জার্মানির পর থাইল্যান্ডে মিশ্র টিকার অনুমোদন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২১, ০৭:২৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জার্মানির পর গণটিকাদান নীতিতে পরিবর্তন এনে মিশ্র টিকার ডোজ মিলিয়ে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে থাইল্যান্ড। সোমবার (১২ জুলাই) থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষকে চীনের সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের এক ডোজ দেয়ার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের অপর একটি ডোজ দেয়া হবে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে চীনের ভ্যাকসিনের সঙ্গে পশ্চিমা কোনও ভ্যাকসিনের মিশ্রিত ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম দেশ হবে থাইল্যান্ড। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরন মোকাবিলায় প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

চীনের সিনোভ্যাকের ডোজ নেয়ার পরও থাইল্যান্ডে ৬১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে একজন নার্সের মৃত্যু হয়েছে, অপর একজন নার্স গুরুতর অসুস্থ। সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের দুই ডোজের সুরক্ষার স্থায়ীত্ব নিয়ে থাইল্যান্ডের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের গোপন একটি নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর টিকার ডোজের মিশ্রণের সিদ্ধান্ত নিলো দেশটি।

অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, সিনোভ্যাকের প্রথম ডোজের তিন থেকে চার সপ্তাহ পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে উন্নত সুরক্ষা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে উচ্চ স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার মিশ্রণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

যদিও সিনোভ্যাক এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মিশ্রণের নির্দিষ্ট কোনও গবেষণা এখনও দেখা যায়নি। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে করোনার অতি সংক্রামক এবং নতুন ধরনের অনুমোদিত ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিনের মিশ্রণ, এমনকি অন্য ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ দেয়ার চিন্তাও চলছে।

এর আগে (২ জুলাই) অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকার প্রথম ডোজের সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজে অন্য কোম্পানির তৈরি টিকা দেয়ার অনুমোদন দেয় জার্মানি। অর্থাৎ অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে ফাইজার বা মডার্নার তৈরি এমআরএনএ টিকা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। মূলত করোনাভাইরাসের ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অধিক সুরক্ষা তৈরি করতেই এমন পদক্ষেপ নেয় দেশটি।

থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৮ জন মেডিকেল কর্মীকে চীনের সিনোভ্যাকের টিকার দুই ডোজ দেয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ৬১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ফের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবেশি ইন্দোনেশিয়াতেও সিনোভ্যাকের দুই ডোজ নেয়ার পর অনেক মেডিকেল ও সম্মুখসারির কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এখন সম্মুখসারির কর্মীদের জন্য আমদানিকৃত এমআরএনএ ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করছে থাইল্যান্ড।স্থানীয়ভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদনের আগে গত জুনে যারা সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন তাদেরকে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার আমদানিকৃত ডোজ দেয়া হবে। ইন্দোনেশিয়াও একই ধরনের বুস্টার ডোজ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

৭০০ জন মেডিকেল কর্মীর ওপর চালানো থাইল্যান্ডের প্রাথমিক এক গবেষণার ফল প্রকাশ করে সোমবার বলা হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার প্রথম ৬০ দিনে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডির স্তরের মাত্রা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্ডিবডির এই হার ধীরে ধীরে কমে গেছে এবং প্রত্যেক ৪০ দিনের মধ্যে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

থাইল্যান্ডের থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব মেডিসনের গবেষক সিরা নানথাপিসাল বলেছেন, আমাদের গবেষণা বলছে, আমাদের মেডিকেল কর্মীরা যদি সিনোভ্যাকের দুটি ডোজ নিয়ে থাকেন... তাহলে অবশ্যই তাদের তৃতীয় বুস্টার শট নিতে হবে। তবে গবেষকরা সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন নিয়ে করা গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেননি।

তিনি বলেছেন, তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা ফাইজারের টিকা যখনই আসবে তখনই নিতে পারেন এবং আমরা তাদের অ্যান্টিবডির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করব।

থাইল্যান্ডের টিকার ডোজ মিশ্রণের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার একজন প্রতিনিধি বলেছেন, টিকাদানের নীতি কেবলমাত্র প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব ব্যাপার। সিনোভ্যাকও এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

করোনা মহামারিতে থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২ হাজার ৭৯১ জন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh