তার্কিশ রূপকথা
এহসান হায়দার
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২১, ১১:৫৪ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৯:৩১ এএম
প্রতীকী ছবি
তুরস্ক দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আনাতোলিয়া উপদ্বীপের সম্পূর্ণ অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। ফলে ভৌগোলিকভাবে দেশটি একইসঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আনাতোলিয় অংশটি তুরস্কের প্রায় ৯৭ ভাগ আয়তন গঠন করেছে। এটি মূলত একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি। আনাতোলিয়ার উপকূলীয় এলাকায় সমভূমি দেখতে পাওয়া যায়। তুরস্কের দক্ষিণ-ইউরোপীয় অংশটি ত্রাকিয়া নামে পরিচিত; এটি আয়তনে তুরস্কের মাত্র ৩ ভাগ হলেও এখানে তুরস্কের ১০ ভাগ জনগণ বাস করে। এখানেই তুরস্ক ও গোটা ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইস্তাম্বুল অবস্থিত। ভূ-মধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগরকে সংযুক্তকারী বসফরাস প্রণালি, মর্মর সাগর ও দার্দানেলেস প্রণালি ত্রাকিয়া ও আনাতোলিয়াকে পৃথক করেছে।
বর্তমানের ধর্ম নিরপেক্ষ তুরস্ক শিল্প-সাহিত্যে একটি উঁচু স্থানে রয়েছে পৃথিবীতে। আধুনিক তুর্কি সাহিত্য ও অন্যান্য রচনায় ইসলামি বিশ্বের ছাপ স্পষ্ট বহুকাল ধরে। তুর্কি সাহিত্যে পারস্য ও আরব সাহিত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় সবচেয়ে বেশি। এক সময় তুর্কি লোকসাহিত্যে ইউরোপীয় সাহিত্যের প্রভাব বেড়ে গেলেও এখন তা আবার ধীরে ধীরে কমছে। তুরস্কের সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। গ্রিক, রোমান, ইসলামিক ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশ্রণে তাদের একটি সংকর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অটোমান সম্রাটদের সময় তুরস্কে পশ্চিমা সংস্কৃতি ভিড়তে থাকে। ১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সময় সাংস্কৃতিক জগতের আধুনিকায়নে মনোযোগী হয়েছিল। ললিতকলার বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে জাদুঘর, থিয়েটার, অপেরা হাউস এবং অন্যান্য স্থাপত্যসহ বিভিন্ন শাখায় এসব বিনিয়োগ করা হয়। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে তুরস্কে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে পৃথক করা হয়। তবে দীর্ঘদিন পর সে ব্যবস্থায় আবার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তুরস্কের লোকগল্প বা উপকথা কিংবা রূপকথা যা-ই বলি না কেন, তা অতিসমৃদ্ধ। অলিক ভাবনার এক একটি উপকথা আনাতোলিয়ান মালভূমির চারপাশকে ঘিরে রয়েছে। ক্ষুরধার এই কল্পকাহিনিগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্য আর সাহিত্য দুইয়ে মিলে এক অপূর্ব সমন্বয়ের সৃষ্টি করেছে। আরব্য রজনির গল্প, গ্রিম ভাইদের রূপকথা, লুইস ক্যারোলের রূপকথা, অ্যান্ড্রু ল্যাঙের অদ্বিতীয় কথক ভঙ্গির লোকগাথা অথবা পৃথিবীর সেরা রূপকথার রূপকার ডাচ লেখক হান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্দেরসেন এবং আমাদের দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের রূপকথার বিপুল রাজ্যের মতোন তুর্কি ভাষার লোকগাথা সংগ্রহের উদ্যোগে নেন ইগনাক কুনোস। তুরস্কের আনাচে-কানাচে কথিত রূপকথা এবং লোকগাথাগুলোকে নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করে ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষায় রূপদান করেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান ও তুর্কি ভাষাবিদ এবং উপকথা গবেষক ইগনাক কুনোস। ইংরেজিতে অনূদিত সেই সংকলনটির নাম ছিল- ‘ফোর্টি-ফোর তার্কিস ফেয়ারি টেলস্’। কুনোসের সংগ্রহে বিপুল লোকগল্প ছিল। তিনি মনে করতেন- আনাতোলিয়ানরা কখনো না কখনো কুড়িয়ে নেবে দামি পাথরের মতো তার সংগৃহীত এ গল্পগুলো। সম্প্রতি তুরস্কে ‘মাসাল’ নামের একটি বৃহৎ প্রজেক্টের মাধ্যমে দশ হাজার গল্প সংগ্রহ ও পুনর্লিখনের কাজ চলছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুর্কি রূপকথা পৌঁছে দিতেই উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। আতাতুর্ক কালচারাল সেন্টারের এই প্রজেক্টটির মাধ্যমে তুরস্কে প্রথমবারের মতো লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে।
পরবর্তীকালে কুনোসের সংগৃহীত তুরস্কের এই উপকথা সংকলনটি হাঙ্গেরিয়ান ও ইউরোপীয় ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে কুনোস ভাষাবিদ হওয়ার পাশাপাশিও একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য ছিলেন। এই রূপকথাটিও কুনোসের সেই ‘ফোর্টি-ফোর তার্কিস ফেয়ারি টেলস্’ নামক তুর্কি দেশের লোকগল্পের সংকলন থেকে সংগৃহীত। গল্পটির ইংরেজি গ্রন্থে এর মূল নাম রয়েছে -‘দ্য রোজ-বিউটি’।
***
অনেক আগেকার কথা, যখন উট ছিল একজন ঘোড়া ব্যবসায়ী, ইঁদুর ছিল একজন মুচি, কোকিল ছিল একজন দর্জি, কচ্ছপ ছিল একজন রুটিওয়ালা; কিন্তু গাধা চিরকালই ভৃত্য হয়ে রইল। সেখানে একজন ঘানিওয়ালা ছিল। তার পোষ্য কালো রঙের একটি বিড়াল ছিল। ঘানিওয়ালার পাশাপাশি সেখানে একজন বাদশাহ বসবাস করতেন। তাঁর তিনজন কন্যা ছিল, তাদের বয়স যথাক্রমে চল্লিশ, ত্রিশ এবং কুড়ি বছর।
একদিন বড় কন্যা তার ছোট বোনের কাছে এসে তার পিতার উদ্দেশে চিঠি লিখে দেওয়ার জন্য আর্জি করল।
‘প্রিয় বাবা,
আমার বড় বোন চল্লিশ বৎসর এবং মেজো বোন ত্রিশ বৎসর বয়সে পদার্পণ করেছে, কিন্তু তাদের এখনো বিয়ে হয়নি। আমি তোমাকে এই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, স্বামীকে পাওয়ার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করা আমার জন্য সম্ভব নয়।’
বাদশাহ চিঠিটি পড়ার পর তার তিন কন্যাকে ডেকে পাঠালেন এবং তাদের উদ্দেশ করে বললেন- ‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্য এখানে একটি করে ধনুক এবং তীর রাখা আছে। যাও এবং তীরগুলো নিক্ষেপ করো। তোমাদের তীর যেখানে এসে ভূমিষ্ট হবে, সেখানেই তোমরা তোমাদের ভবিষ্যতের জীবন সাথীদের খুঁজে পাবে।’
বাবার কাছ থেকে অস্ত্রগুলো নিয়ে তিন তরুণী বাইরে চলে গেল। প্রথমে বড় কন্যা তীর নিক্ষেপ করল, তার তীরটি গিয়ে পড়ল মন্ত্রী পুত্রের প্রাসাদের মধ্যে। তখন জ্যেষ্ঠ কন্যা তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। দ্বিতীয় কন্যাটি তীর নিক্ষেপ করল এবং সেটি গিয়ে পড়ল শেখ-উল-ইসলামের পুত্রের প্রাসাদে। ফলস্বরূপ মেজো কন্যাটি তাকে তার স্বামী হিসাবে নির্বাচন করল। এবার কনিষ্ঠ কন্যা তীর নিক্ষেপ করল, তার তীরটি গিয়ে পড়ল এক কাঠুরিয়ার কুঁড়ে ঘরে।
‘এটিকে গোনা হবে না,’ সকলে উচ্চস্বরে বলে উঠল। সুতরাং সে তার তীর আরও একবার নিক্ষেপ করল। দ্বিতীয়বারও তীরটি একই জায়গায় এসে পড়ল। এমনকী তৃতীয়বারেও কোনোরকম সফলতা আসল না।
তখন চিঠি লেখার জন্য শাহ তার কনিষ্ঠ কন্যার প্রতি ক্ষেপে গেলেন। রেগে-মেগে শেষে বললেন- ‘তুমি একটা বোকা মেয়ে! উচিত শিক্ষা পেয়েছো। তোমার বড় বোনেরা স্থিরতার সঙ্গে অপেক্ষা করেছে, ফলে তারা তাদের পুরস্কার পেয়েছে।
কিন্তু তুমি! কনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তুমি আমাকে অপ্রাসঙ্গিক চিঠি লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছ। সুতরাং তুমি তোমার প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছ। কাঠুরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে এই স্থান ত্যাগ করো।’ এরপরে দুর্ভাগা কনিষ্ঠ মেয়েটি কাঠুরিয়াটিকে তার স্বামী রূপে গ্রহণ করে তার পিতার রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করল।
বহুবছর অতিক্রান্ত হবার পর তাদের কোল আলো করে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিল। তাদের সন্তানকে এই গরিবের কুঁড়ে ঘরে থাকতে হবে শুনে কাঠুরিয়ার স্ত্রী তীব্র দুঃখ পেল। যখন সে কান্নায় ভেঙে পড়ল, তখন তিনটি পরী কুঁড়ে ঘরের প্রাচীর ভেদ করে গুমোটপূর্ণ কক্ষে প্রবেশ করল। সেখানে তার ছোট্ট শিশুটি ঘুমিয়ে ছিল। খাটের সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকেই তাদের হাত প্রসারিত করে ঘুমন্ত শিশুটিকে আশীর্বাদ করল।
প্রথম পরীটি বলল, ‘তাকে গোলাপ সুন্দরী নামে ডাকা হবে; এবং তার চোখ দুটি দিয়ে অশ্রু-বিন্দুর পরিবর্তে মুক্তো নির্গত হবে।’
দ্বিতীয় পরীটি বলল, ‘যখন সে হাসবে, তখন গোলাপেরা প্রস্ফুটিত হবে।’
তৃতীয় পরীটি বলল, যখনই তার পায়ের পাতা যুগল ঘাসের অগ্রভাগ স্পর্শ করবে, তখন প্রকৃতির বুকে বসন্তের আগমন ঘটবে!’ তারপর সেই তিনটি পরী যে পথ দিয়ে এসেছিল, সেই পথেই অদৃশ্য হয়ে গেল।
বছরের পর বছর কেটে গেল। শিশুটি ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। সে এবার বারো বছর বয়সে পদার্পণ করল। এইরকম অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠা এর আগে কারো চোখে পড়েনি। তাকে দেখা মাত্রই সকলের মনে তার প্রতি স্নেহ এবং ভালোবাসার কুড়ি প্রস্ফুটিত হতো। তার হাসিতে গোলাপেরা পাপড়ি মেলে হাসত, যখন সে কান্না করত তখন তার দু-চোখ দিয়ে মুক্তো ঝরে পড়ত এবং যখন সে তার পায়ের পাতাযুগল ঘাসের ওপর ফেলত তখন যেন সবুজ ঘাসেরা নতুন করে তাদের প্রাণ ফিরে পেত। ক্রমেই তার সৌন্দর্যের খ্যাতি পৃথিবীর দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ল।
একদিন গোলাপ-সুন্দরী সংক্রান্ত এই খবরটি সেই সময়ের এক রাজপুত্রের মায়ের কানে এসে পৌঁছাল। এই তরুণী ছাড়া আর কাউকেই তিনি নিজের পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করবেন না- এই বিষয়ে তিনি দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ হলেন। তিনি তার পুত্রকে ডেকে বললেন-এই শহরে একজন তরুণী থাকে, যার হাসি গোলাপের মতো, কান্না মুক্তোদানার মতো এবং যার পায়ের পাতা সবুজ ঘাসেদের প্রাণ দান করতে সক্ষম; সুতরাং তার তরুণীটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা উচিত।
পরীরা আগে থেকেই রাজপুত্রটিকে স্বপ্নের মাধ্যমে তরুণীটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়েছিল। এইভাবেই রাজপুত্রটির মনে অজানা সেই তরুণীটির জন্য ভালোবাসার জন্ম নিয়েছিল; কিন্তু, সে ছিল লাজুক প্রকৃতির। ফলে সে তার মায়ের কাছে তার আবেগকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলো। সুলতানা তাঁর পুত্রকে এই বিবাহের রাজি করানোর জন্য জোরাজুরি করলেন এবং অবশেষে তিনি রাজপ্রাসাদের একটি মহিলাকে আদেশ দিলেন রাজপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে সেই তরুণীর খোঁজ করার জন্য। পরিশেষে তারা তরুণীটির কুঁড়ে ঘরে প্রবেশ করল। তারপর তারা তাদের উপস্থিতির উদ্দ্যশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিলো এবং আল্লাহের নাম স্মরণ করে মহিলাটি তাদের শাহজাদার জন্য তাদের কন্যার হাত চাইল। গরিব মা-বাবা তাদের এই সৌভাগ্যের জন্য আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। তারা তাদের কন্যাকে প্রতিশ্রুতি দিলো এবং তরুণীটির প্রস্থানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করল।
রাজপ্রাসাদে সুলতানার ননদের একজন কন্যা সন্তান ছিল। সে সব সময় গোলাপ-সুন্দরীর সঙ্গে তার কন্যার রূপের সাদৃশ্যতা খুঁজে বেড়াত। বিবাহের জন্য তার কন্যার পরিবর্তে গোলাপ-সুন্দরীকে শাহজাদার উপযুক্ত কন্যা হিসেবে নির্বাচনের খবর শুনে সে ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠল। সে লোকজনদের দিকে প্রতারণার জাল বিছিয়ে দিল এবং শাহজাদার বিবাহে তার একমাত্র কন্যাকে এনে উপস্থিত করল। বিবাহের দিনে সে কাঠুরিয়া কন্যাকে লবণাক্ত খাবার খেতে দিলো। জলের পাত্র এবং বড় একটি ঝুড়ি সঙ্গে নিয়ে বিবাহ-যান নিয়ে গোলাপ-সুন্দরী, নিষ্ঠুর মহিলা এবং তার কন্যা রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করল।
মাঝপথে তরুণীটি প্রচণ্ড জলতেষ্টা পেলো। সে দু-ফোঁটা জলের জন্য আকুতি মিনতি করতে লাগল। রাজপ্রাসাদের দুষ্টু ক্ষমতাশালী মহিলাটি উত্তরে বলল- ‘তুমি তোমার একটি চোখ আমাদেরকে দিয়ে দাও, তার পরিবর্তে আমি তোমাকে জল দান করবো।’ প্রচণ্ড তৃষ্ণায় তরুণীর প্রাণ যায় যায় করছে। এমন অবস্থায় সামান্য পরিমাণ জলের জন্য সে তার একটি চোখ নির্দয় মহিলাটির কাছে সমর্পণ করল।
তারা পুনরায় সম্মুখ পথে এগিয়ে চলল। তৃষ্ণার যন্ত্রণা অসহায় তরুণীটিকে আবার পীড়া দিতে শুরু করল। সে তখন মহিলাটির কাছে পুনরায় জলের জন্য আর্জি করতে লাগল। ‘শুধুমাত্র তোমার অপর চোখটির পরিবর্তেই আমি তোমাকে জল দিতে পারবো,’ মহিলাটি উত্তর দিলো। ভাগ্যের পরিহাসে জর্জরিত অসহায় তরুণীটি তার অপর চোখটিও তার কাছে সমর্পণ করল। দুষ্টু মহিলাটি গোলাপ-সুন্দরীর প্রাণবন্ত এবং সুন্দর চোখ দু’টির অধিকারীনী হলো। সে দৃষ্টিহীন গোলাপ-সুন্দরীকে ঝুড়ির মধ্যে আবদ্ধ করে পর্বতের চূড়ায় নিয়ে গেল।
তারপর নিষ্ঠুর মহিলাটি দ্রুত রাজপ্রাসাদে ফিরে এলো এবং তার কন্যাকে সুন্দর একটি বিবাহ পোশাক পরিয়ে শাহজাদার সামনে উপস্থিত করে বলল, ‘তোমার হবু স্ত্রী চলে এসেছে।’ তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হলো; কিন্তু শাহজাদা যখন তার স্ত্রীর মুখমন্ডল থেকে বোরখাটি সরালো, তখন সে বুঝতে পারলো এটি তার স্বপ্নে আসা সেই সুন্দরী তরুণীটি নয়। যদিও সে কিছুটা হলেও স্বপ্নকনের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত, ফলে শাহজাদা চুপ করে রইল।
শাহজাদা জানত তার স্বপ্নে আগত তরুণীটির কান্নায় মুক্তো ঝরে, তার হাসি প্রস্ফুটিত গোলাপের মতো এবং তার চরণতলের স্পর্শে সবুজ ঘাসেরা তাদের প্রাণ ফিরে পায়; কিন্তু যে তরুণীটি এসেছে তার কান্নায় মুক্ত ঝরে না, তার হাসিতে গোলাপেরা হাসে না এমনকি তার চরণ তলের স্পর্শে দূর্বা ঘাসেরাও সজীবতা লাভ করে না। সে প্রতারণার শিকার হয়েছে, এই বিষয়টি সে আগের চেয়ে আরও সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারল।
‘খুব শিগগিরই আমি বিষয়টি প্রকাশ্যে আনবো,’ সে মনে মনে চিন্তা করল এবং কারো সঙ্গেই সে এই বিষয় সংক্রান্ত কোনোরকম আলোচনায় জড়ালো না।
ইতিমধ্যেই অসহায় গোলাপ-সুন্দরী পর্বতচূড়ায় গুনগুন করে কাঁদতে লাগল-যেন ঝুড়ির মধ্যে দৃষ্টিহীন চোখ দুটির শূন্যস্থান থেকে মুক্তো ঝরছে এবং মুক্তদানাগুলো তার দুই গাল বেয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছে, যা ঝুড়ি চুঁইয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে। একজন ঝাড়ুদার রাস্তার ধারে কাজ করতে করতে হঠাৎ কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল এবং সে যথারীতি ভয়ার্ত কন্ঠে চিৎকার করে করে বলল, ‘এটি কে, আত্মা নাকি কোনো পরী?’
তরুণীটি প্রত্যুত্তরে বলল, ‘না কোনো আত্মা, না কোনো পরী। আমি তোমার মতোই একজন মানুষ।’
ঝাড়ুদারটি তরুণীটির কথাগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঝুড়িটির সামনে এলো এবং ঝুড়িটি খোলা মাত্রই সে দেখতে পেল দৃষ্টিহীন তরুণীটির চক্ষু গহ্বর থেকে মুক্তো ঝরছে। তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে সে তার দুর্দশাগ্রস্ত কুঁড়ে ঘরে এসে পৌঁছাল। এই সুবিশাল পৃথিবীতে তার নিজের বলতে কেউই ছিল না, তাই সে অসহায় তরুণীটিকে নিজ সন্তান হিসেবে গ্রহণ করল। চোখ দুটি হারানোর ফলে তরুণীটি শোকাহত হলো এবং সে তার দুর্দশার কথা ভেবে সব সময়েই কাঁদতে থাকতো; কিন্তু লোকটির কিছু করবার ছিল না। তরুণীটির চক্ষু গহ্বর থেকে ঝরে পড়া মুক্তোগুলোকে সে সংগ্রহ করে বাইরে বিক্রি করতে শুরু করল। সময় গড়িয়ে গেল। ক্রমেই রাজপ্রাসাদের পরিবেশ আনন্দমুখর হয়ে উঠেছিল কিন্তু ঝাড়ুদারটির অন্ধকার কুঠুরিটি দুঃখ এবং দুর্দশায় ছেয়ে রইল। একদিন গোলাপ-সুন্দরী ঘরের দাওয়ার সামনে বসে বসে কিছু আনন্দময় মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করছিল। সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সম্মুখে একটি প্রস্ফুটিত গোলাপ প্রতীয়মাণ হলো। তরুণীটি ঝাড়ুদারকে বলল, ‘বাবা, এই গোলাপটি নিয়ে তুমি বাদশাহের প্রাসাদে গিয়ে বলবে বিক্রির জন্য তোমার কাছে একটি দুর্লভ গোলাপফুল আছে। যখনই বাদশাহের ফুফি গোলাপটি ক্রয়ের জন্য তোমার কাছে আসবে, তখন বলবে- এটি টাকার বিনিময়ে বিক্রয়যোগ্য বস্তু নয়, এর বিনিময়ে মনুষ্য চোখ চাইবে।’
লোকটি গোলাপটিকে সঙ্গে নিয়ে বাদশাহের প্রাসাদের সামনে এসে উচ্চস্বরে বলতে লাগল- ‘বিক্রয়যোগ্য একটি গোলাপ আছে, পৃথিবীর মধ্যে এটিই একমাত্র দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ।’
প্রকৃতপক্ষেই এটা গোলাপ উৎপাদনের সময় নয়। দুষ্টু ক্ষমতাশালী মহিলাটি ব্যক্তিটির কন্ঠধ্বনি শুনতে পেলো। সে মনে মনে ভাবল- বেগমের কাছে গোলাপটিকে দেখে বাদশাহের বেগমের প্রতি সন্দেহ চিরতরে দূর হয়ে যাবে। সুতরাং সে তার কন্যার জন্য গোলাপ ক্রয় করবার জন্য সংকল্পবদ্ধ হলো। গরিব ব্যক্তিটিকে সে প্রাসাদের ভেতরে ডেকে গোলাপের মূল্য জিজ্ঞাসা করল।
‘টাকার পরিবর্তে ইহা ক্রয়যোগ্য নয়,’ ঝাড়ুদারটি প্রত্যুত্তরে বলল, ‘কিন্তু মনুষ্য চক্ষুর বিনিময়ে আমি এটিকে আপনার কাছে সমর্পণ করতে পারি।’ দুষ্টু মহিলাটি তৎক্ষণাৎ গোলাপ-সুন্দরীর একটি চোখ ব্যক্তিটির সামনে উপস্থাপন করল এবং গোলাপটির বিনিময়ে ইহা ব্যক্তিটিকে দিয়ে দিলো। মহিলাটি সেই গোলাপটি নিয়ে গিয়ে তার কন্যাকে দিলো এবং বেগম ফুলটিকে নিয়ে তার সুন্দর খোঁপাটিতে গুঁজে রাখল। তার দিকে শাহজাদার যখন নজর পড়ল, তখন সে মনেমনে ভাবল এই তরুণীটিই হয়তো সেই তরুণী, যাকে পরীরা শাহজাদাকে স্বপ্নের মধ্যে দেখিয়েছিল। যদিও শাহজাদা এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিল না। এই বিষয়টিকে খুব শিগগিরই পরিষ্কার করতে হবে- এই কথা ভেবে সে নিজেকে সান্ত্বনা দিলো।
ঝাড়ুদার চোখটি নিয়ে গোলাপ-সুন্দরীর কাছে সমর্পণ করল। আল্লাহর নাম স্মরণ করে গোলাপ-সুন্দরী তার চক্ষু গহ্বরে চোখটিকে লাগিয়ে নিলো। আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়ে গোলাপ-সুন্দরী আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। হৃদয়ে আগত আনন্দের জোয়ারে তরুণীটি খুব হাসতে শুরু করল এবং আগের মতো সেখানে প্রচুর প্রস্ফুটিত গোলাপের সমারোহে বৃদ্ধ ব্যক্তিটির বাড়ির উঠান ভরে উঠল। বাগানে প্রস্ফুটিত অসংখ্য গোলাপের মধ্যে থেকে একটি গোলাপ সে ঝাড়ুদারের হাতে দিয়ে পুনরায় বাদশাহের প্রাসাদে গিয়ে তার অপর চোখটি উদ্ধার করে আনতে বলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বাদশাহের প্রাসাদে পৌঁছাল। দুষ্টু মহিলাটি বৃদ্ধটির কাছে গোলাপ দেখে মনে মনে চিন্তা করল, ‘ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাচ্ছে; ইতিমধ্যেই শাহজাদা আমার কন্যাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। আমি আরেকটি গোলাপ কিনবো, এইভাবে যদি তার ভালোবাসা আরও গভীর হতে থাকে তবে খুব শিগগিরই বাদশাহ কাঠুরিয়া-কন্যাকে ভুলে যাবে।’ সে ঝাড়ুদারটিকে ডাকল এবং গোলাপটি নিতে চাইল। প্রত্যুত্তরে বৃদ্ধাটি বলল যে, পূর্ব নির্ধারিত শর্তানুযায়ীই সে এটি বিক্রি করবে। মহিলাটি বৃদ্ধ ব্যক্তিটির শর্তে রাজি হয়ে গোলাপ-সুন্দরীর অপর চোখটি দিয়ে দিলো। উপহার সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধটি যখন ঘরে ফিরে গেল, তখন আর এক মুহূর্তও দেরি না করে দুষ্টু মহিলাটি গোলাপটি সঙ্গে নিয়ে তার কন্যার কাছে এসে উপস্থিত হলো।
এখন গোলাপ-সুন্দরী তার উভয় চোখেরই অধিকারীনী হলো, ফলে তাকে যেন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছিল। তারপর আনন্দিত হয়ে সে তার ঠোঁটে কোণে জ্যোৎস্নাময় হাসি মেখে গোলাপ বাগানের মধ্যে তার কোমল জাদুমাখা পা-দুটি ফেলে ধীরগতিতে এগিয়ে যেতে লাগল। ক্রমেই পাহাড়ে ঢালের বন্ধ্যা জমি সবুজ প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। একদিন তরুণীটি প্রতিবেশী গ্রামের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎই সেইদিকে রাজপ্রাসাদের নিষ্ঠুর মহিলাটির চোখ পড়ল, ফলে সে স্তম্ভিত হলো। সত্য ঘটনাটি যদি জনসমক্ষে উত্থাপিত হয়ে যায়, তবে তার কন্যার ভাগ্যের কী রকম পরিণতি ঘটবে? সে ঝাড়ুদারটির আবাসস্থলের খোঁজ নিয়ে তাকে রাজপ্রাসাদে ডেকে পাঠালো এবং বাড়িতে ডাইনিকে আশ্রয় দেবার অভিযোগ অভিযুক্ত করে বৃদ্ধটির মনে ভয়ের বীজ বুনে দিলো। বৃদ্ধটি অত্যন্ত ভীত হয়ে মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করল- ‘এই মুহূর্তে আমার কী করা উচিত?’
‘তাকে তার রক্ষাকবচ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো,’ নিষ্ঠুর মহিলাটি তাকে উপদেশ দিলো; ‘তারপর আমি সম্পূর্ণভাবে বিষয়টিকে সামলে নেবো।’ তারপর তরুণীটি যখন ফিরে এলো, তখন তার পালক-পিতা তাকে জিজ্ঞাসা করল- সাধারণ একটি মানুষ হয়ে এইরকম জাদুময় কাজ করা কী করে সম্ভব?
কোনোরকম ক্ষতির আশঙ্কা না করেই তরুণীটি তাকে বলল তার জন্মের পর তিনজন পরী তরুণীটিকে আশীর্বাদস্বরূপ একটি রক্ষাকবচ দিয়েছিল, তার রক্ষাকবচটি দীর্ঘদিন ধরে যেখানে বসবাস করছে সেইখান থেকেই সে মুক্তো, গোলাপগুচ্ছ এবং দূর্বাঘাস সংগ্রহ করে আনে।
‘তোমার রক্ষাকবচটি কী?’ বৃদ্ধটি জিজ্ঞাসা করল।
‘একটি তরুণ হরিণ যেটি পর্বতের ওপরে বসবাস করে; যখনই হরিণটি মারা যাবে ঠিক তখনই আমিও আমার প্রাণ হারিয়ে ফেলবো,’ তরুণীটি উত্তরে জানাল।
পরদিন প্রাসাদের দুষ্টু মহিলাটি চুপিসারে ঝাড়ুদারের সঙ্গে দেখা করল এবং তার কাছ থেকে তরুণীটির রক্ষাকবচ সম্পর্কে সবকিছু জেনে নিলো। বৃদ্ধটির কাছ থেকে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করে শিগগিরই সে প্রাসাদে ফিরে গেল। তারপর সে তার কন্যাকে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে জানাল এবং শাহজাদাকে দিয়ে হরিণটিকে হত্যা করানোর জন্য উপদেশ দিলো। আর সময় নষ্ট না করে দুষ্টু মহিলাটির মেয়ে তার স্বামীর কাছে এসে বলল- সে খুবই অসুস্থতা বোধ করছে, সেই কারণে শিগগিরই তার পার্বত্যভূমির হরিণটির হৃদপিণ্ড খাওয়া প্রয়োজন। শাহজাদা তার শিকারিদের পাঠালো এবং দীর্ঘসময় পর শিকারিরা হরিণের মৃতদেহ সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলো। তারপর মৃত হরিণের হৃদপিণ্ডটি অসুস্থ স্ত্রী-এর জন্য রান্না করা হলো।
ঠিক সেই মুহূর্তেই গোলাপ-সুন্দরীও মারা গেল। ঝাড়ুদারটি তার মৃতদেহটিকে কবর দিলো এবং এই ঘটনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সে শোকগ্রস্ত হয়ে রইল।
কিন্তু হরিণটির হৃদপিণ্ডের মধ্যে একটি লাল রঙের প্রবাল ছিল, যা কারো নজরে পড়েনি। যখনই শাহজাদার স্ত্রী এটিকে খাওয়ার জন্য মুখে দিলো, তখনই সে মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেল এবং লাল প্রবালটি সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে গেল।
একবছর পর শাহজাদার প্রাসাদ আলো করে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলো। শিশুটিও মুক্তোঝরানো কান্না কাঁদত, তার হাসিতে গোলাপেরাও হাসতো, এমনকি সে ছোট্ট ছোট্ট পা-দুটি দিয়ে মাটি স্পর্শ করলে সবুজ ঘাসেরাও তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রাণ ফিরে পেতো। শাহজাদা যখন দেখল তার মেয়ে একজন গোলাপ-সুন্দরী, সে তখন উপলব্ধি করল সে নিজের জন্য সঠিক স্ত্রীকেই নির্বাচন করেছে; কিন্তু এক রাতে শাহজাদার স্বপ্নের মধ্যে গোলাপ-সুন্দরী দেখা দিলো এবং বলল, ‘ওহ আমার শাহজাদা, আমার হবু-স্বামী ! আমার আত্মাটি তোমার প্রাসাদের সিঁড়ির নিচে এবং আমার দেহটি গোরস্থানে রাখা আছে। তোমার মেয়েটিও আমার মেয়ে। সিঁড়ির নিচে রাখা লাল প্রবালটিই হলো আমার রক্ষাকবচ।’
শাহজাদা ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই সিঁড়ির কাছে গিয়ে খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে সে লাল রঙের প্রবালটিকে দেখতে পেলো। সে প্রবালটিকে সঙ্গে নিয়ে তার কক্ষে পৌঁছাল, তারপর সে এটিকে চার পায়াওলা একটি তক্তার ওপরে রাখলো। কিছু সময় পর তার ছোট্ট মেয়েটি কক্ষে প্রবেশ করল এবং তক্তার ওপরে রাখা প্রবালটিকে দেখতে পেয়ে সে হাতে তুলে নিলো। তার ছোট্টছোট্ট আঙ্গুলগুলো দিয়ে প্রবালটিকে স্পর্শ করার সঙ্গেসঙ্গেই তারা উভয়েই অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনটি পরী শিশুটিকে জানাল, প্রবালটিকে যদি তার মা অর্থাৎ গোলাপ-সুন্দরীর মুখের মধ্যে ফেলা হয়, তবেই গোলাপ-সুন্দরী পুনরায় প্রাণ ফিরে পাবে।
এদিকে শাহজাদা অস্থির হয়ে উঠেছে, গোরস্থানে হাজির হয়ে সে হতভম্ব হলো। সে সেখানে তার স্বপ্নে দেখা গোলাপ-সুন্দরীকে দেখতে পেলো; গোলাপ সুন্দরী তার সন্তানকে দুইহাতের মধ্যে জড়িয়ে রেখেছিল। মা এবং সন্তান আনন্দে আবেগাক্রান্ত হয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে কাঁদতে লাগল, তখন তাদের দুজনের চোখ থেকেই মুক্তো ঝরতে লাগল; তাদের হাসিতে গোলাপগুচ্ছ পাপড়ি মেলে হাসতে লাগল এবং তাদের পায়ের স্পর্শে সবুজ ঘাসেরা তাদের প্রাণ ফিরে পেলো।
প্রাসাদের ক্ষমতাশালী মহিলা এবং তার মেয়েকে শাস্তি দেওয়া হলো। গোলাপ-সুন্দরী এবং শাহজাদার সঙ্গে একসঙ্গে তাদের প্রাসাদে থাকার জন্য বৃদ্ধ ঝাড়ুদারকেও আমন্ত্রণ জানানো হলো। দুটি হৃদয় একত্রিত হওয়ার খুশিতে প্রাসাদে একটি জাঁকজমকপূর্ণ বিবাহ অনুষ্ঠান এবং ভোজন উৎসবের আয়োজন করা হলো। এরপর থেকে তারা চিরকাল সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
ভূমিকা ও ভাষান্তর : এহসান হায়দার