঝছিস?’

‘তুই ভাই গুরু ব্যক্তি। এই খবর তো আমিও শুনি নাই।’

‘কেউই শুনে নাই। ফরিদ, মান্না, শামীম, তুষার, নাসের, মসরু, অনজন, কেউ না। আমি বললাম, শুনে তারা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় থেকে পড়ল। বৃষ্টির শব্দ শুনতেছি। বৃষ্টি হইতেছে? এই রকম একটা রাতেও তোর যুঁথির কথা মনে পড়ে না, বল?’

‘সত্য কথা বলি। পরে রে ভাই।’

‘শোন যুঁথিরে আবার নিয়া আয় তুই। তালাক তো হয় নাই তোদের। বাচ্চা দুইটার কথা চিন্তা কর দুইবার। একটা ফুফুর কাছে মানুষ হইতেছে আর একটা যুঁথির কাছে। তুই একলা। এইভাবে হয়? আর কয়দিন, মরে যাবি না?’

‘না রে ভাই, আমি অত তাড়াতাড়ি মরব না। মরতে পারব না। আরও কত কী দেখার বাকি দুনিয়ার।’

‘তা ঠিক। তুই এত সহজে মরবি না। করোনা তোরে ধরব না। গানজাখোরদের করোনা ধরে না।’

‘আমি তো শুনছি মদখোরদের ধরে না।’

‘ভুল শুনিস নাই। আবার ঠিক শুনছিস এইটাও ভাববি না। করোনারে আনকাট পুঁজির মরণ কামড় মনে হইতেছে আমার। মানুষের মৃত্যু এবং মৃত্যুজনিত ভয়রে ক্যাশ করতেছে তারা।’

‘কারা?’

‘তোর বাপ-চাচারা। শোন আমার করোনা পজিটিভ হইছে। জ্বর আছে, কাশি আছে, ডায়রিয়া আছে, মাথা ধরা আছে। আমি রাখি।’

‘তোর করোনা হইছে! কী বলতেছিস? কবে হইল? পিসি-টিসিআর করে দেখছিস? ... হ্যালো?... হ্যালো?’

টিটো লাইন কেটে দিয়েছে। আজব। তার করোনা হলো কোন দিন? করোনার প্রকোপে যা হয়েছে, সময় জ্ঞান লোপ পেয়েছে মানুষের। দিন তারিখ কেউ মনে রাখতে পারছে না। মহিবুর আরও বেশি পারছে না। সে স্থানু থাকল মুহূর্ত। কল দিল টিটোকে। নাম্বার নিষ্ক্রিয়। মাঝে মধ্যে যখন ঢাকায় যায়, মহিবুর টিটোর বাসায় যায় সন্ধ্যায়। আড্ডা দেয়, মদ খায়। টিটোর বউ একটিভিস্ট। বিড়ি সিগারেট টানে, টাকিলা খায়, ভালো মানুষ আছে; কিন্তু তাকে ফোন করা কি সমীচীন হবে এই মুহূর্তে?

বিশেষ দরকার। বিবেচনা করে কল দিল মহিবুর।

রিং হলো। টিটোর বউ ধরল না।

আবার কল দিলে সভ্যতা হবে না। ১২টা ৫৯ বেজে গেছে। ফোন বাজল। পর্ণা কলিং...। টিটোর বউ পর্ণা। দোনামনা করে মহিবুর ধরল, ‘আদাব দিদি।’

‘আদাব মহিবুর ভাই। স্যরি, আমি একটা লাইভ কনফারেন্সে ছিলাম। আপনি ভালো আছেন? ছেলে ভালো আছে?’

পর্ণা জানে অতুল মহিবুরের কাছে থাকে।

‘জি দিদি ছেলে ভালো আছে। আমিও ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন দিদি? আপনি? টিটো।’

‘আমি ভালো আছি মহিবুর ভাই। টিটো কেমন আছে বলতে পারব না।’

‘জি দিদি?’

‘তার সঙ্গে আপনার যোগাযোগ নাই?’

‘আছে দিদি।’

‘সে আপনাকে কিছু বলেনি?’

‘কী বিষয়ে দিদি-? কী হইছে?’

‘আমরা আর একসঙ্গে থাকি না মহিবুর ভাই। আট মাস একুশ দিন ধরে থাকি না।’

‘কী বলেন দিদি!’

‘হ্যাঁ।’

কী করে মহিবুর, লাইন কেটে দিল এবং সংকট চিন্তা করে ঠান্ডা হয়ে গেল। করোনা ধরেছে, টিটো একা। সে কি কোনো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে?

আবার টিটোর নাম্বারে কল দিল মহিবুর। নাম্বার নিষ্ক্রিয়। করোনা নিয়ে নিশ্চয় অনলাইনে থাকবে না টিটো। অনলাইন উন্মাদ না সে। তবুও অনলাইনে ঢুকে দেখল মহিবুর। টিটো নাই। পর্ণাকে আবার ফোন করা ঠিক হবে? পর্ণাও অনলাইনে নাই। ফেসবুকে নাই, হোয়াটস অ্যাপে নাই।

ঝড়ি হঠাৎ ধরে এল একটু। টিনের চালে অনেক কাক একসঙ্গে হাঁটলে যে রকম হয় সেরকম শব্দ করে বৃষ্টিপাত হলো কিছুক্ষণ। ঠান্ডা হাওয়া ঢুকল মহিবুরের ঘরে। মহিবুরের জার করে উঠল। রক্তচাপের সমস্যা আছে টিটোর। হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে। টিটো কি মরে যাবে নাকি করোনায়? ধুর!

মহিবুর একটা সিগারেট বানিয়ে ধরাল। দুই টান দিয়ে মনে মানল না, আবার কল দিল টিটোকে। সেই একই, নাম্বার নিষ্ক্রিয়। বানানো সিগারেট বিস্বাদ লাগল, তাও সেটা টানতে থাকল মহিবুর। প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় জীবন, কলেজ জীবন, একসঙ্গে কত দিনমান, কত সারারাত টাউনের রাস্তায় হেঁটে তারা কাটিয়ে দিয়েছে। ধোঁয়ার অন্তর্গত ব্যক্তি ছিল টিটোও। পরে ছেড়ে দিয়েছে বলা যাবে না। অত না আবার! ভালো মানুষ বলে একরোখা কিছু। হেমন্তের এক রাতে, টাউনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিষ্করুণ গলায় আত্মহত্যা করবে বলেছিল সে।

‘মহিবুর রে!’

‘কী রে ভাই?’

‘আমি মনে হয় আত্মহত্যা করব।’

‘আত্মহত্যা? অ। কবে করবি?’

‘দিন তারিখ ঠিক করি নাই।’

‘অ। দিন তারিখ ঠিক করলে আমারে বলিস।’

‘কেন? দিন তারিখ দিয়া তুই কী করবি?’

‘না, আমিও আত্মহত্যা করব তো। একা একা কিছু ডর লাগে আর কি।’

‘শালা শিয়াল!’

অনাবাসী টাউনের মানুষ হয়ে গেছে টিটো আগেই। হৃদয় সংক্রান্ত কিছু জটিলতায় পুড়ছিল। সঙ্গে শরীরও।

‘আমার একটা শরীর দরকার।’

কুরিয়ার পাড়ের আবুর মা বেটির ঘরে রাত ১১ টার পরে ঢুকেছিল মহিবুর। নগদ ছয়শ বাকি একশ টাকায় আবুর মার নাতনি সাবিলার সঙ্গে রফা করেছিল; কিন্তু টিটো কিছু করেনি।

বিস্বাদ লাগলেও সিগারেটে ধরেছে। বাবা ডংকাশার মোকামের জিনিস। আরেকটা বানিয়ে ধরাল মহিবুর। টানল এবং কত আকাশ পাতাল ভাবল। মনে হলো, দশ বছর ধরে সে ভাবছে। মনে হলো, দশ হাজার বছর ধরে ভাবছে।

‘কু!’

