কীভাবে ঘরে বসেই আয় করা যায়

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২১, ০৮:৩২ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

করোনা তাণ্ডবে দেশ লকডাউনে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। লকডাউন চলতে থাকলে বেকারত্বের হার বাড়বে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। 

করোনার এই সংকটের সময় আপনি ঘরে বসেই আয় করতে পারেন। আসুন জেনে নেই কীভাবে ঘরে বসেই আয় করা যায়:

অনলাইন মার্কেটিং

আপনি কি বেশির ভাগ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো (যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি) ব্রাউজ করা পছন্দ করেন? তাহলে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য আপনি কেন এ প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করছেন না? আপনি অনলাইনে যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কোনো পণ্যের (অন্য সংস্থার উৎপাদিত) প্রচার চালাতে পারেন, যেখানে আপনি অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে বা ফলোয়ার পেতে পারেন। কোনো ফলোয়ার যদি আপনার পোস্টকৃত লিংকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন থেকে পণ্য ক্রয় করে তাহলে সহজেই আপনি সেখান থেকে একটি কমিশন উপার্জন করতে পারবেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনলাইনে অর্থ উপার্জনের একটি জনপ্রিয় উৎস। বিভিন্ন সংস্থার দেয়া লোভনীয় অ্যাফিলিয়েট কমিশন কাঠামোর কারণে অনেকেই বর্তমানে পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে এটিকে গ্রহণ করছে। আপনার যদি কিছু এসইও জ্ঞানের সাথে ভালো লেখার এবং ভিডিও তৈরি করার দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি ব্লগ বা ইউটিউবের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে উপার্জন করতে পারবেন।

অনলাইন গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ 

আপনি যদি অ্যাডোব ফটোশপ  অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটরের মতো সাধারণ গ্রাফিক সফ্টওয়্যার পরিচালনায় দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে অনলাইনেই কাজ পেতে এবং ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মগুলো লোগো ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, ব্রোশিওর ডিজাইন ইত্যাদির মতো ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য গ্রাফিক ডিজাইনার নিয়োগ করে থাকে।

অনলাইন টিচিং ও টিউটরিং

অনলাইনে শেখান ও আপনার জীবনকে সুন্দর করুন। নিজের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে টিউটোরিয়াল তৈরি করতে পারেন এবং লিংকডইন ডটকমের মতো জায়গায় আপনার সোস্যাল মিডিয়া প্রোফাইল প্রচার করতে পারেন। শুরুতে নামমাত্র ফি বা বিনামূল্যে প্রাথমিক স্তরের কিছু কোর্স দিয়ে শুরু করতে পারেন। এরপর শ্রোতা বা দর্শকদের কাছ থেকে সাড়া পেলে আরও ভালো কিছু কোর্স সরবরাহ করুন।

অনলাইনে লেখার কাজ: আপনার যদি লেখার প্রতি স্বাভাবিক উৎসাহ থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন স্থানীয় এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ করতে পারেন। আপনি কোনো শিক্ষানবিশ লেখক বা বিশেষজ্ঞ গবেষক হোন না কেন, অনুবাদের কাজ, গেস্ট, ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, একাডেমিক এবং বই লেখাসহ গবেষণার মতো ফ্রিল্যান্স কাজও আপনি খুঁজে পেতে পারেন। অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এ কাজ আপনাকে অন্য মানুষদের আলোকিত করার সুযোগ দেবে।

অনলাইন প্রোগ্রামিং

আপনি যদি কোডিং পছন্দ করেন? পিএইচপি, পাইথন, সি#, জাভা ইত্যাদির মতো কোনো প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষতা থাকলে আপনি অনলাইনে কাজ পেতে পারেন। দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে আপনি ফ্রিল্যান্স প্রোগ্রামিং কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন।

দক্ষতাভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং

আপনি ডিজাইনার, লেখক বা প্রোগ্রামার না হয়ে থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। ইন্টারনেটে বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাজের সুযোগ রয়েছে। আপনার যদি ব্যবসার পরিকল্পনা, প্রকল্প পরিচালনা, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি জ্ঞানের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি আন্তর্জাতিক বাজারে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজের খোঁজ করতে পারেন।

সরবরাহের কাজ

এখন পর্যন্ত আমরা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আলোচনা করেছি যেখানে দক্ষ ব্যক্তিরা অনলাইনে তাদের দক্ষতা বিক্রয় করতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি অনলাইনে বিক্রয় করার জন্য বিশেষ কোনো দক্ষতা না থাকে তাহলে সংসার চালানোর মতো কাজ কীভাবে খুঁজে পাবেন তাই ভাবছেন? চিন্তার কিছু নেই, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।

বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনলাইন শপের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মুদি, রান্না সামগ্রী, ওষুধ, শিশুদের বিভিন্ন পণ্যসহ নানা ধরনের পণ্য অনেকে অনলাইনেই অর্ডার করছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রতিষ্ঠান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পণ্য সরবরাহ করার জন্য বাড়তি লোকবল নিয়োগ করছে। একজন সুস্থ ব্যক্তির যদি একটি মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল থেকে থাকে তাহলে তিনি সহজেই সরবরাহ কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন।

তবে দক্ষতার সাথে মিল রেখে একটি সুনির্দিষ্ট কাজের সন্ধান পেতে আপনাকে এ প্ল্যাটফর্মগুলোতে গভীরতর গবেষণা করতে হবে। ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসায় করার বেশ কিছু নিয়ম নীতি আছে। বিশেষ করে ই-কমার্স নিয়ে টুকিটাকি ধারণা ছাড়াই এ ব্যবসায় নেমে পড়া বিপদজনক। তাই অনলাইনে ব্যবসায় করার আগে এ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। চলুন জেনে নিই অনলাইনে ব্যবসায় করার কৌশল- 

চাহিদা সম্পন্ন পণ্য বাছাই

অনলাইনে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, সেটা নির্বাচন করা জরুরি। বেশিরভাগ মানুষই পণ্য ও বাজার নিয়ে রিসার্চ করতে ভুল করে। সম্ভাবনা যাচাই করার কৌশল অনেকটা এরকম যে, আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে কোন মানুষ কি খুঁজছে এবং তাদের চাহিদা। যদিও কাজটা বেশ জটিল তবে ইন্টারনেট এই ধরণের বাজার গবেষণা খুবই সহজ করে দিয়েছে। যেমন: আপনি বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে যান এবং দেখুন মানুষ কি ধরনের প্রশ্ন করে এবং কি ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।

সুযোগ থাকলে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করুন। রিসার্চ করে জানুন, মানুষ কি ধরনের কি-ওয়ার্ড বেশি অনুসন্ধান করে। প্রয়োজনে প্রতিযোগীদের সাইট ভিজিট করুন। জানার চেষ্টা করুন, তাদের গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ ও গ্রাহক চাহিদা অনুসন্ধানের জন্য কি কি করছে। অথবা কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। প্রতিটি বিষয়কে নোট করুন। আপনি রিসার্চ করে যা যা পেলেন তা দিয়ে একটি পণ্যের লিস্ট তৈরি করুন।

বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নতুনত্ব

অনেকেই অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করছে। এরমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। ফলে অনলাইনে ব্যবসায় করতে গেলে অবশ্যই নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেমন-

১. পণ্যের আকর্ষণীয় শিরোনাম।

২. পণ্যের সঠিক বর্ণনা।

৩. সময়োপযোগী মূল্য ছাড়।

৪. সম্ভব হলে পণ্যের সঙ্গে গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টি যুক্ত করা।

৫. পণ্যের ছবির সঙ্গে ভিডিও রাখা।

৬. সঠিক পণ্য বিক্রয় করা।

পেইজ বা ওয়েবসাইট তৈরি করা

পণ্য নির্বাচন করার পর ব্যবসায়ের জন্য দুর্দান্ত একটি ওয়েব সাইট তৈরি করা সময়ের দাবি। তবে অনেকেই এখন ওয়েবসাইট তৈরির আগে ফেসবুকে ব্যবসায় করছেন। এক্ষেত্রে ফেসবুক পেইজ ওপেন করে সেখানে মার্কেটিং করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল মাথায় রাখা জরুরি-

১. পণ্যের বর্ণনা তথ্যবহুল করার চেষ্টা করুন করা

২. ওয়েবসাইটে ক্রেতার মন্তব্য জানানোর অপশন রাখুন।

৩. ফেসবুক পেইজে ব্যবসায় করলে বিজনেস ম্যানেজার ব্যবহার করে ব্যবসায় পরিচালনা করুন।

৪. পেইজে নিয়মিত পণ্যের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করুন।

৫. ক্রেতাদের মন্তব্য যুক্ত করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিন

অনলাইন ব্যবসা করতে গেলে ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়। আপনি যদি পণ্যের সেল বৃদ্ধি করতে চান এবং ব্যবসায়কে দ্রুত প্রসার করতে চান তাহলে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিকল্প কোন কিছু নেই।

দ্রুত ডেলিভারির ব্যবস্থা করা

অনলাইন ব্যবসায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ডেলিভারি। পণ্য ঠিকঠাক মত ডেলিভারি না করতে পারলে ক্রেতাকে আকর্ষণ করা সম্ভব হবে না। ফলে ব্যবসায় নামার আগেই ভালো মানের কুরিয়ার সার্ভিস বা ডেলিভারির সঙ্গে যুক্ত এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে যারা ব্যবসায় নামবেন, তাঁদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। বিশেষ করে  শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতে যারা প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যবসা শুরু করবেন, তাঁরা ভালো করবেন। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বা হলোগ্রামের সংযোজন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে দর্শক ও অংশগ্রহণকারীদের কাছে। যারা নতুনভাবে উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা তাঁদের উদ্যোগে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh