ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২১, ০১:৫১ পিএম
এই বিধিনিষেধ হবে ‘সবচেয়ে কঠোরতম বিধিনিষেধ’ হবে। ফাইল ছবি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল ২৩ জুলাই (শুক্রবার) সকাল ৬টা থেকেই শুরু হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। যা ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কাল শুক্রবার থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ চলবে। এই বিধিনিষেধ হবে ‘সবচেয়ে কঠোরতম বিধিনিষেধ’ হবে।
তিনি বলেন, কাল থেকে কঠোরতম বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এর বিকল্প নেই। যেভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সেভাবেই এই বিধিনিষেধ হবে। কোনো পরিবর্তন নেই।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী, কাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে শাস্তির আওতায় নেয়া হবে। কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে জনগণকে সতর্ক থাকা, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেয়া হয়।
ওই ১৪ দিন সব ধরনের শিল্পকারখানাও বন্ধ থাকবে। তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে শিল্পকলকারখানা খোলা রাখার দাবি থাকলেও বিষয়টি এখন পর্যন্ত সরকার আমলে নেয়নি। এর আগের বিধিনিষেধের সময় শিল্পকারখানা খোলা ছিল।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল ছিল। তবে কাল ৬টা থেকে ১৪ দিন খুবই কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে।
করোনার সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকার এ বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এদিকে আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ঈদ শেষ হতেই কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বেড়েছে। আবার ঈদের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকা ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন শত শত যাত্রী।
আজ সকাল ১০টার পর থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের ভিড় বাড়তে থাকে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে চাপ দেখা যায় ঘাট এলাকায়। তবে এসময় সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ। বরং গাদাগাদি করে ফেরিতে উঠানামা করছেন যাত্রীরা।
অপরদিকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় ঈদের পরদিনই ঢাকামুখী মানুষের স্রোত নেমেছে। আবার রাজধানী ছেড়ে কোরবানির মাংস নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন অনেকে। ঘাটে সকাল থেকেই উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। যানবাহনের দীর্ঘ লাইনও দীর্ঘ হচ্ছে ঘাটে। আর লঞ্চঘাটে আছে মানুষের অস্বাভাবিক জট। স্বাস্থ্যবিধিও উধাও হয়ে গেছে ঘাট থেকে।
গত ১৩ জুন বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই আদেশে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল ঈদের কারণে। আর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে আবারো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়েছিল।
২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ:
১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক [বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি], রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. ব্যাংকিং/বিমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।
১০. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাপ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্সাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
১১. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৩. বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিস এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৪. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট/প্রমাণক প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন।
১৫ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল, প্রজ্ঞাপন জারি
১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।
২০. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখাক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২৩. সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।