ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২১, ১২:০৩ পিএম
প্রতীকী ছবি
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে লাফিয়ে। করোনায় মৃত্যুর দিক থেকে এখন বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে (৯ জুলাই পর্যন্ত) করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বিশ্বে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
এদিকে গতকাল রবিবার (১১ জুলাই) করোনা সংক্রমণে একইদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সারাদেশে করোনায় ২৩০ জনের মৃত্যু এবং ১১ হাজার ৮৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে কখনো এক দিনে এত মৃত্যু ও নতুন রোগী দেখেনি বাংলাদেশ। গতকালের আগপর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড ছিল ১১ হাজার ৬৫১ জন। আর সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ২১২ জন।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ভারতে। একইসাথে দৈনিক মৃত্যুতে শীর্ষে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়া। এসময়ে সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ হাজার ৩০০-র বেশি মানুষ। আর ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার। এর ফলে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৮ কোটি ৭৬ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ লাখ ৪৮ হাজার।
ডব্লিউএইচও’র তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর দিক থেকে গত এক সপ্তাহে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল, দ্বিতীয় স্থানে ভারত। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায়। এসময়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ১৯৭ জন। করোনা মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ২৭ হাজার ২০৩ জন এবং এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৬ হাজার ৪৬৪ জনের।
এদিকে নতুন রোগী শনাক্তের দিক থেকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, যেভাবে নতুন রোগী বাড়ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিন পর হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়া যাবে না। পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে।
এছাড়া দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোতে মাত্র ৩০০ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা খালি আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অবশ্য নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড হলেও গত কয়েক দিনের তুলনায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। নমুনা পরীক্ষাও অনেক বেড়েছে। এই সময়ে মোট ৪০ হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা এক দিনে সর্বোচ্চ। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। টানা পাঁচ দিন পর রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের নিচে নামল। গত পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিনই রোগী শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের বেশি ছিল।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণের গতি ধীর করতে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধের প্রভাব চলতি সপ্তাহ থেকে দেখা যেতে পারে। এই সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার কমতে পারে। তবে মৃত্যু আরো সপ্তাহ দুয়েক বাড়তির দিকেই থাকবে।
গতকাল রবিবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, সারাদেশেই সংক্রমণ বেড়েছে। খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শনাক্তের হার ৩১-৩২ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে দৈনিক শনাক্ত ১৫ হাজারে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না।
তিনি আরো বলেন, জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় এক লাখ রোগীকে সংক্রমিত হতে দেখেছি। যে হারে রোগী বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালে শয্যা, আইসিইউ খালি থাকবে না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কিন্তু অনেককে জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও বাইরে বের হতে দেখা যাচ্ছে।
দেশে করোনা প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। এর ফলে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল।
ঈদুল ফিতরের পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। পরে দেশের সব জেলাতেই সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ফের ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। তবে দিন দিন বাইরে মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকেন্দ্রিক যাতায়াত, কোরবানির পশুর হাটে লোকসমাগম বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, শুধু লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করে সংক্রমণ সাময়িক ধীর করা যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এ জন্য লকডাউনের পাশাপাশি রোগী ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষা বাড়িয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইসোলেশন রাখা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করা, স্বাস্থ্যবিধি বিশেষত শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।