সংশোধন হচ্ছে আইন: সরকারি কর্মচারীরা দায়মুক্তি পাচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২১, ০১:২১ পিএম | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২১, ০২:০১ পিএম

সংশোধন হচ্ছে সরকারি চাকরি আইন: সরকারি কর্মচারীরা দায়মুক্তি পাচ্ছেন।

সংশোধন হচ্ছে সরকারি চাকরি আইন: সরকারি কর্মচারীরা দায়মুক্তি পাচ্ছেন।

সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর ‘গুরুতর’ কোনো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার অবসর-সুবিধা ‘আংশিক’ বা ‘সম্পূর্ণ’ বাতিল করার সুযোগ আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আইনের এ সংক্রান্ত উপধারাটি বাতিল করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি আজ সোমবার (২৬ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদনের জন্য আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এ বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষ থেকে এ বৈঠকে যোগ দেবেন।

সরকারি কর্মচারী অবসরে গেলে তিনি যেসব সুবিধা প্রাপ্য হবেন তা নির্ধারিত হওয়ার কথা বর্তমান আইনের ১৭ ধারায়। কিন্তু ১৭ ধারায় রয়েছে প্রশিক্ষণসংক্রান্ত বিষয়। এছাড়া আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০২১’ অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরি আইনে ‘সরকারি কর্মচারী’দের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘সরকারি কর্মচারী অর্থ এই আইনের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি।’ তার মতে, কোনো সরকারি কর্মচারী অবসরে চলে যাওয়ার পর আর ‘প্রজাতন্ত্রের’ কর্মে নিযুক্ত থাকেন না। তাই তাদের এই আইনের আওতায় রাখার সুযোগ নেই।

তবে আরেকজন কর্মকর্তা অভিমত দেন, একজন সরকারি কর্মচারী নিজে কবরে যাওয়া পর্যন্ত পেনশনসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান। তিনি মারা গেলে তার পরিবারও অনেক সুবিধা পায়। তাই অবসরে গেলেও তাদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের একটা সুযোগ থাকা দরকার। আইনটির প্রস্তাবিত সংশোধনে ১, ৪৮ ও ৫০ ধারায় কয়েকটি করণিক ভুল সংশোধনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ আইনটি কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে ছয়টি আইন রহিত করা হয়েছে।

ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে সরকার বা সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়ার বিধান সংবলিত সরকারি কর্মচারী আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা কেন সংবিধানবহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ রুল জারি করে। এ আইনের ৪১(১) ধারা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সময় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ফৌজদারি মামলায় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণের আগে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। আইনের ওই ধারাসহ সাতটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও তা বাতিল কিংবা প্রত্যাহার চেয়ে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিস পাঠায় এইচআরপিবি।

ফৌজদারি মামলায় এক বছরের বেশি মেয়াদে দণ্ডিত হলে কোনো সরকারি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন, সরকারি চাকরি আইনের এ সংক্রান্ত ৪২ নম্বর ধারাটিও বাতিল চেয়ে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। প্রচলিত আদালত অবমাননার আইনে আদালতের আদেশ অমান্য করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস সাজার বিধান আছে। আগের আইনে ছয় মাসের সাজা হলে সরকারি কর্মচারী চাকরি থেকে বরখাস্ত হতেন। যে কারণে আদালতের রায় বাস্তবায়নে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাধ্য থাকতেন। তবে বর্তমান নতুন আইনে এক বছরের বেশি সাজা না হলে সরকারি কর্মকর্তারা চাকরি হারাবেন না। অর্থাৎ আদালত অবমাননার সাজা হলে তাকে চাকরি হারাতে হবে না। ফলে আদালতের আদেশ-নির্দেশ উপেক্ষা করার সাহস পাবেন।

ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল চেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আইনটি কার্যকরের সময় টিআইবি বলেছে, দায়িত্ব পালনজনিত কারণে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে চার্জশিট দেওয়ার আগে গ্রেফতার করতে সরকারের অনুমতি গ্রহণের যে বিধান রাখা হয়েছে তা বৈষম্যমূলক ও সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী। বিশেষ করে সরকারি খাতে দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সরকারি অঙ্গীকারের সঙ্গে ধারাটি একদিকে সাংঘর্ষিক অন্যদিকে এর মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। তাই ধারাটি বাতিলের দাবি করে টিআইবি।

এছাড়া প্রস্তাবিত সংশোধনে বিদ্যমান আইনের ১, ৪৮ ও ৫০ ধারায় কয়েকটি করণিক ভুল সংশোধনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ আইনটি কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ছয়টি আইন রহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই আইনের কিছু ধারা অন্তত ১০টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোন কোন ধারাগুলো প্রযোজ্য থাকবে তা স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh