ছুটছে ঘরমুখী মানুষ, ঈদের পর সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ার আশঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২১, ১২:৩৯ পিএম

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মাঝেও রাজধানী ছেড়ে ঘরমুখী হচ্ছেন মানুষ। ছবি : স্টার মেইল

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মাঝেও রাজধানী ছেড়ে ঘরমুখী হচ্ছেন মানুষ। ছবি : স্টার মেইল

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটি শুরু হয়েছে আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) থেকে। আজ থেকে সরকারঘোষিত তিনদিনের ঈদের ছুটি (২০, ২১ ও ২২ জুলাই) শুরু হয়েছে। এই ছুটি শেষে ২৩ ও ২৪ জুলাই সাপ্তাহিক (শুক্র ও শনিবার) ছুটি। ফলে ছুটি মিলেছে টানা পাঁচদিনের। 

আর ঈদ সামনে রেখে ঢাকা ও তার আশপাশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। ঘরমুখী মানুষের ভিড় রয়েছে পথে পথে। ভিড় বাড়ছে সড়ক-মহাসড়কে, বাস-রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে। তবে ঈদযাত্রায় যানজট ও বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি পথে যানবাহনের চাপ রয়েছে। ভোর থেকে যানবাহনের জন্য গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, আবদুল্লাহপুর, মহাখালী, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থান ও বাসস্টেশনে ঘরমুখী মানুষের ভিড়ও অনেকে। 

তবে ঢাকার ভেতরে মানুষের চলাচল সেভাবে দেখা যায়নি। বাজারগুলোয় সকাল থেকে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও অলিগলি বা প্রধান সড়কগুলোয় যানবাহন ও মানুষের চলাচল কম ছিল। সিগনালগুলোয় গাড়ির চাপ ছিল না। ফলে ট্রাফিক পুলিশ অনেকটা আয়েশে সময় কাটিয়েছে।

গতবারের মতো এবারো করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে ঈদুল আজহা উদযাপন হতে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মাঝেও রাজধানী ছেড়ে বাড়িমুখী হচ্ছেন মানুষ। বাস ও ট্রেন স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও এসব যানবাহনের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। এ ধরনের যাত্রার কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা সংক্রমণ কমাতে শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকায় দেখা যায় যানবাহনের লম্বা লাইন। সদরঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। ভোর থেকে মহাসড়কে যাত্রীবাহী পিকআপ ও মোটরসাইকেলের চলাচলও ছিল চোখে পড়ার মতো। অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত টানা দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর হয়। এরপর ঈদকে সামনে রেখে গত ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে গণপরিবহন, মার্কেট ও শপিংমল, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। তবে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবার বিধিনিষেধের আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার।

বিধিনিষেধ শিথিলের সুযোগে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মাঝেও রাজধানী ছেড়ে ঘরমুখী হচ্ছেন মানুষ। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। 

এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, শিথিল বিধিনিষেধের কারণে আমাদেরকে অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। কারণ ঈদের পরে করোনার চলতি ঊর্ধ্বগতির আরো অবনতি হবে, বাড়বে মৃত্যু।

গতকাল সোমবারই (১৯ জুলাই) একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখলো দেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩১ জন, যা গত দেড় বছরের মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১১ জুলাই ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সরকারি হিসাবে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার ১২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আর গতকাল করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩২১ জন। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দেশে মোট শনাক্ত হয়েছেন ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩১০ জন।

ঈদের পর করোনা রোগী বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ঈদের এক সপ্তাহ পর সংক্রমণ বোঝা যাবে, আর মৃত্যুর সংখ্যা বোঝা যাবে দুই সপ্তাহ পর থেকে। যেহেতু সংক্রমণ এখনো কমছে না, কমার লক্ষণও দেখছি না। তাই রোগী বাড়তে থাকবে জ্যামিতিক হারে, অন্তত দেড় থেকে দুইগুণ। আর সেইসাথে আনুপাতিকহারে বাড়বে মৃত্যু।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh