তিউনিসিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত, পার্লামেন্ট স্থগিত

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২১, ১০:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচি। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচি। ফাইল ছবি

তিউনিসিয়াজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচিকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ। সেইসাথে পার্লামেন্ট স্থগিত করা হয়েছে।

দেশটিতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার জেরে অসংখ্য মানুষ গতকাল রবিবার (২৫ জুলাই) রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ ঘোষণা করেন, তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় এবার নিজেই দায়িত্ব নেবেন। তিনি দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চান।

কিন্তু বিরোধীরা তার এই পদক্ষেপকে সামরিক অভ্যুত্থান হিসাবে আখ্যা দিয়েছে।

সাইয়েদ তার ভবনে জরুরি নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকের পর এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতক্ষণ না পর্যন্ত তিউনিসিয়ায় সামাজিক শান্তি ফিরে আসে ও দেশকে রক্ষা করা যায়।’

রবিবার গভীর রাতে প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচিকে বরখাস্ত করা হয়েছে এমন খবর পাওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা উৎসব করতে থাকে। অন্যদিকে রাজধানী তিউনিস ও অন্য শহরগুলোয় হাজার হাজার মানুষ ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে এবং ‘বেরিয়ে যাও’ শ্লোগান দিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানায়।

রবিবার হাজার হাজার মানুষ ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ছবি : বিবিসি

এ সময় পার্লামেন্ট ও এর আশেপাশের রাস্তা অবরোধ করে নিরাপত্তা বাহিনী। ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় বিপ্লব চলাকালীন বাউরগুইবার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

এদিকে কয়েকটি শহরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে ও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন এন্নাহাদা পার্টির অফিসে হামলা চালিয়ে কম্পিউটার ভেঙে ফেলে ও তুজেউর শহরে দলটির স্থানীয় সদর দফতরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

দলটি এই হামলার পেছনে অপরাধী চক্রকে দোষারোপ করে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। অপরাধীরা ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলার বীজ বুনতে এমনটা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ সামরিক শক্তি ব্যবহার করে এই সহিংসতার জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সতর্ক করে দিতে চাই কেউ যদি অস্ত্র হাতে নেয়ার কথা চিন্তা করে..কেউ যদি একটা বুলেটও ছোঁড়ে..তাহলে সশস্ত্র বাহিনী গুলি করেই তার জবাব দেবে।’

তিনি বলেন, যদি বিপদের কোনো আশঙ্কা থাকে তাহলে তিনি সংসদ স্থগিত করতে পারবেন। কারণ সংবিধান তাকে এই অনুমোদন দিয়েছে।

তবে তিউনিসিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার র‍্যাচেড ঘানুচি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিপ্লব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের অভিযোগ এনেছেন।

এন্নাহদা পার্টির নেতা ঘানুচি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা মনে করি আমাদের সব প্রতিষ্ঠান এখনো দাঁড়িয়ে আছে এবং এন্নাহদা সমর্থক ও তিউনিসিয়ার জনগণ এই বিপ্লবকে রক্ষা করবে।’

১০ বছর আগে তিউনিসিয়ান বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল এবং এখান থেকেই আরব বসন্তের বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে আশা করা হয়েছিল এমন পরিবর্তনের ফলে আরো বেশি চাকরি ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেখানেও হতাশ হতে হয়েছে। এক দশক পরে তিউনিসিয়া একটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে এবং আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়াবহ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সাথে লড়াই করছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দেশটির নিম্নমুখী অর্থনীতির উপর আরো চাপ সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচি গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিলেন, কিন্তু এতেও মানুষের ক্ষোভ কমানো যায়নি। -বিবিসি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh