ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২১, ০৬:৩৯ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১, ০৬:৪১ পিএম
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন
করোনা নিয়ন্ত্রণে টিকাই একমাত্র ভরসা। এই টিকা সংগ্রহে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো না। ভারত করোনা টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছিল সংকট। ভেস্তে যাচ্ছিল টিকাদান কর্মসূচির মাস্টারপ্ল্যান। ফলে সংকট সমাধানে এক উৎসে নির্ভর না থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করছে সরকার। এর সুফলও পেতে শুরু করেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্নার ও চীনের সিনোফার্ম থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে। এর ফলে নতুন করে ৮ জুলাই থেকে গণ-টিকা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।
তবে এর মধ্যেই চলে এসেছে করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত নতুন ধরন- ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে ভারতে ভয়াবহ অবস্থা হওয়ার পর বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। সরকার কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমিয়ে রাখতে চাচ্ছে, কিন্তু এটাই একমাত্র সমাধান নয় বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
দীর্ঘদিন লকডাউন করে রাখা সম্ভব নয় কোনো অঞ্চলকে। এতে করে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। এর একমাত্র এবং স্থায়ী সমাধান সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা বলে মনে করছে গবেষকরা। আর সেই সমাধানের পথেই হাঁটছে ভারতের কাছ থেকে টিকা সংগ্রহ করতে গিয়ে হোঁচট খাওয়া সরকার।
এরই মধ্যে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্নার ও চীনের সিনোফার্ম থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা টিকাসহ মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা এখন দেশে আছে।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক (৬ জুলাই) জানিয়েছেন, কোভ্যাক্সের আওতায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ 'এ মাসেই' আসছে। আর সিরাম ইনস্টিটিউটের স্থানীয় প্রতিনিধি আমাদের জানিয়েছে, আগস্ট মাস থেকে তারা টিকা দিতে থাকবে। তবে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কত ডোজ করে টিকা দেবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
এছাড়া করোনাভাইরাসের টিকার যৌথ উৎপাদনে চীনা কোম্পানি আর অ্যান্ড ডি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের ডেপুটি চিফ অব মিশন হুয়ালং ইয়ান। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) চীনের ডেপুটি চিফ অব মিশন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
হুয়ালং ইয়ান লেখেন, চীনা ভ্যাকসিন আর অ্যান্ড ডি সংস্থা ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। চীন এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। কোভ্যাক্সকে ১০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ সরবরাহ করবে। চীন বহু উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন ও সমবায় উৎপাদন পরিচালনা করেছে এবং তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনায় বিদেশি দেশগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমর্থন করেছে।
চীনা টিকা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ সুনাম অর্জন করেছে বলেও জানান ডেপুটি চিফ অব মিশন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের করোনা টিকার যৌথ উৎপাদনের অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র উল্লেখ করে বলেন, চীন বাংলাদেশে করোনার টিকার যৌথ উৎপাদনে সে দেশের কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করবে।
এদিকে জুলাই মাসেই রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা স্পুটনিক-ভি পাওয়ারও কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার থেকে টিকা কেনার সবরকম প্রস্তুতি আমাদের শেষ হয়েছে। আশা করছি, এই মাসের মধ্যেই একটা খবর হয়ত আমরা পেতে পারি।
তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমরা অনেকদিন কাজ করেছি। খুঁটিনাটি কিছু বিষয় ছিল, সেগুলো আমাদের ভ্যাকসিন কমিটি আলোচনা করে শেষ করেছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি তারা কখন এবং কী পরিমাণ টিকা দেবে। তারা যখনই জানাবে, আমরা তখনই আমাদের প্রক্রিয়া শুরু করে দেব।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা তাদেরকে বলে দিয়েছি যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে টিকা দেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। তারা আমাদেরকে বিস্তারিত জানাবে যে অমুক দিন, এতো সংখ্যক টিকা আমরা দেব, তখন আমরা সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেব।