আজব সংকটে শিক্ষকরা: বদলির পর আগের অভিজ্ঞতা বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২১, ০১:১৭ পিএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ০৩:৪০ পিএম

আজব সংকটে পড়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা।

আজব সংকটে পড়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা।

প্রাথমিকের কোন একজন সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন কোন স্কুলে চাকরি করে অন্য স্কুলে যোগদান করলে তার পূর্বের সকল অভিজ্ঞতা বাতিল হয়ে যাবে। নতুন স্কুলে যোগদানের তারিখ থেকে তার সিনিয়রিটি নির্ধারণ করা হয়। 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বদলির পরের অভিজ্ঞতাকে কাউন্ট করা হয় না। এমন পদ্ধতির কারণে হতাশায় দিনাতিপাত করছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, এটা কোন নিয়ম হতে পারে না। কোন সরকারি চাকরিতে এমন নিয়ম নেই। প্রাইমারিতে কেন এ আজব পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে জ্যেষ্ঠতার তালিকা (গ্রেডেশন লিস্ট) চূড়ান্তকরণের কাজ হাতে নিয়েছে। গত জুন থেকে শিক্ষকদের অনলাইনে একটি ফরম পূরণ করতে হচ্ছে। সেখানে একটি প্রশ্ন রয়েছে- আপনি বহিরাগত শিক্ষক কিনা? কবে এ উপজেলা/থানায় যোগ দিয়েছেন? প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয় উপজেলাভিত্তিক। নিজ উপজেলার বাইরে অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে নতুন কর্মস্থলে ওই শিক্ষককে ‘বহিরাগত শিক্ষক’ বলা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিকে বদলির সুযোগ রয়েছে। তবে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন নীতিমালায় কোথাও বলা নেই যে বদলি হলে আগের অভিজ্ঞতা গণনা করা হবে না। অথচ এবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তৈরি করা গ্রেডেশন সফটওয়্যারে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে বর্তমান উপজেলায় যোগদানের তারিখ থেকে হিসাব করা হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে বলা হচ্ছে, নিয়োগটাই উপজেলাভিত্তিক। ‘বহিরাগত’ শিক্ষকদের কারণে ‘স্থানীয়’ শিক্ষকরা সিনিয়রিটি হারাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ দীর্ঘদিন চাকরি করেও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যদি বাইরে থেকে কেউ বেশি দিনের চাকরিকাল নিয়ে আসেন। শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকার নতুন সফটওয়্যারে বদলি হওয়া শিক্ষকদের ‘বহিরাগত’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে এবং সিনিয়রিটি নির্ধারণে চাকরিতে যোগদানের তারিখের পরিবর্তে বর্তমান উপজেলায় বদলি হয়ে আসার তারিখ থেকে কার্যকাল ধরা হচ্ছে। এই বিধানকে বদলি হওয়া শিক্ষকরা অন্যায় ও অবিচার হিসেবে দেখছেন।

তারা বলছেন, নিয়োগের সময় এই শর্ত থাকলে তারা সেভাবেই জানতেন এবং বদলি হতেন না। দেশের নাগরিকরা দেশের সব জায়গায় সমান অধিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারী। তবে বিশেষ চাকরিতে বিশেষ শর্ত আরোপ করলে তা নিয়োগের আগেই জানতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, অনেক উপজেলায় বা মহানগরীতে স্থানীয় শিক্ষকরা দীর্ঘদিন চাকরি করেও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এটা যেমন সত্য, তেমনি বহিরাগত শিক্ষকরাও কোনো শর্ত ছাড়াই বদলি হয়ে এসেছেন। কোথাও ১৫ বছর চাকরি করেই পদোন্নতি হয়, আবার কোথাও ৩০ বছরেও তা হয় না।

তিনি বলেন, এটার সমাধান হওয়া প্রয়োজন। আমরা চাই, উভয়ের স্বার্থ বিবেচনা করেই গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়ন করা হোক।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh