ক্রীড়া উন্নয়নে প্রয়োজন মন্ত্রণালয়ের তদারকি

মোস্তাফা তারিক আল বান্না

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২১, ১১:৩৮ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর চলছে। সময়ের তুলনায় আমরা কি ক্রীড়াঙ্গনে এগিয়ে যেতে পেরেছি? কেউ হয়তো ক্রিকেট ও আর্চারিকে উন্নতির উদাহরণ দিবেন। তাহলে বাকি ত্রিশের অধিক খেলার হিসেব কে দেবে? সেটা অবশ্যই ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। অথচ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরষ্কৃত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। 

বাংলাদেশের খেলাগুলোকে প্রথমে তিন ভাগে ভাগ করা দরকার।

এক. উন্নত খেলাগুলো। আপাতত ক্রিকেট ও আর্চারিকে উন্নত খেলা হিসেবে ধরা যায়। ক্রিকেটে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছে। ক্রিকেটের দেখভাল করার জন্য সক্রিয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তারপরও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটা দায়িত্ব রয়েছে। বিসিবি ক্রিকেটকে সঠিক পথে রেখেছে কী না, সেটার দিকে নজর রাখা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। প্রয়োজনে তারা বিসিবির কাজে হস্তক্ষেপ করবে। ক্রিকেটকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে বিসিবির ভালো কোনো পরিকল্পনা বা পদক্ষেপই নেই। তাই বিসিবির কাজকর্মে নজর রাখতে হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। আর্চারিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অঙ্গনে খেলছে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু সুনামও অর্জন করেছে। আর্চারি ফেডারেশন বেশ সক্রিয় রয়েছে বলেই বিশ্বকাপ আর্চারির একটি ইভেন্টে বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছে। এই কৃতিত্ব ধরে রাখতে আর্চারি ফেডারেশনের পাশে থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। 

দুই. ফুটবল, হকি, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, শুটিং, নৌকাবাইচ, দাবা ও অ্যাথলেটিক্স- এই খেলাগুলোতে বাংলাদেশ তেমন উন্নত নয়, কিন্তু এগুলোর জনপ্রিয়তা ও সম্ভাবনা আছে। সেটা কাজে লাগিয়ে খেলাগুলোর উন্নতি করতে হবে। এখানে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনেক বেশি দায়িত্ব রয়েছে। ফুটবল ও হকি তিন- চার দশক আগে ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে, ছিল সম্ভাবনাময় খেলা। শুধু ফেডারশনের গাফিলতিতে খেলা দুটি আজ সব হারিয়ে ধ্বংসের পথে। শুটিং মাত্র কয়েক বছর আগে কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমসে দারুন সুনাম কুড়ায়; কিন্তু শুটিং ফেডারেশন খেলাটি থেকে প্রাপ্ত সুনাম টিকিয়ে রাখতে কোনো ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে কী না আমাদের জানা নেই। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। অথচ, এই খেলাটিতে আমরা তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে। ক্রিকেটের যুগেও কাবাডি কিন্তু গ্রামবাংলার জনপ্রিয় খেলা। নদনদীর দেশ বাংলাদেশ। এদেশ বিশ্ব সাঁতারে কেন যে পিছিয়ে আছে, সেটা বোধগম্য নয়। বিশ্বখ্যাতি অর্জনকারী সাঁতারু ব্রজেন দাস, অরুণ নন্দীর উত্তরসূরিরা কেন এত পিছিয়ে থাকবে, তা খতিয়ে দেখতে হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেই। আর সাঁতার ফেডারেশনকেও সক্রিয় করে তুলতে হবে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় ব্যাডমিন্টনে। অথচ, ব্যাডমিন্টনে আমরা সাফ অঞ্চলেই পিছিয়ে, গেমস বা অলিম্পিক গেমস তো স্বপ্ন। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনকে যেভাবেই হোক সক্রিয় করতে হবে। আর এ কাজটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের। দাবা ও অ্যাথলেটিক্স সারাবছর ধরে চলে। অথচ, আমরা খেলা দুটি থেকে ভালো কিছু পাচ্ছি না। বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। 

তিন. বেশ কিছু খেলা আছে কাগজে-কলমে। ফেডারেশন আছে, মাঠে নিয়মিত খেলা নেই, খেলা থেকে আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জনের আপাতত কোনো সম্ভাবনাও নেই। শরীর চর্চা, বেসবল, বাস্কেটবল, জিমনাস্টিক্স, ভলিবল, হ্যান্ডবল, ক্যারম, খো খো, কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধসহ বহু খেলার আসলেই কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এসবে শক্ত দৃষ্টি দিতে হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। এই সব খেলায় কারো আগ্রহ নেই, ফেডারেশনগুলো নিষ্ক্রিয়, আন্তর্জাতিক সুনাম দুঃস্বপ্ন। 

ক্রীড়া মন্ত্রণালয় একটি দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু ক্রীড়াপ্রেমী, ক্রীড়া সম্ভাবনাময়ী, তাই একটু সজাগ ও সক্রিয় হলে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনেক কৃতিত্বের ভাগীদার হতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। মন্ত্রণালয়টি একটু পদক্ষেপ নিলেই ঠিক স্বাধীনতা পরবর্তীকালের মতো ক্রীড়ায় উন্মাদনা আনা সম্ভব। যখন দেখা যেত, পত্র পত্রিকার অন্যতম প্রধান শিরোনামই থাকতো মোহামেডান - আবাহনীর ফুটবল, হকি কিংবা ক্রিকেট লড়াই নিয়ে। আবারও সে অবস্থা ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন কিছু নয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh