রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২১, ১০:১০ এএম
ফাইল ছবি
স্প্যানিশ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি চলচ্চিত্র হলো ‘রোমা’। এই চলচ্চিত্রটি যেমন স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত সর্বকালের সেরা একটি চলচ্চিত্রের খেতাব অর্জন করেছে তেমনই নেটফ্লিক্সের জন্যও গড়ে তুলেছে একটি ইতিহাস। কেননা নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রোমাই প্রথম অস্কারজয়ের খেতাব লাভ করা কোনো চলচ্চিত্র।
রোমা চলচ্চিত্রটি যেন শুধু চলচ্চিত্র নয়, এটি একটি জীবনের গল্প, যে জীবন এক গৃহ পরিচারিকার, যে জীবন একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের। মেক্সিকোর মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি পরিবারের একজন গৃহ পরিচারিকাকে নিয়ে তৈরি এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন নির্মাতা আলফানসো কুয়ারন। গৃহ পরিচারিকাটির নাম ক্লিও। আলফানসো কুয়ারনের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নির্মিত এই সিনেমার গল্পের কেন্দ্রবিন্দু ক্লিও মেক্সিকোর কলোনিয়া রোমা নামক একটি অঞ্চলে বসবাসরত একটি মধ্যবিত্ত দম্পতির বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করে।
পরিবারের কর্তা অ্যান্থোনি একজন চিকিৎসক। তার স্ত্রীর নাম সোফিয়া। অ্যান্থোনি ও সোফিয়া ছাড়াও বাড়িতে রয়েছে অ্যান্থোনি সোফিয়া দম্পতির চারটি সন্তান, অ্যান্থোনির মা তেরেসা এবং একটি কুকুর। এই পরিবারের সকলের দেখাশোনা থেকে শুরু করে সে বাড়ির কুকুর খাবার ও মল সাফ-সুতরোর দায়িত্বও ক্লিওর। ক্লিও ছাড়াও বাড়িটিতে অ্যাডেলা নামের আরও একজন গৃহপরিচারিকা রয়েছে। সারাদিনের বিরামহীন খাটাখাটুনি শেষে ক্লিও যতটুকু সময় পায় সেটুকু সে ওই অ্যাডেলার সঙ্গেই সুখ-দুঃখের আলাপ করে কাটায়। আর অন্যান্য সময় স্প্যানিশ ভাষায় কথা বললেও এই প্রাণখোলা সময়টাতে ক্লিও ও অ্যাডেলা কথা বলে মিক্সটেক ভাষায়। গৃহ পারিচারিকা হলেও ক্লিওর সঙ্গে সোফিয়া দম্পতির সবার সঙ্গে বেশ সুসম্পর্ক। সোফিয়া ও তার সন্তানদের নিকট ক্লিও যেমন প্রিয় একজন মানুষ তেমনি ক্লিওরও তাদের সেবা শুশ্রুশায় কোনো ঘাটতি নেই।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে জীবন যখন এভাবে ভালোই যাচ্ছিল, ঠিক তখন ক্লিও বুঝতে পারে সে তার প্রেমিক ফার্মিনের সন্তানের মা হতে চলেছে। ঘটনাটি ক্লিও তার প্রেমিক ফার্মিনকে খুলে বলে; কিন্তু খবরটি শুনে ফার্মিন উচ্ছ্বসিত তো হয়ই না উল্টো ক্লিওকে ত্যাগ করে। তবে ফার্মিন ক্লিওকে এমন একটা সময় ছেড়ে গেলেও তার পাশে এসে দাঁড়ায় তার গৃহকর্ত্রী সোফিয়া। সোফিয়া ক্লিওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে সে মা হতে চলেছে। এ সময় সোফিয়া তার সন্তান ও ক্লিওকে নিয়ে নববর্ষ উদযাপনের জন্য তার পারিবারিক বন্ধুর কাছে যায়। এখানেই সোফিয়াকে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়।
শহরের এক থিয়েটারে সোফিয়া আর ক্লিও সোফিয়ার স্বামীকে তার নতুন প্রেমিকার সঙ্গে দেখতে পায়। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সোফিয়াকে শোকাতুর করে তুললেও সে চাইছিল না ঘটনাটি পরিবারের আর কেউ জানুক। বিষয়টি গোপন রাখতে চেষ্টাও করে সে কিন্তু ঘটনাটি তার মেজ ছেলে জেনে যায়। সোফিয়া অ্যান্থনি দম্পতিতে যখন এমন অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজমান সেসময় একদিন ক্লিও তার অনাগত সন্তানের পিতা প্রেমিক ফার্মিনকে ধরে ফেলে; কিন্তু ফার্মিন এবার শুধু সন্তানের দায়ভার বহন করতেই অস্বীকার করে না উল্টো ক্লিও যেন আর তার খোঁজ না করে সে ব্যাপারেও শাসিয়ে যায়; কিন্তু ক্লিওর সঙ্গে আবারও এক শপিং মলে ফার্মিনের দেখা হয়। এবার ফার্মিন ক্লিওর মাথায় অস্ত্র তাক করে পালিয়ে যায়। ফার্মিনের এমন দুর্ব্যবহারে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ক্লিওর প্রসব বেদনা ওঠে। হাসপাতালে নেওয়ার পর ক্লিও একটি জন্মান্ধ কন্যাসন্তান প্রসব করেন। এভাবেই এগিয়ে চলে রোমার গল্প। সোফিয়া আর অ্যান্থোনির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আসা সন্তানসহ ক্লিওর ঠাঁই হয় সোফিয়ার কাছে। সবকিছু পেছনে ফেলে ওরা আবার ফিরে চলে রোমিওতে ওদের বাড়িটি পুনরায় সাজাতে।
২০১৮ সালে নেটিফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রটি দর্শক সমাদরের পাশাপাশি সমালোচক ও বোদ্ধাদেরও দারুণ সমাদর লাভ করে। আর তারই ফলস্বরূপ রোমা স্থান পায় অস্কারের ৯১তম আসরে। অস্কারের আসরে সাতটি ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়ে চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বগলদাবা করে ফিরে রোমা। ইয়ালিটজা এপারিসিও, মেরিনা টাভিরা, ফারনান্দো গ্রেডিয়াগো, জর্জ অ্যান্থোনিসহ সবার প্রাণখোলা অভিনয়ে প্রাণবন্ত এই সিনেমাটিকে স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত সবসময়ের সেরা ছবি হিসেবে ধরা হয়।