চমকাল মহিবুর।

‘কু-কু!’

মানে কী এর?

মহিবুর অপেক্ষা করল।

‘কু! কু-কু!’

টিটো!

কত হাজার বছর আগে এইসব ছেলেমানুষি তারা করত? সংকেত, পাখির ডাক। কু! কু-কু! অর্থ নিজেদের অভিধান সম্মত। পরিস্থিতি মতো অর্থের সংস্করণ হতো। পাখি ছিল তারা। কত বছর পর আবার পাখি হলো মহিবুর? ‘কু-কু!’ দিল। এর অর্থ হলো, দাঁড়ারে ভাই।

একটা বর্ষাতি আছে মহিবুরের। লন্ডনী বর্ষাতি। ব্রিকলেনের তাহমিনা এক শীতকালে দিয়ে গেছে। বৃষ্টি বাদলায় পরে মহিবুর। এখন পরল না। বৃষ্টি এখন এক, দুই ফোঁটা করে পড়ছে।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে টিটো। মহিবুর গেট থেকে দেখল। ছাতা 

মাথায় নেই, বর্ষাতি পরেনি; কিন্তু কীভাবে? ফোনে কথা হলো কতক্ষণ আগে? ঘোরে অতকিছু ভাবল না মহিবুর। বলল, ‘কী রে ভাই?’

টিটো কি হাসল? বোঝা গেল না। বলল, ‘শিয়াল, তুই কেমন আছিস? তোর কি করোনা হয় নাই?’

মহিবুর বলল, ‘ইয়া মাবুদ! এইসব কি নাশকতামূলক কথা রে ভাই? করোনা অইলে কি আমি থাকতাম?’

‘থাকতি। কব্বরে। পুলিশ ভাইয়েরা তোর মুর্দারে দাফন দিতেন।’

‘এইটা অবশ্য সিরাজ ভাইও আমারে বলছেন। সিপাহী মুহাম্মদ সিরাজ মিঞা। ভাই ঞ দিয়ে মিঞা বানান ল্যাখেন। থানার এসআই সাহেবের ডানহাত। তরিকার মানুষ। চানুর ঘরে বসে দুই দম নিয়ে সিরাজ ভাই মায়া সহকারে বলছেন, আপনের করোনা অইলে মোটে চিন্তা করবেন না মহিবুর ভাই। আপনে যদি করোনায় মরেন, আমি এই সিরাজ মিঞা আপনের দাফন কাফনের দায়িত্ব নিয়া রাখলাম।’

‘বুঝছি। হাঁট এখন।’

তারা হাঁটা দিল, সিগারেট ধরাল। মহিবুরের বানানো সিগারেট।

ঝরি ধরেছে। তারা কি সারারাত ধরে হাঁটবে?

টিটো বলল, ‘আমার করোনা হইছে।’

মহিবুর বলল, ‘লঞ্চঘাট যাবি?’

‘চল।’

‘ডিম-পরোটা খাবি?’

‘খাব।’

‘আচ্ছা। এখন করোনা পরিস্থিতি বল। তুই কি মরে যাবি?’

‘হ্যাঁ।’

‘অ।’

টিটো বলল, ‘মুশকিল, মায়া কাটে না। মনে হয় তোরে সঙ্গে নিয়া হাঁটি।’

মহিবুর বলল, ‘কোনো সমস্যা নাই রে ভাই। চল হাঁটি।’

বাজ পড়ল না, বিদ্যুৎ চমকাল না, শ্রাবণের মেঘের অপার ছিনালপনা, আবার ঝরি কিছু না বলে নামল। তারা হাঁটছে। সে মহিবুর ও টিটো। বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটছে। ঝরিতে বোঝা যাচ্ছে না কে কোন জন। টিটো সত্যি হাঁটছে মহিবুরের সঙ্গে? ঝরি এবং বিদ্যুৎচ্চমকহীন অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না।  

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh