ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২১, ০৬:৫৮ পিএম
১১০ গোখরাকে সঙ্গী বানিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে খেলছেন ইমরান। ছবি: প্রতিনিধি
‘দিয়ে যাবেন, বাবারা দিয়ে যাবেন, মনোসার খরচটা দিয়ে যাবেন। এই সেই শ্রাবণ মাস, মনোসার ধর্ম মাস। আশা করছেন, নিয়ত করছেন, বাবারা গরু-বাছুর, বাচ্চা-কাচ্চার নামে দিয়ে যাবেন।’
ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের লক্ষীদাসের হাটে আসতেই এই কথাগুলো শোনা গেলো। কাছে গিয়ে দেখা গেলে পঁচিশোর্ধ এক যুবক একটি এলুমিনিয়ামের গামলার মধ্যে অনেকগুলো গোখরা সাপের বাচ্চা নারাচারা করছে আর এসব কথা বলে টাকা সংগ্রহ করছে।
সাপুড়ে ওই যুবকে জানালেন, এখানে ১১০টি গোখরা সাপের বাচ্চা রয়েছে। এগুলো ১৫ দিন আগে শহরের টেপাখোলা স্লুইচগেট এলাকা থেকে ধরেছেন। এগুলোকে প্রতিদিন আধা লিটার দুধ দিতে হয়।
ওই যুবক আরো জানান, তার নাম মো. ইমরান খান, বাড়ি সদর উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা এলাকায়। তারা বংশানুক্রমে সাপুড়ে । তারা বিভিন্ন হাটে-বাজারে সাপ খেলা দেখাতেন। সেখান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই নিজেদের সংগ্রহে থাকা সাপগুলো খাবারের যোগান হতো, চলতো নিজেদের সংসারও।
কিন্তু বিপত্তি বাধিয়েছে মহামারি করোনা। ধারাবাহিক লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে চিত্ত বিনোদনের সনাতন মাধ্যমগুলো একেবারেই বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে এই ধরনের মানুষগুলোর আয়ের উৎস।
ইমরান বলেন, ছোট থেকেই বাবা-দাদার সঙ্গে এই সাপ ধরা ও সাপ খেলা দেখানো শিখেছি। অন্য কোন কাজ করতে পারি না। বাড়িতে প্রায় পঁচিশটির মত বড় গোখরা সাপ রয়েছে। সেগুলোর খাবার যোগার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই কন্যা রয়েছে। সাপগুলোর খাবার যোগারের পর সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই মাঝে মধ্যে হাটে বসি, যতটুকু পাওয়া যায়।
গামলার মধ্যে উন্মুক্তভাবে রাখা ১১০টি বাচ্চা সাপ নারাচারা করছেন, এগুলোকি বিষমুক্ত? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান বললেন, ‘না, এগুলো বিষমুক্ত নয়। এ থেকে যদি কোনো একটি সাপ কাউকে কামড় দেয় তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবেন। আমাকে দিলেও আমি মারা যাবো। তবে এই গামলাটা বন্ধ (মন্ত্র) দেওয়া আছে, যে কারণে কাউকে কামড়াবে না।’