আস্তানা থেকে বোমা উদ্ধার, আরেক বাড়ি ঘেরাও

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২১, ০১:৫৩ এএম

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সন্দেহজনক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তিনটি বোমা ও বোমা তৈরির নানা সরঞ্জাম পেয়েছে পুলিশ।

রবিবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এবং সোয়াট পাঁচগাঁও এলাকার ওই বাড়িতে এই অভিযান চালায়।

এর আগে অভিযান শুরুর পর রাত পৌনে ১১টা থেকে ১১টা ১০ মিনিটের ভেতর পরপর তিনটি বিস্ফোরণ হয়।

অভিযান শেষে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ওই বাড়িতে পাওয়া তিনটি শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সোয়াট ও বম্ব ডিসপোজল ইউনিট। এছাড়া বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

ওই বাড়িতে থাকা ব্যক্তিকে আগে গ্রেফতার করার পর তার তথ্যের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হয়। এছাড়া আরও একজনসহ দুজন ‘জঙ্গি’কে গ্রেফতারের কথাও জানানো হয়েছে।

রবিবার রাতে আকস্মিকভাবে ঢাকা থেকে গিয়ে পাঁচগাঁও এলাকার নোয়াগাঁওয়ের মিয়া সাহেবের বাড়িতে অভিযান শুরু করে সিটিটিসি ও সোয়াট। সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ওই বাড়িতে বিস্ফোরক দ্রব্য আছে সন্দেহে সেটি ঘিরে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই মসজিদটির মুয়াজ্জিন ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার ঘরেই চলে অভিযান।

পাঁচগাঁও এলাকার ফাইজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, সম্প্রতি আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৫), খালিদ হাসান ভূঁইয়া (২৩) ও শফিকুল ইসলাম হৃদয় (১৮) নামে তিনজনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেয়া হয়। এদের মধ্যে মামুন মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট, বাবার নাম আবদুল হান্নান। বাকি দুজনের বাড়ি আড়াইহাজার উপজেলাতেই।

গত মে মাসে নারায়ণগঞ্জের একটি পুলিশ বক্সে যে বোমা পেতে রাখা হয়েছিল, সেটি মামুনের ঘর থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল বলে বলে পুলিশের ধারণা।

ওই বোমার সূত্র ধরেই এই অভিযান চলে জানিয়ে আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ওইটা ছিল একটি শক্তিশালী আইইডি। সেই বিস্ফোরণের আইইডির বিষয়ে তখন থেকেই আমরা কাউন্টার টেরিরিজম কাজ করতে শুরু করি। দীর্ঘ দিন দুই মাস পর আজ (রোববার) বিকালে যাত্রীবাড়ি এলাকা থেকে মামুন ওরফে ডেভিড কিলারকে গ্রেফতার করি। এবং তার সাথে যেই মোটর সাইকেলটি বোমা বহনকাজে ব্যবহৃত হয়েছিল, সেই মোটর সাইকেলসহ তাকে গ্রেফতার করি। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, আড়াইহাজারের নোয়াগাঁও এলাকায় মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং মসজিদের পাশে এক বাড়িতে তার বাসা।

এরপরই অভিযান শুরু হয় জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ভিযান চালিয়ে তিনটি শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। দুটি বিস্ফোরণে এলাকা প্রকম্পিত হয়েছে। এরকম শক্তিশালী বোমা সে তৈরি করেছে। পরবর্তীতে হামলার উদ্দেশ্যে বোমাগুলো তৈরি করে রেখেছিল। বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইনভেস্টিগেশন টিম সার্চ করে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি জব্দ করেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে তার সাথে জড়িত অন্যদের নাম পেয়েছি। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরেকজনকে গ্রেফতার করেছি।

এই অভিযানের সূত্রে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর কাজীপাড়া এলাকায় আরেকটি ‘আস্তানা’র সন্ধান মিলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফলোআপ অপারেশনে আরেকটি সন্ধান পেয়েছি, সেটি মদনপুর কাজীপাড়া এলাকায়। আমরা দ্বিতীয় ঘটনাস্থলেও অভিযান পরিচালনা করব।

সেই এলাকাটিও ঘিরে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই বাড়িতে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তার নাম জানতে পারিনি। সে সামরিক গ্রুপের সদস্য। এই সামরিক গ্রুপের মাধ্যমে হামলার বাস্তবায়ন করা হয়। সে অনেকদিন যাবত জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত। তারা নব্য জেএমবির সদস্য।

কী কারণে বোমা রাখা হতে পারে- প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টার্গেট হতে পারে। সংবাদ শিরোনামের উদ্দেশ্যেও হতে পারে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh