ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার ৭৬৭ জন নারী

নিজস্ব প্রতিবেক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২১, ০৬:৪২ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেশে গত ছয় মাসে ৭৬৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে নির্যাতনের পর ২৪ জনকে হত্যা করা হয় এবং ৫ জন আত্মহত্যা করেছেন বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) আসকের এই সংখ্যাগত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যেটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনটি ১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও আসকের নিজস্ব উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

গত ছয় মাসে শিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ ছিল উল্লেখ করে আসকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই সময় ৭২২ শিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয় এবং হত্যা করা হয়েছে ৩১৭ শিশুকে। সব মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৩৯ শিশু নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে।

‌‌‘যাদের মধ্যে ৪২০ শিশুকে ধর্ষণ করা হয়, আত্মহত্যা করেছে ৫১ শিশু, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫০ জন ছেলে শিশু, উত্যক্তকরণ, শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন, শিক্ষকের কাছে নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও ২০৯ শিশু।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে নির্যাতিত ৭৬৭ জন নারীর মধ্যে ৬১১ জন একক ও ১৫৬ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।

এছাড়া একই সময়ে আরও ১৬৬টি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ছয় মাসে ৬৪ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং এদের মধ্যে পরে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে ৫৭ জন পুরুষ, যাদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২ নারীও হত্যার শিকার হন।

এই সময়ে ৩৫০ নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে স্বামী, স্বামীর পরিবার এবং নিজ পরিবার থেকে হত্যার শিকার হন ২১০ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে ৭৮ নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

এছাড়া যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন ১২১ নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৭১ জন।

জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘হেফাজতে’ এবং ‘ক্রসফায়ারে’ ৩২ জন মারা গেছেন।

এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘গুলি বিনিময়’ কিংবা ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হন ২০ জন। এ সময়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘গুলিতে’ ৯ জন এবং ‘নির্যাতনে’ ৩ জন মারা যান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ছয় মাসে কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে ৪১ জন মারা যান। এর মধ্যে ১৩ কয়েদি এবং ২৮ জন হাজতি ছিলেন।

গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৬ জন অপহরণ কিংবা গুমের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরবর্তী সময়ে এদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও এখও ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ছয় মাসে ১২০ জন সাংবাদিক নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, নির্যাতিত সাংবাদিকদের মধ্যে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আক্রান্ত হন। নির্বাচনী সহিংসতায় ১৩ জন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় ১৮ জন সাংবাদিক আহত হন।

অন্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে গুলিবিদ্ধ এক সাংবাদিক মারা যান বলে প্রতিবেদনের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ছয় মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসস্থানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ৯৯টি ঘটনা ঘটেছে বলে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়।

এতে বলা হয়, ছয় মাসে ৪৩টি প্রতিমা, পারিবারিক মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩ জন। দখল বা দখল চেষ্টা এবং উচ্ছেদ বা উচ্ছেদ চেষ্টার শিকার হয়েছেন ৬ জন। এছাড়া বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পরিবার ও বাড়িঘরে একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এই সময়ে ভারত সীমান্তে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে ৪ জন, শারিরিক নির্যাতনে ১ জন এবং বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে আরও ১ জন মারা যান।

এছাড়া আহত হয়েছেন ৪ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩ জন, এদের মধ্যে পরে ২ জন ফেরত এসেছে।

প্রতিবেদনে গত ছয় মাসে ২৬৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনার কথাও বলা হয়েছে।

অপরদিকে ২৫ জন গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। এই সময়ে ৮টি সালিশ ও ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ১১ নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এছাড়া গত ছয় মাসে ১৯ জন গণপিটুনিতে মারা যান।

আসক করোনাভাইরাস মহামারীর এই সংকটকালীন সময়ে নাগরিকের মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি দাবি জানায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh