নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২১, ০৫:২৮ পিএম
ফাইল ছবি।
বাংলাদেশে চলমান করোনা অতিমারির ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ১১ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮৫ জন রোগী।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যু ঘটেনি। তবে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাস সংক্রমণ বেশী দেখা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৯২ জন। এর মধ্যে গতকাল ৮১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাদের ৮০ জনই ভর্তি ছিল রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। আর বাকি একজন রোগী ভর্তি ছিলেন ঢাকা জেলায়।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব মতে এ বছর জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২৭১ জনের, যা চলতি বছরে মোট শনাক্তের ৬৯ শতাংশ। গত বছরের জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২০ জনের। সে হিসাবে গত বছরের জুন মাসের তুলনায় এবারের জুন মাসে রোগী বেড়েছে সাড়ে ১৩ গুণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম গত বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ডেঙ্গু রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে এবং কোথাও যেন স্বচ্ছ পানি না জমে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
করোনা আর ডেঙ্গুর উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় জ্বর হলে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারায়। আর সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
গত বছর ডেঙ্গুর এত প্রকোপ দেখা যায়নি। দুই সিটি করপোরেশন চিরুনি অভিযানসহ বেশ কিছু কার্যক্রম চালায়। এর পরেও ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন।
এবার ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর হবর আগ থেকেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিদিন সকালে মশার লার্ভা মারার জন্য লার্ভিসাইডিং এবং বিকেলে উড়ন্ত মশার মারার জন্য অ্যাডাল্টিসাইডিং করছে।
তবে শুধু ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব না বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। গত সপ্তাহে বেশ কিছু এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করতে নারী কাউন্সিলরদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, পরিষ্কার পানি জমা হয়, এ রকম পাত্র, ফুলের টব, হাঁড়ি-পাতিল, চিপসের প্যাকেট বাড়ির আশপাশে না ফেলতে দু-তিন দিনের বেশি সময় যাতে কোথাও পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু শনাক্তের সব ধরনের পরীক্ষার সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএস১ সর্বোচ্চ খরচ ৫০০ টাকা রাখা যাবে।