চট্টগ্রামে শনাক্ত শতভাগ শিশুর দেহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২১, ১০:৫৪ পিএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চট্টগ্রামে জুন থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত শতভাগ শিশুর দেহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বা ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের করোনার জিনোম সিকুয়েন্স করে এমন তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আগত ও ভর্তিকৃত ১২ জন শিশুর নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় নবজাতক থেকে ১৬ বছর বয়সী (স্কুলগামী) কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত শিশুদের।

গবেষণায় প্রাপ্ত সিকোয়েন্স ডেটা জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্য ভাণ্ডার সংস্থা ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা’-তে গৃহীত হয়েছে।

শনিবার (১৭ জুলাই) সকালে সংস্থাটি সিকোয়েন্সগুলো তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগেরই বয়স ১০ বছরের নিচে। সর্বনিম্ন আট মাস বয়সের শিশুর মাঝে ডেল্টা ধরন চিহ্নিত হয়েছে। এ গবেষক দলের অন্য গবেষণা অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক  রোগীদের মাঝে ৮০ ভাগ রোগী পুরুষ হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মেয়ে শিশুরাও সমানভাবে এ ধরনে সংক্রমিত ও আক্রান্ত হচ্ছে। ৫০ ভাগ ছেলে এবং ৫০ ভাগ মেয়ের মধ্যে এ ধরনের উপস্থিতি দেখা গেছে। ৯৫ ভাগ শিশুর মধ্যেই জ্বরের লক্ষণ এবং ৭০ ভাগ শিশুর মধ্যে সর্দি ও কাশি ছিল। একটি শিশু পুরোপুরি উপসর্গহীন ছিল।

গবেষণার নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আব্দুর রব মাসুম এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক ও অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস ও ডা. নাহিদ সুলতানা।

সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান।

গবেষকদলে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মিনহাজুল হক, রাজদীপ বিশ্বাস ও আকরাম হোসেন; চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা।

জিনোম সিকুয়েন্সিং এর তত্ত্বাবধানে ছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ভাইরোলজি বিভাগের গবেষক দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।

গবেষকদলের অন্যতম ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস বলেন, গত এক বছরে আমরা তেমন উল্লেখযোগ্য হারে শিশুদের মাঝে কোভিড-১৯ দেখতে পাইনি হাসপাতালে। কিন্তু গত জুন মাস থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে গেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে আমাদের গবেষণায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছোট শিশুরা নিজের অনুভুতি কিংবা দুর্বলতা প্রকাশ করতে না পারায় অনেকেই কোভিড টেস্টের আওতায় আসবে না, যা চিন্তার বিষয়।

আরেক গবেষক জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, শিশুদের মাঝে কোভিড হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এই ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের প্রয়োজন বেড়ে যেতে পারে সামনের দিনগুলোতে এবং পরিবারের সবাইকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে শিশুদের স্বার্থে।

গত এপ্রিল মাস থেকে চট্টগ্রামের এই গবেষকদল চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের কোভিড-১৯ রোগীদের জিনোমিক সার্ভিলেন্স বা নিয়মিত জিনোমিক বৈশিষ্ট্য ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছেন। গবেষণায় সার্বিক সহযোগিতায় আছে ডিজিজ বায়োলজি এন্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ, চট্টগ্রাম।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh