সমন্বয়হীনতায় সীমাহীন দুর্ভোগে ৪৯ নং ওয়ার্ডের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২১, ০৯:৩৬ পিএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১, ১২:৩০ এএম

আশকোনার আব্বাসীয়া মাদ্রাসা এলাকায় রাস্তা কেটে নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেন।

আশকোনার আব্বাসীয়া মাদ্রাসা এলাকায় রাস্তা কেটে নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৯ নং ওয়ার্ডের আশকোনা, গাওয়াইর ও কাওলার বাসিন্দাদের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। ছোটবড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা সড়ক এবং বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। দেখার যেন কেউ নেই। সম্প্রতি এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আশকোনা সিটি কমপ্লেক্সের পেছনের অংশের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে আশকোনার আব্বাসীয়া মাদ্রাসা এলাকায় ভেকু দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ওই এলাকা দিয়ে জমাট পানি নিষ্কাশিত হবে। কিন্তু এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আব্বাসীয়া মাদ্রাসা এলাকার বাসিন্দারা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অগ্রিম নোটিশ না দিয়েই কয়েকদিন আগে ভেকু নিয়ে তাদের এলাকায় ড্রেন কাটতে আসেন ৪৯, ৫০ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা। এ সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে স্থানীয়দের বাধায় পিছু হটেন তারা। এরপর দক্ষিণখান অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদকে বিষয়টি অবগত করা হয়। তখন তিনি আশ্বস্ত করেন, স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ করলে ভেকু দিয়ে স্থাপনা অপসারণ করা হবে না। কিন্তু গতকাল ৩ জুন ওই এলাকায় ভেকু নিয়ে আসেন সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। এরপর ভেকু অপারেটরকে স্থাপনা ভাঙার নির্দেশনা দিয়ে সটকে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ভুক্তভোগী জানান, কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই তাদের চলাচলের রাস্তা কেটে ড্রেন বানানো হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আমরা নিজ উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ করতে চাইলেও আমাদেরকে সময় দেয়া হয়নি। এর আগেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙচুর করা হয়েছে। এখন আমাদের এলাকায় পানি জমে গেছে, বাসা থেকে বের হতে পারছি না।

ভুক্তভোগীর বাবার ভাষ্য, আমরা নিজ উদ্যোগে এখানে রাস্তা বানিয়েছি। প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করেনি। এখন কোনো রকম নোটিশ না দিয়ে জোরপূর্বক আমাদের স্থাপনা ভাঙচুর করেছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।

ড্রেন নির্মাণের আগে রাস্তার চিত্র।

জানা যায়, ডিএনসিসির ৪৯ নং ওয়ার্ডে গ্যাস, পানি আর জলাবদ্ধতায় নাকাল এলাকার মানুষ। সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। নেই পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় বেশিরভাগ এলাকা ঘিঞ্জি। যত্রতত্র ফেলা হয় আবর্জনা। ভাঙাচোরা রাস্তায় জমে থাকে বৃষ্টির পানি-কাদা, বাসা বাড়ির মলমূত্র আর আবর্জনা। এলাকার প্রায় প্রতিটি সড়কেই খানাখন্দে ভরা। সেই খানা খন্দের মধ্যে ইট-সুরকি ফেলে সাময়িক সংস্কার করা হলেও নেই কোনো স্থায়ী সমাধান। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যায় হাঁটুপানি। বিশেষ করে হজ ক্যাম্পের পাশে যে একটি বিশাল জলাধার ছিল সেটি ভরাট করায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। ওদিকে বিমানবন্দর সড়কের পাশের নর্দমাও ভরাট করা হয়েছে এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য। আগে এই পথ দিয়ে পানি খিলক্ষেত হয়ে নামাপাড়া দিয়ে বালু নদের দিকে চলে যেত। সেই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ৪৯, ৫০ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষদের। তাদের সমস্যা নিরসনে এলাকার সবার সঙ্গে আলোচনা করে পানি নিষ্কাশনের ম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। এখন ১০ জন মানুষের জন্য তো এক লাখ মানুষকে বিপদে ফেলা যাবে না।

ভুক্তভোগীদের সমস্যা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেবেন, এমন প্রশ্ন করলে এই নারী কাউন্সিলর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। 

অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ৪৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম দুর্ভোগের জন্য সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন।

তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ম্যাপ কারা বানায়? সিটি কর্পোরেশন বলে একভাবে, এমপি সাহেব বলেন আরেকভাবে, আবার মহিলা কাউন্সিলর বলেন আরেকভাবে। আমার ওয়ার্ডের অনেক কাজ আমাকে না জানিয়ে করা হয়। পরে সব কিছুর দায় আমার ওপরে পড়ে। এখন যেভাবে ম্যাপ করা হয়েছে সেভাবে পানি নিষ্কাশিত হবে। ম্যাপের বাইরে যাওয়া যাবে না।

ভুক্তভোগীদের সমস্যার সমধান কবে হবে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমি গুরুতর অসুস্থ, এক মাস আগে ভারত থেকে মেজর অপারেশন করে এসেছি। এখন আর কথা বলতে পারব না।

এই বিষয়ে দক্ষিণখান অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, আমাদের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করতে হবে। এখন যার বাড়ি সামনে দিয়ে ড্রেন কাটা হবে তিনি সাফারার হবেন, এটাই স্বাভাবিক। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা উঁচু এবং ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড নিচু। তাই এদিক দিয়েই পানি নিষ্কাশিত হবে। ম্যাপের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পানি নিষ্কাশন করতে যদি কারো বাড়ি ভাঙতে হয়, তাহলে তা-ও আমরা ভাঙব।

ভুক্তভোগীদের সমস্যা নিরসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের জনবল ও আর্থিক সংকট রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভুক্তভোগীরা আবেদন করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আপাতত অপেক্ষা করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh