জীবিকা নিয়ে উভয় সংকটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২১, ০৯:৫০ পিএম

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় সব মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে জীবন চালাতে

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় সব মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে জীবন চালাতে

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেয়া কঠোর বিধিনিষেধে কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বেশির ভাগ কর্মজীবীর আয়ও কমেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় সব মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে জীবন চালাতে। সংসার চালাতে না পেরে অনেকেই ঢাকা ছেড়েছেন, ছাড়ছেন। 

মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাস থেকে রেহাই পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করছে বিশ্ববাসী। এর প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ধসে পড়েছে। লোকসান গোনার আশঙ্কায় বড় বড় অনেক কোম্পানি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এ জন্য চারদিকে ভর করেছে কর্মী ছাঁটাই আর কর্ম হারানোর আতঙ্ক। তারচেয়ে বড় সংকট হলো চিকিৎসা। নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের চিকিৎসা নিয়ে ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। তারা সরকারি সেবাও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। আবার বেসরকারি কোনো হাসপাতালের সেবা ব্যয়ও বহন করতে পারছেন না। সামর্থ্য থাকলেও করোনা সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা তারা পাচ্ছেন না। ফলে একদিকে চিকিৎসা অন্যদিকে জীবিকা নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। 

বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের ৪ কোটি পরিবারের মধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ। মাঝের যে ৬০ ভাগ এরা নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত। এই সংখ্যা আড়াই কোটি পরিবার হবে। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী, মাল্টিন্যাশনাল ও বড় কোম্পানিতে কাজ করা কিছু মানুষ বাদে অন্যরা সবাই এখন চরম সংকটে আছেন। এদের মধ্যে বড় একটা অংশ চাকরি হারানের ঝুঁকিতে আছেন। অনেকেরই নিয়মিত বেতন হয়নি, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আবার যারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন তাদের বেশির ভাগই এখন কর্মহীন। এছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী মানুষ তো আরো বেশি কষ্টে রয়েছেন। তাদের সংকট আরো বেশি।


এদিকে খোদ সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির আঘাতে অন্তত ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাক ও পিপিআরসি বলছে, আগে দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিলো। এখন সেটা আরো ৫ শতাংশ বেড়ে ২৫ শতাংশে উঠেছে। সামনের দিনে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে মনে করে সংস্থা দুটি। ফলে করোনা-পরবর্তী সময়ে মানুষের কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে কাজ দিতে না পারলে দারিদ্রসীমার ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাবে। এতে আমাদের সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমই বাধাগ্রস্ত হবে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী করোনার আগে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০ দশমিক ৫ ভাগ দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিলো। চরম দরিদ্র ছিলো ১০ ভাগ মানুষ। করোনা মহামারির কারণে এখন সেটা দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলে বেসরকারি কয়েকটি গবেষণা সংস্থা তথ্য প্রকাশ করেছে। 


এদিকে বিআইডিএসের সাম্প্রতিক জরিপে বলা হচ্ছে, করোনায় ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে, দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে। তাই এখন দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা ৫ কোটির বেশি। 

ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বেশির ভাগ মানুষেরই আয় কমেছে। করোনার প্রথমদিকের সময়ে মানুষ ধারকর্জ করেছে বা সঞ্চয় ভেঙে জীবন চালিয়েছে। 

তিনি বলেন, এখন কিন্তু সে অবস্থাও নেই। মানুষ বাধ্য হয়ে খাবার কম খাচ্ছে। অনেকেই আবার কুলাতে না পেরে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে। অর্থাৎ ভাত, আলু কিংবা ডালের পরিমাণ ঠিক রেখে মাছ, মাংস কম খাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংকট কাটানো কঠিন হবে। তবে এখানে সরকারের আরো অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।


এদিকে থেমে নেই করোনাভাইরাসের থাবা। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ২৭৪ জনে। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ২৯১ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৫ জনে।

রবিবার (২৫ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। 

এর আগে শনিবার ১৯৫, শুক্রবার ১৬৬, বৃহস্পতিবার ১৮৭, বুধবার ১৭৩, মঙ্গলবার ২০০ ও সোমবার ২৩১ (সর্বোচ্চ) জনের মৃত্যু হয়। গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এদিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh