টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২১, ০৯:৩৬ পিএম
উত্তরবঙ্গ থেকে নেয়া অর্ধেক গরুও বিক্রি হয়নি
কোরবানি ঈদে লাভের আশায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গ থেকে কয়েক হাজার পশু বিক্রির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলার হাটে নিয়েছিলেন। কিন্তু দাম ও ক্রেতা কম থাকায় বিক্রি হয়নি হাজার হাজার পশু। ফলে বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের খামারি ও ব্যবসায়ীরা। একবুক ভাঙা স্বপ্ন নিয়ে ঈদের দিন বাড়ির পথ ধরেছেন তারা।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু পথ ধরে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে পশু নিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন উত্তরবঙ্গের খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে অসংখ্য খামারি ও ব্যবসায়ী কয়েক হাজার পশু বিক্রির জন্য নিয়েছিলেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাটে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষের অর্থ সংকট থাকায় অনেকেই এবার কোরবানি দেননি। এজন্য গরুর চাহিদা কম ছিল। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে নেয়া অর্ধেক গরুও বিক্রি হয়নি।
এর আগে এত গরু কখনো উত্তরবঙ্গে ফেরত যায়নি। গরু নিয়ে খামারি ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে পশু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
বুধবার (২১ জুলাই) ঈদের দিনেও অসংখ্য পশুবাহী ট্রাক উত্তরবঙ্গে যেতে দেখা যায়। খামারি ও ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে ছিলো হতাশা।
এদিকে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার ভোর থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগেই ছিলো। দুপুরের পর সড়ক স্বাভাবিক হয়। তবে অসংখ্য যাত্রীর সড়কেই ঈদের আনন্দ ম্লান হয়েছে।
বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্বর এলাকায় কথা হয় একাধিক খামারি ও ব্যবসায়ীর সাথে। এ সময় কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী সুজন বলেন, ‘১৪টি গরু গাবতলী হাটে নিয়েছিলাম। মাত্র তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। এবার গরুতে লাভ হয়নি, ক্ষতি হয়েছে। হাটে ক্রেতা ও দাম কম থাকায় বাকি ১১টি গরু বিক্রি করতে পারিনি। ট্রাক ভাড়া ও আমাদের খরচ ওঠেনি। গরু তো আর ফেলে দেওয়া যাবে না। এজন্য বাড়িতে ফিরিয়ে নিচ্ছি। স্থানীয় হাটে বিক্রি করবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিবারের সাথে একত্রে ঈদ করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা আর হলো না। সড়কেই ঈদ কাটছে। গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি।’
পাবনা থেকে আসা শহিদুল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘১৪টি গরু ঢাকার হাটে নিয়েছিলাম। সেখান থেকে ১০টি গরু বিক্রি হয়েছে। ১০টি গরুতে আমাদের চার লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী রনি বলেন, ‘১৮টি গরু নিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ১৫টি গরু লস দিয়ে বিক্রি করেছি। হাটে ক্রেতা ও দাম একেবারেই কম ছিলো। তিনটি গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
কুষ্টিয়া থেকে আসা খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চারটি গরু চট্টগ্রামের হাটে নিয়েছিলাম। চারটিই বিক্রি হয়েছে। চারটি গরুতে আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
সোহেল নামের আরো এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি সাতটি গরু হাটে নিয়েছিলাম। বিক্রি না হওয়ায় সাতটি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম বলেন, ‘গতকাল থেকেই পশুবাহী ট্রাক ফিরছে উত্তরবঙ্গে। ঈদের দিনেও সড়কে পশুবাহী ট্রাকের চাপ রয়েছে।’